হাইফা তাননুর_শাহিদা আলী
হাইফা তাননুর
শাহিদা আলী
খুকুমনি জাদুমনি সোনামনি কতো কী বলেই না বাবা মা সন্তানদের ডাকে। তবে ছোট্ট হাইফা তাননুরের বাবা আদর করে মেয়েকে মা বলেই ডাকে। কাজের ব্যস্ততার মাঝে বাবা মেয়েকে নিয়ে নানা রকম ভাবনা। মেয়ে পড়ালেখা শিখে অনেক বড় হবে। মানুষের মতো মতো হবে। তার মতো করেই দেশকে ভালোবাসবে। অসহায় মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেবে।
হাইফার সব আবদার যেনো বাবার কাছে। ঘুরতে যাওয়া, গান শেখা, নাচ করা আর রোজ রোজ গল্প শোনার জন্যে তো বায়না আছেই। বাবাও গল্পবাজ। মেয়েকে নৈতিকতা, আদর্শ শিক্ষামূলক গল্প শোনায়। হাইফা বেড়ে ওঠার সাথে সাথে সবকিছু সুন্দরভাবে শিখতে পারে। এখনই তো শিখার বয়স। এ বয়সে না শিখলে কখন শিখবে! তাইতো ড্যাড বলার যুগে মেয়েকে বাবা বলতে শিখিয়েছে। শিখিয়ে অ্যাকেল না বলে চাচা বলতে, খালা বলতে। বাবা যে দেশপ্রেমিক ভাষাপ্রেমিক হাইফাও যেনো তেমন হয়।
এখনো গুছিয়ে কথা বলতে না পারা হাইফা প্রতিদিনের মতোই বাবার অপেক্ষা করতে করতে বসে বসে কার্টুন দেখে। কার্টুন দেখতে ভালো লাগছে না আজ। মায়ের পিছু পিছু রান্না ঘরে গিয়ে বললো
- বাবা কখন আসবে।
- এই তো এলো বলে।
ঠিক সেই সময় বাইরের দরজায় টোকা পড়ে। হাইফার মুখে যেনো হাসির রেখা ফুটে উঠলো। দরজায় বাবার হাতের টোকা। এ টোকা যেনো তার মুখস্ত। এটা বাবার টোকা। হাইফা মায়ের সাথে সাথে দৌড়ে যায় দরজার কাছে। মা দরজা খুলতেই, ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো
- সালাম বাবা
বাবাও ছো মেরে মেয়েকে কোলে তুলে নিলো।
- ওআসালাম মা
মেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেই আদো আদো কণ্ঠে হাইফা বললো
- বাবা তুমি তাড়াতাড়ি আসো না কেনো?
- এই তো আসলাম।
- না তুমি ডেইলি দেড়ি করো। আমার শুধু শুধু কার্টুন দেখেতে ভালো লাগে না। আমি গল্প শোনবো। রাজার গল্প, পরীর গল্প। লাল পরী আছে না, নীল পরী আছে না। ওদের নাম কি বাবা
- হাইফা
এবার হাইফার মা আদরীয় ধমক মেরে বলে,
- হাইফা এবার বাবার কোল থেকে নামো। বাবা ফ্রেস হবে।
- না আমি বাবার কোলে থাকবো
- না, এরকম করে না। বড়দের কথা শুনতে হয়।
হাইফা মাকে খুব ভয় পায়। সে মায়ের কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো এবার তাকে নেমে পড়তে হবে। সে বাবার কোল থেকে নেমে যায়। হাইফার মা, ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
- সেই কখন থেকে কিছুই মুখে নিচ্ছে না। খাবার নিয়ে ওর পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে আমি ক্লান্ত। এবার তুমি সামলাও।
- ঠিক আছে আজ আমি আমার মাকে একটি নতুন গল্প শোনাবো। তুমি একটু চুপটি করো বসো। আমি এখুনি ফ্রেস হয়ে আসছি।
মেয়ের বায়নার কাছে বাবার সব ক্লান্তি যেনো দূর হয়ে গেলো। ফ্রেস হয়ে এসেই মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে শুরু করে। মেয়ে যেনো আদুরে পিসি বিড়ায়, ছোট্ট ময়না পাখি। হাত বুলাতে বুলাতে গল্প বলা শুরু করে।
- শোনো মা, তোমার মতো ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলো।
- ওর নাম কি বাবা!
- হাইফা।
- হ্যাঁ ওর নাম হাইফা। খুব সুন্দর করে নাচতো। আমাদের ময়না পাখিটির মতো।
- ও তো খাঁচায় থাকে। হাইফাও কী খাঁচায় থাকে।
- না হাইফা ঘরে থাকে। সারাদিন ঘরে থাকে। সে গল্প শোনতে পছন্দ করতো। ঘুরতে পছন্দ করতো।
গল্পবলার ফাঁকে হাইফার মা রাতের খাবার রেডি করে। পাটি বিছিয়ে সাজিয়ে রাখে। মেয়েকে চুমু দিয়ে বলে,
- হাইফা ঠিক ও দাদার মতো হয়েছে। পোলাও মুরগি খেতে পছন্দ করে। কি ঠিক বলিনি।
- হ্যাঁ ঠিক বলেছো। আব্বাও রিচ খাবার খেতে পছন্দ করতো।
হাইফাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
- চলো মা আমরা এখন খাবো।
মুখ ভার করে কান্না করে হাইফা। খাবার খাবে না বলে বায়না ধরে।
- না না আমি খাবো না। গল্প শোনবো, গল্প শোনবো।
- আচ্ছা বাবা আচ্ছা। তোমাকে তো আমি গল্প শোনাবোই। চলো খেতে খেতে গল্প বলি।
মেয়েকে কোলে তুলে খাবার খেতে বসে। এর ফাঁকে গল্প বলে,
- সেই মেয়েটি ঠিক তোমার মতো খায়। মন দিয়ে পড়া লেখা শিখে। এখন অনেক বড় হয়েছে। সে অনেক অনেক বই পড়ে। গল্পের বই, কবিতার বই, ছড়ার বই, উপন্যাস। সব সব পড়ে। সে তোমার মতো ছোট্টবাবুদের গল্প শোনায়।
- ওর নাম কি!
- ওর নাম তো হাইফা। আমি তোমাকে বলছি না, ওর নাম হাইফা। আমরা কি চাই জানো!
- কী
- আমরা চাই তুমিও বড় হয়ে সবাইকে গল্প শোনাবে।
এবার মা বলে
- বড় হতে হলো আগে খেতে হবে।
হাইফা বড় হবে, এই খুশিতে সে মায়ের হাতে খাওয়া শুরু করে। এ রুম ও রুম ছুটতে থাকে, নাচতে থাকে। খাবার খেতে সে আর কান্না করে না। কারণ তাকে যে বড় হতে হবে। অনেক বড়।
কোন মন্তব্য নেই