Header Ads

Header ADS

পলাশী : আমাদের স্বাধীনতা অস্তমিতের ইতিকথা_আফসার নিজাম


পলাশী : আমাদের স্বাধীনতা অস্তমিতের ইতিকথা
আফসার নিজাম

হাইফা ও মিখাইল রাজা রানীর গল্প শুনতে পছন্দ করে। ঘুমানোর সময় তাদের গল্প বলে ঘুমপারাতে হয়। রাজা রানীর গল্প। জ্বিন পরীর গল্প। আজ একটি গুরুত্বর্পূণ প্রশ্ন করেছে হাইফা। বাবা আমাদের রাজা কে? আমি থমকে যাই। সত্যিতো আমাদের রাজা কে? কে আমাদের বাদশা, কে আমাদের নবাব। আমি তো অনেক রাজা রানী গল্প বলেছি। আমার রাজার গল্পতো তাদের জানাইনি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার রাজার গল্প বলবো তাদের। আমাদের ইতিহাস জানাবো। আমাদের রাজার নাম নবাব সিরাজউদ্দেীলা। মিখাইল প্রশ্ন করলো, বাবা সিরাজদ্দৌলা কে! হ্যাঁ, সিরাজউদ্দৌলা কে সেই ইতিহাসই তোমাদের জানাবো। সিরাজদ্দৌলা আমাদের রাজা। আমাদের বাদশা। আমাদের নবাব। বাংলা, বিহার, উরিস্যার নবাব। বাংলাদেশটি এতো ছোট ছিলো না। ভারতের ভিতরে আমাদের রাজত্ব রয়েগেছে। বাংলা আমাদের রাজ্য, বিহার আমাদের রাজ্য, উরিস্যা আমাদের রাজ্য। সেখানে বাংলাদেশর পতাকা উড়তো পতপত করে। নবাব সিরাজদ্দৌলা সিংহাসনে বসে রাজ্য শাসন করতেন।

