Header Ads

Header ADS

কাশফুল দোল খায় বইয়ের পাঠানুভূতি_আফসার নিজাম


কাশফুল দোল খায় বইয়ের পাঠানুভূতি
আফসার নিজাম


মানবমনের সৌন্দর্যচেতনা, প্রাণের স্পন্দন সচল রাখার প্রয়াসে মানুষ ক্রমাগত শিল্পসৃজন করে। মানুষের প্রাণস্পনের মতোই সৃজনক্রিয়া তাকে অনুপ্রাণিত করে নতুন নতুন শিল্পসৃজনে। মেঘের ঘর্ষণজনিত শব্দ, বৃষ্টিপতনের ছন্দ তাকে ছন্দময়তার দিকে ধাবিত করে। তাই মানুষ কথাবলার ইতিহাস থেকে ছন্দের আশ্রয়গ্রহণ করে। মানুষ যখন হাঁটতে শেখে, ছন্দহীনতার জন্য বারবার হোঁটট খায়। সে আবার উঠে দাঁড়ায়। ছন্দময় ক্রিয়াটি আয়ত্ব করার চেষ্টা করে আর এভাবে সে হাঁটা শেখে। মানুষ সেইযে হাঁটা শুরু করেছে আজও হেঁটে চলছে। পৃথিবী যতোদিন থাকবে মানুষ ততোদিন হেঁটে চলবে। এই গতিময়তা এই ছন্দময়তার প্রশ্রয়ে মানুষ বিনির্মাণ করে শিল্প, কবিতা।

মানুষ যখন ঝর্ণার শব্দ শুনেছে, বৃষ্টির শব্দ শুনেছে, ক্রমাগত ব্যাঙের ডাক শুনেছে, সমস্বরে শিয়ালের হুক্কাহুয়া শুনেছে। সেই ছন্দকে অবলম্বন করে নিজের ভাব অন্যের মধ্যে সঞ্চালন করার জন্য সৃষ্টি করেছে ভাষার। ভাষা মানেই তো কবিতা। ভাষা মানেই তো শিল্প। মানুষ প্রকৃতির পাঠে নিজের অভিজ্ঞতাপ্রদর্শন করার আগে নাম শিখতে শুরু করেছে। সে যখন একটি পাখি দেখে বলে ওঠে দোয়েল। আবার অন্য একটি পাখি দেখে বলে কাক। একটি প্রাণী দেখে বলে কুকুর, অন্যটি বিড়াল এভাবেই তার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করে নামের মাধ্যমে। নামের মালা দিয়ে সৃজন হলো কবিতা। যে মানুষ এই শব্দগুলোকে মালা বানিয়ে বলতে পারলো, মানবসমাজ তার নাম দেন কবি। একজন মানুষ কবি হয়ে উঠলো, হয়ে উঠলো বিনির্মাণকারী। বিনির্মাণকারী মানেই তো শিল্পী, কবি, তার সৃজন কবিতা বা শিল্প।

প্রথম মানব-মানবির আগমনের পর থেকে মানুষ শিখতে থাকলো নাম। নাম মানেই তো অভিজ্ঞতা। আজ মানুষের কাছে নামের পাহাড়। সে নাম দিয়ে সৃজন করেছে অভিজ্ঞতার জাদুঘর। সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে রেখেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। মানুষের আজকের এই উন্নতি সেই সঞ্চিত অভিজ্ঞতারই ফল। অভিজ্ঞতার অপর নাম জ্ঞান। জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে আজকের সভ্যতা। মানব সমাজ যখন এই অভিজ্ঞতা হারিয়ে ফেলবে তখন তাকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমরা যেমন দেখি তুষার যুগের শেষে প্রাণের অভিজ্ঞতা সব শেষ হয়ে যায়। প্রাণ নতুন করে আবার শুরু করে। মহাপ্লাবনের কথা জানি একটি মাত্র ডিঙির মধ্যে কিছু অভিজ্ঞতা সংগ্রহিত ছিলো তা দিয়েই আবার নতুন করে শুরু হয়েছিলো। এইসব অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে রাখার জন্য মানুষ সৃজন করে শিল্প বা কবিতা।

যার মাধ্যমে জ্ঞানসঞ্চয় করে রাখা হয় তার নাম ভাষা। ভাষা যার আশ্রয়ে বেঁচে থাকে তাকে বলা হয় শিল্প বা কবিতা। কবিতা তাই মানব উন্নতির প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিরাজমান। কবিতা বলতে মানবসমাজের যাবতীয় সৃজনক্রিয়া। যদিও সমসাময়িক সময় এ বিষয়গুলোকে বিভক্ত করেছে প্রয়োজনের তাগিদে। তাকে বিভাজন করেছে ছোট ছোট নামে। তার একটি হলো ছড়া। অদ্যকার আলোচনা এনামুল হক মানিক’র কাশফুল দোল খায়।


কাশফুল দোল খায়
এনামুল হক মানিক সরল চিন্তার মানুষ। যাকে আমরা বলি মাটির মানুষ। তাঁর কবিতাও সরল মাটিগন্ধি। নগরকেন্দ্রীক জীবনে টিকে থাকার জন্য মানুষ যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর রূপে মনন গঠন করে, মানুষ হয়ে ওঠে ভিন্ন চিন্তাচেতনা বহনকারী এনামুল হক মানিক’র কবিতায় সেই বিষয়টি উঠে আসতে দেখি।

ময়ূর সাজতে গিয়ে কাক
হলো বিধিবাম
নিজের ভুলে নিজেই কাঁদে
কেটে গায়ের চাম। -বহুরূপী

