ধ্রুব চিন্তার বয়ান_আফসার নিজাম
ধ্রুব চিন্তার বয়ান
আফসার নিজাম
শুরু করতে পারি এখান থেকে যেখান থেকে তিনি শুরু করেছিলেন। তিনি কি শুরু করেছিলেন? আমাদের মনের ভেতর সেই প্রশ্নটাই বারবার ঘুরে ফিরে আসে। কেনো আসে আমাদের সেই প্রশ্নটার দিকেই আগে যেতে হবে। আমি চেষ্টা করবো সেই প্রশ্নটার জবাবের দিকে ধাবিত হতে। আমরা প্রায়সই একটি চিন্তা করি। এই প্রায়সই কথাটি এ জন্য ব্যবহার করলাম। কারণ আমরা কোনো চিন্তাই করি না। আসলে চিন্তার জন্য যে মন তৈয়ার করা প্রয়োজন আমাদের সেই মন এখনো তৈয়ার হয়ে ওঠেনি। কারো কারো সেই চিন্তা তৈয়ার হয়েছিলো এবং সেই চিন্তার আলোকে একটি বয়ানও তৈয়ার করে কর্ম সম্পাদনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
আমরা যারা নয়া কোনো চিন্তা বা বয়ান তৈরিতে নিজেদের উৎসর্গ করতে পারিনি বা আমি বলবো নিজের আখেরকে অতিমাত্রায় প্রধান্য দিয়েছি কওমের আখেরের থেকে তারা চিন্তা থেকে দূরে বসবাস করি। এইযে চিন্তার থেকে দূরে বসবাস করা সেই জন্য চিন্তাশীল মানুষকে নিয়ে আমাদের আগ্রহ ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পায়। তখন আমরা খোঁজ করি কে শুরু করেছিলো কওমের জন্য নয়া বয়ানের কর্মকৌশল। সেই কর্মকৌশলকে অবলম্বন করে আমরা নিজের একটি পথ তৈয়ার করি। যদিও আমারা তাঁর পথেই হাঁটি তবু আমরা বলতে চেষ্টা করি আমরা এক নয়া পথে চলছি। এই পথ তাঁর দেখানো পথ বা আমরা এও বলতে পারি একটি পথ ছিলো যা ব্যাবহৃত না হওয়ার জন্য জংগলাক্রিন্ন হয়ে পড়েছিলো অবথা কওম ভুলেই গিয়েছিলো একখানে একটি পথ ছিলো; যে পথ দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা হেঁটে গেছেন বছরে পর বছর; যুগের পর যুগ। সেই পথটি তিনি নতুনভাবে আবিষ্কার করে গেছেন। সেই পথটিকে আমরা নয়া পথ বলি। এই যে নয়া পথের আবিষ্কারক তাকেই আমরা চিন্তাশীল বলে আমাদের নকিব ভাবতে থাকি।
এই যে বললাম নকিব বা নয়া পথের আবিষ্কারক অথবা চিন্তুক। তিনি কে? কোথা থেকে তার এই পথ চলা। কোথা থেকে তিনি নয়া পথের দিকে ডাকেন। কি তার মিশন? কি তার ভিষণ? তাকে জানার কওমের একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তখনই তিনি আমাদের মাঝে বিরাজ করেন। আমরা অনুভব করি তিনি আমাদের মাঝে বিরাজ করছেন। তিনি আমাদের চিন্তার ভেতর এমন একটি স্থান অধিকার করেছেন যেখান থেকে আমদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাই; দর্পনে যেভাবে দেখতে পাই আমাদের চেহরা।
তাঁর চলে যাওয়ার পর আমরা নানাভাবো বয়ান করতে চেষ্টা করছি তাঁর জীবনে বিভিন্ন রূপ। এখন যা বয়ান করছি আগামীতে আমরা হয়তো অন্যভাবে বয়ান করবো তাঁর জীবন। এখন মোটের ওপর তাঁর চিন্তা নিয়ে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না তেমন কথাও বলা চলে না আবার এ বলা চলে না তাঁর চলে যাওয়ার পর তাঁর চিন্তাকে সংগঠিত করার ব্যাপক প্রয়াস চলছে। তবে যে ছোট ছোট কদমে চলছে তা নগণ্য একথ বলার কারো সাহস নেই।
পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছেন যাদের আবিষ্কার করতে কওমের সময় লেগেছে শতবছর। আমরা তেমন দুর্ভাগা নই। তিনি বিরাজমান থাকতেই আমরা আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম আমাদের মাঝে তিনি এক নান্দনিক শিল্পী। তাঁর চিন্তা স্ফুরোন বিদ্ধ করেছে বিদগ্ধজনকে। যাঁরা ক্রমাগত চিন্তা করেছেন কওমের কথা। তাঁদের মাঝেও তিনি বিরাজমান। তিনি তাঁদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন তার যে আদর্শ সেই আদর্শেল পাণ্ডলিপি। তিনি যে নয়া পথের দিকে কওমকে নিয়ে যাওয়ার বাসনা ব্যক্ত করেছেন তার বয়ান দেখতে পাই-