নবাব সিরাজদ্দৌলার আসল নাম মীর্জা মুহাম্মদ। ১৭৩২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলো বাংলা বিহার উরিস্যার নবাব আলীবর্দী খানের ছোট মেয়ে আমেনা বেগম। আলীবর্দী খান ছোট মেয়েকে খুবই ভালোবাসতে। আমেনা বেগমও পিতাকে ভালোবাসতেন। তাই বাবা চাইলেন মেয়ে যেনো সারাজীবন তারই পাশে থাকেন। সেজন্য নিজ রাজ্যের বিহারে গভর্নর জঈন উদ্দীন আহমদ খানের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দেন। সিরাজের ফুটফুটে চাঁদের মতো চেহরা দেখে, দুষ্টুমি ভরা হাসি দেখে আলিবর্দী খানের সময় কাটতে থাকে। আলীবর্দী খানের কোনো ছেলে না থাকায় রাজত্বের উত্তরাধীকারী হিসেবে ছোটমেয়ের নাতী সিরাজকেই মনে মনে ঠিক করে রাখেন। কারণ শৈশব থেকেই সিরাজ হৃদয়গ্রাহী অমায়িক ব্যক্তি হিশেবে গড়ে উঠতে থাকেন এবং ছোট বড় সবার সাথে অকৃত্রিমভাবে মিশতে শুরু করেন। এইগুলো দেখে তিনি ভাবেন সিরাজ প্রজাবৎস হবে।
১৯৫৬ সাল। অসুস্থতার জন্য নবাব আলীবর্দী খানের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে। দুর্দন্ডপ্রতাপশালী নবাব এখন বার্ধক্যের দুর্বলতায় আচ্ছন্ন। তিনি ঠিক করে নেয় তার উত্তরাধীকারীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। পরিবারের সকলকে ডাকেন। তখন ছিলো ৯ এপ্রিল ১৯৫৬। সবাই যখন উত্তরাধীকারী হবার জন্য পাগল প্রায় তখন সিরাজ আপন মনে নানাজানের সেবা করে যাচ্ছেন। ঠিক সেই সময় নবাব আলীবর্দী খান একটি নাম ঘোষণা করে বললেন, আমরার পরবর্তীতে নবাব হবেন আমার কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা বেগমের ছেলে মীর্জা মুহাম্মদ সিরাজদ্দৌলা। সিরাজ তখন কান্নায় ভেঙে পরে। এতো বড় রাজ্যত্ব কিভাবে একজন কিশোর দায়িত্ব নেবে। কিভাবে প্রজাদের কল্যাণ সাধন করবে। তখন নানাজান তাকে পর্রামশ প্রদান করে বলেন, প্রিয় নাতী আমার! মৃত্যু আমার দোরগোড়ায় উপস্থিত হয়েছে। তোমার কাছে আমার এখন শেষ কথা হচ্ছে, তুমি শত্রুদের দমন করার জন্য এবং বন্ধুদের  উন্নতি সাধনের জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে আর সকল প্রকার মন্দ ও বিশৃঙ্খলা দূরীকরণের মাধ্যমে তুমি প্রজা সাধারণের কল্যাণ সাধনে নিজেকে সর্বাবস্থায় নিয়োজিত রাখবে। আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে তা হলে তোমার শত্রুরা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তুমি বিদ্বেষ ও বিরোধিতার পথ গ্রহণ কর, তাহলে সমৃদ্ধির কানন বিবর্ণ হয়ে যাবে ।
নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার মসনদে আরোহণ করেন মীর্জা মুহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা। তার এই সিংহাসন গ্রহণকে অনেকেই সহ্য করতে পারছে না। তারা ইর্সায় কাতর হয়ে ওঠে। সিরাজের আপন খালা ঘষেটি বেগম তার পুত্র শওকত জঙ্গকে নবাব হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পিতার উত্তরাধীকার বন্টনে তার গোষ্ষা হয়। তিনি তাই সিরাজের সিংহাসন গ্রহণের পর থেকেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
সিরাজ বুঝতে পারে তার শত্রু মিত্র। তিনে দেখেন সুযোগ সন্ধানী ইংরেজদেরকে নানা আলীবর্দী খান বাণিজ্য করার অনুমতি দিলেও দুর্গ স্থাপনের সুযোগ দেননি। এতেই তিনি বুঝেন যে ইংরেজরা চায় এদেশকে তাদের শাসনাধীনে এনে বাংলার সরল সহজ মানুষকে তাদের দাসে পরিণত করতে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এ দেশকে শোষণ করতে। সিংহাসন গ্রহণের পর সিরাজউদ্দৌলা তার নানা আলীবর্দী খানের মতো ইংরেজদের সাথে আপোষহীন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই অল্প দিনেই তিনি ইংরেজদের চক্ষুশূলে পরিণত হন।
অপর দিকে খালা ঘষেটি বেগম তার সন্তানকে নবাব বানানোর জন্য ইংরেজদের সাথে হাত মেলান। তাকে সহায়তা করে স্বার্থান্বেষী রাজবল্লভ। ঘষেটি বেগমকে সেই নবাবের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলল। ইংরেজরা এই সুযোগে সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফরকে নিজেদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা শুরু করে।
আলীবর্দী খানের সময় হতেই মীর জাফর অবিশবস্থ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সিরাজ টের পান কোথায় যেনো মীর জাফর বিরোধীতা করছে। মীর জাফর বাচ্চা ছেলেকে নবাব হিশেবে মেনে নিতে পারছে না। নবারের ঘনিষ্ঠজনরা নবাবকে মীর জাফর সম্পর্কে সর্তক করেন কিন্তু সরলমনা নবাব, মীর জাফরকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার স্বপদে বহাল রাখেন ।
নবাব সিরাজকে নবাবীর উত্তরাধীকার ঘোষণার পর থেকেই নবাব হিশেবে গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেন জগৎ শেঠ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, রায় দূর্লভ, উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভ, মহারাজা নন্দকুমার। তারা নিজধর্মের রাজত্ব কায়েম করার জন্য ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তার জন্য অর্থ সম্পদ, লোকবল, বুদ্ধি সকল কিছুই শেয়ার করে। তাদের দল ভারি করতে অন্য একটি পন্থা গ্রহণ করেন।  তারা নবাব সিরাজের ঘনিষ্টদের তাদের দলে ভিরাতে থাকেন। তারা হলেন মীর জাফর, মীর কাসেম, ইয়ার লতিফ খান, মিরন, ঘষেটি বেগম, মুহাম্মদী বেগ, দানিশ শাহ বা দানা শাহ। এরা মূলত ছিলো কলের পুতুল। মূল ষড়যন্ত্রকারী জগৎ শেঠ নবাবের কাছে ভালো থাকার ভান করে ভেতরে ভেতরে রাজ্য দখলের পায়তারা করতে থাকে ইংরেজদের সাথে।