এনামুল হক মানিক’র প্রধান বিষয় হলো প্রাকৃতিক নিয়মকে আতস্থ করা এবং এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত আছে তাকে গ্রহণ করে উন্নত জীবনগড়া। যাকে আমরা বলতে পারি পজেটিভ চিন্তা। পজেটিভ চিন্তার মধ্যে থাকে মানুষের কল্যাণ, মানুষের জীবনব্যবস্থা। মানুষের মননের উৎকর্ষতা। সেই পজেটিভ বিষয়গুলো তার কবিতার পরতে পরতে বিদ্যমান।

পাহাড় দিলো ঝর্ণাধারা
সাগর দিলো ঢেউ
আল্লাহ ছাড়া এসব কিছু
করবে কি আর কেউ। -মন করে আনচান

মিনার থেকে সুর যে ভাসে
ছড়ায় তো আবেশ
মনের মাঝে স্বপ্ন-আঁকি
সবুজ বাংলাদেশ। -আমার বাংলাদেশ

আল্লাহ তোমার অরূপ সৃষ্টি
লাগে যে দারুন বেশ
সেতো আমার জন্মভূমি
প্রিয় বাংলাদেশ। -প্রিয় বাংলাদেশ

কাশফুল দোল খায় কবিতার বইটিতে ছন্দবদ্ধ কবিতা দেখতে পাই। বিশেষ করে স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাগুলো। প্রতিটি কবিতাই পদ্য হয়ে ওঠেছে। জীবনের গভীরে যে চিন্তা অনুরণন তৈরি করে সেভাবে নয়, তার কবিতায় জীবনের উপরিভাগের কথাগুলোই বলতে শুনি। কবিতার বক্তব্যগুলো কারিসটেমিকভাবে উপস্থাপন না করে সরলভাবে উপস্থাপিত হতে দেখি।

জীর্ণ-শীর্ণ একটি শিশু
বসে পথের ধারে
এদিক-ওদিক তাকায় আহা
কাঁদে অনাহারে। -ঠিকানা নাই

হাওয়ার বেগে চলছে ছুটে
জীবন নামের ট্রেনটা
কোথায় এলাম যাবো কোথায়
খাটাও খানিক ব্রেনটা। -উড়ে যাবে প্রাণটা

এই বইটিকে অনেকে ছড়ার বই আবার অনেকে কবিতার বই বলে চিহ্নিত করতে চাইছে। কবিতার বইটির যে নাম তা কিশোর কবিতার বইয়ের নামের মতোই মনে হয়। লেখাগুলো পাঠ করলে দেখি ছন্দ তাল লয় মাত্রা অন্ত্যমিল মিশিয়ে একটি পদ্যের বই। আমার কাছে এটাই প্রতীয়মান হয়। তাই তার লেখাগুলো সরল। কবি নিজেও সরলজীবনে অবগাহন করেন বলে মনে হয়। সরলজীবনে অবগাহন করা মানে চোখবন্ধ করে বসে থাকা নয়। তার বই যে সমাজের অন্ধকার দিকগুলো দেখে তার প্রমাণ পাই

তিলে তিলে মারার চেয়ে
মারো এককালীন
আর দিও না ভাইরা আমার
খাদ্যে ফরমালিন। -ফরমালিন

পাতিনেতা মঞ্চে এসে
গ্রহণ করলো আসন
একটু পরে শুরু হবে
জ¦ালাময়ী ভাষণ। -পাতিনেতা

উপরের কবিতায় যেমন গরল-লোকদের নিয়ে সরল বয়ান দেখি। গরল-সরলের মধ্যে শিশু-কিশোরদের নিয়ে কবিতাও দেখি। তিনি তার শিশুকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সৃষ্টি, তাঁর প্রেরিত রসুল সা.কে আর তাঁর প্রদর্শিত পথকে

শিশিরবিন্দুরা জমে সবুজঘাসে
মিষ্টিরোদের ছোঁয়ায় নিসর্গ হাসে
এসবই মহান আল্লাহর দান। -কাশফুল দোল খায়

আকাশ-বাতাস ঝর্ণাধারা
নদীর কলতান
চন্দ্র-সুর্য গাছগাছালি
হাসনাহেনার ঘ্রাণ
সবই তোমার দান। -সবই তোমার দান

সত্যকথা বলতে হবে
দ্বীনের পথে চলতে হবে
আল্লাহকে ভয় করতে হবে
রাসুলের পথ ধরতে হবে
কোরআন হাদিস পড়তে হবে
নামাজ কায়েম করতে হবে। Ñপ্রতিজ্ঞা

শাহ আলম বাদশার বইটির মতোই কিছু ত্রুটি লক্ষণীয়। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিগোচর হলো ইন্টারনেট থেকে লেখাগুলো সংগ্রহ করে কন্ভার্ট করার সময় ফন্টে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তার অনেকগুলোই এখনও বিদ্যমান। তবে সার্বিক প্রকাশনার মান ভালো।

এবার আমরা ছড়ার বইটির সম্পর্কে কিছু তথ্য হাজির করবো। ৮৮ পৃষ্ঠার বইটিতে মোট কবিতা আছে ৪২টি। বইটির প্রচ্ছদ করেছন আফসার নিজাম। অলটারনেট বুকসের প্রকাশনায় বইটি প্রকাশ পেয়েছে একুশে গ্রন্থমেলা’১৫। যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৫ টাকা। এক রঙা ইনারের বইটির প্রচ্ছদ ৪ রঙা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.