এসো গাই আল্লাহ নামের গান
এসো গাই গানের সেরা গান
তনু মনে তুলবো তুমূল তুর্য তাল ও তান।।
পাখনা মেলে উড়লে পাখি
গায় কি ও নাম ডাকি ডাকি
আকাশ নীড়ে মেঘের ভেলা নিত্য চলমান।।
ঢেউ সে দুলে দুলে বুঝি
সাত সাগরে বেড়ায় খুঁজি
ঐ নামের-ই অরূপ রতন হীরা ও কাঞ্চন।।
মাঠে মাঠে বনে বনে
সবুজ সবুজ আলাপনে
ঐ নামের-ই আলোকধারা জমিন ও আসমান।।
এই যে পথের বয়ান তা যুগ যুগ ধরে চলমান। এই পথ বিভিন্ন সময় এসে বিভিন্নভাবে বাঁক নিয়েছে। নতুন নতুন দিক নির্দেশক এসে আবার সহজ সরল পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন। সেই পথ বাতলিয়ে দেয়ার শেষ নির্দেশক যখন আর থাকলো না। তখন সেই পথের নিদর্শন প্রস্ফুটিত রাখার জন্য কাজ করেছেন অনেক বিজ্ঞজন। আমরা তেমনি একজন মানুষের চিন্তাকে জানার চেষ্টা করছি। আমরা সেই বিজ্ঞজন বা চিন্তাশীলের আদর্শ বনায়ের কৌশলকে আয়ত্ব করার চেষ্টা করছি।
আমরা আবার ফিরে আসি সেই প্রশ্নটার কাছে তিনি কি শুরু করেছিলেন-
আমরা সেই দিকগুলোর বয়ান হাজির করবো-
ঈমানের দাবি যদি কোরবানী হয়
সে দাবি পুরনে আমি তৈরি থাকি যেনো
ওগো দয়াময়
হে আমার প্রভূ দয়াময়।।
ঈমানের দাবি সে তো বসে থাকা নয়
ঈমানের দাবি হলো কিছু বিনিময়
সেই বিনিময় যদি কলিজার ঘাম হয়
সেই ঘাম দিতে যেনো তৈরি থাকি আমি
ওগো দয়াময়
হে আমার প্রভূ দয়াময়।।
ঈমানের উপমা যে অগ্নিশিখা
কাজ হলো শুধু তার জ্বলতে থাকা
তেমনি করে ওগো নিঃশেষে এই আমি
জ্বলে জ্বলে জীবনের দাম যেনো খুঁজে পাই
ওগো দয়াময়
হে আমার প্রভূ দয়াময়।।
কোন পথটির দিকে তিনি আমাদের নিয়ে যেতে চেয়েছেন। চিন্তার কোন অবস্থানটি আমাদের ধারন করতে হবে তা তিনি বাতলিয়ে দিয়েছেন। এইযে পথের সন্ধান দেনেওয়ালা তার চিন্তার ভেতর কি খেলা করছিলো। কোন কোন বিষয়াবলীকে কেন্দ্র আবর্ততি হয়েছিলো তাঁর চিন্তার আবহ। কোন মঞ্জিলে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। তাঁর সাথে তিনি কাকে কাকে সঙ্গী করতে চেয়েছেন তার সব বয়ানই তুলে ধরেন-
আয় কে যাবি সংঙ্গে আমার
নবীর দেশে আয়
যেথা মরুর ধুলো মুক্ত হলো
লেগে নবীর পায়।।
সেথায় গিয়ে প্রশ্ন আমি
করবো জনে জনে
পথে চলতে আনমনে
কোন দিকে ভাই হেরার পাহাড়
বলে দাও আমায়...।।
একা একা খুঁজবো আমি, বদর দিকে দিকে
হাজার খুশি নিয়ে বুকে
মুক্তির দীক্ষা নেবো সেথায়
গভীর পিপাসায়...।।
তার বয়ানে তুলে ধরেছেন তার যাবতীয় কর্মের উৎসমূল। তিনি কেবলী যেতে চেয়েছেন সেই পথের দিকে যে পথ একসময় ছিলো এখন কন্টকাকির্ণ। অসম্পূর্ণ চিন্তার বেড়াজালে বন্দি করতে দেননি কওমের জিজ্ঞাসা। সেইসব জিজ্ঞাসার জবাবের মধ্যেই তিনি তৈয়ার করেন নয়া পথ বা জংগাকির্ণ পথের নয়া সংস্করণ।
পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়
মরন একদিন মুছে দেবে
সকল রঙিন পরিচয়।।
মিছে এই মানুষের বন্ধন
মিছে মায়া-স্নেহ-প্রীতি ক্রন্দন
মিছে মায়া ভালাবাসা বন্ধন
মিছে এই জীবনের রঙধনু সাতরঙ
মিছে এই দুদিনের অভিনয়।।
মিছে এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
মিছে গান কবিতার ছন্দ
মিছে এই অভিনয় নাটকের মঞ্চে
মিছে এই জয় আর পরাজয়।।
তাঁর চিন্তা এখানে এসেই থেমে যায় যেখানে থামলে আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আর কোনো বাসনাই জাগ্রত থাকে না।
কোন মন্তব্য নেই