সিরাজের সিংহাসনে আরোহণের পর নিয়মানুসারে ইংরেজরা নবাবকে কোন উপঢৌকন প্রেরণ করেনি বরং রাজত্বকালের শুরুতেই ইংরেজরা বিনা অনুমতিতে বিভিন্ন জায়গায় দূর্গ নির্মাণ এবং ফোর্ট উইলিয়াম দূগর্কে অস্ত্র গুদামে পরিণত করে। বিনাঅনুমতিতে দূর্গ নির্মাণের দায়ে নাবাব দূতের মাধ্যমে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিযুক্ত কলকাতার গভর্নর রজার ড্রেককে তলব করেন। ইংরেজরা জগৎ শেঠদের শক্তিতে এতোটাই দাম্ভিক হয়ে ওঠে যে রজার ড্রেক নাবাবের দূতকে অপমান করেন। নবাব এই অসৌজন্য মূলক আচরণের জন্য তাদের সমূচিত শাস্তি দিতে পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। ১৭৫৬ সালের ৪ জুন কাশিম বাজার কুঠি এবং ২০ জুন ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ ইংরেজদের হাত থেকে দখল মুক্ত করেন। এসময় কয়েকজন আহত ইংরেজ সৈন্য নবাব বাহিনীর হাতে ধরা পরে।
জগৎ শেঠদের গোপন সহায়তায় ১৭৫৭ সালের ২ জানুয়ারি ইংরেজরা লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে কলকাতা ও হুগলি দখল করে নেয়। সিরাজউদ্দৌলা তাদের দমনে অগ্রসর হতে গিয়ে টেরপান চারদিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার হয়ে আছে। তাই ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইংরেজদের সাথে আলীনগরের সন্ধিতে আবদ্ধ হন। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই জগৎ শেঠদের উস্কানিতে ইংরেজরা সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে নবাবকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় মীর জাফর ও নবাবের খালা ঘসেটি বেগম। ঘসেটি বেগম ঘুনাক্ষরেও জানতে পারে না সিরাজকে জগৎ শেঠেরা হত্যা করবে আর তার সন্তানকে নবাবী না দিয়ে মীর জাফরকে পুতুল নবাব বানাবেন।
জগৎ শেঠের পরামর্শে ঘসেটি বেগমের অনুপস্থিতে ইংরেজরা নবাবকে উৎখাত করে মীর জাফরকে মসনদে বসানোর লোভ দেখায়। ফলে ক্ষমতালোভী মীর জাফর যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ইংরেজদেরকে দুই কোটি টাকা প্রদান এবং এদেশে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ দানের শর্তে ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়।
চারদিকে ষড়যন্ত্র আর যুদ্ধের দামামা দেখে নবাব সিরাজউদ্দৌলা যুদ্ধ অনিবার্য হলে পঞ্চাশ হাজার পদাতিক ও ১৮ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে পলাশীর প্রান্তরে শিবির স্থাপন করেন। ১৭৫৭ সালের ২২ জুন ইংরেজরা তিন হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হন। তারা আগে থেকেই জানেন তাদের সাথে যুদ্ধ হবে না। যুদ্ধ শুরু হলে সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর তার সৈন্যদল নিয়ে দুই মাইল দূরে নিষক্রিয় দর্শকরূপে দাঁড়িয়ে থাকেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার অপর দুই বিশসস্ত সেনাপতি মোহন লাল ও মীর মদন বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে ইংরেজ বাহিনীকে পলায়নে বাধ্য করেন। কিন্তু হঠাৎ মীর মদন জগৎ শেঠের এক ভাগিনা আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মীর জাফর নবাব সিরাজউদ্দৌলার মন ভেঙ্গে দেন এবং সাহায্যের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নবাবকে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করতে রাজি করান। নবাবের সেনাপতি মোহন লাল অপর সেনাপতি মীর মদনের মৃত্যুর পর সকল যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে ইংরেজ বাহিনীকে পর্যদুস্থ করে ফেলেন।
এ সময় নবাব সিরাজউদ্দৌলা মোহন লালকে যুদ্ধবিরতির আহবান জানালে তিনি মীর জাফরের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে প্রথমে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে অসম্মত হন। কিন্তু মীর জাফরের পুনঃপুনঃ অনুরোধের ফলে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এ সুযোগে ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ পালিয়ে থাকা ইংরেজ সৈন্যদের নিয়ে নবাব বাহিনির উপর অতর্কিতঅক্রমণ করে সিরাজদ্দৌলার পরাজয় নিশ্চিত করে।
এই যুদ্ধে ইংরেজদের মাত্র ২২ জন সৈন্য নিহত এবং ৫০ জন সৈন্য আহত হয়। অপরদিকে নবাবের ৫০০ জন স্বাধীনতাকামী সৈন্য শাহাদত বরণ করেন। যুদ্ধাবস্থা যখন ইংরেজদের হাতে চলে যায় দেখে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ২৪ জুন তার দেহরক্ষীর সহযোগিতায় মুর্শিদাবাদে পৌঁছেন এবং তিনি তার ফিরে আসা সৈন্য বাহিনী ও জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন।
পরাজিত নবাবকে ধরতে লর্ড ক্লাইভ ও মীর জাফরের মুশির্দাবাদে আগমনন করে। খবর পেয়ে নবাব তার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা ও শিশুকন্যাসহ মুর্শিদাবাদ থেকে নৌকাযোগে রাজমহলের উদ্দ্যেশে যাত্রা করেন। ২৭ জুন তিনি মীর জাফরের  জামাতা মীর কাশেমের হাতে ধরা পড়েন এবং নবাবকে তাঁর স্ত্রী ও কন্যাসহ মুশির্দাবাদে নিয়ে আসা হয়। ২ জুলাই মীর জাফরের পুত্র মীর মীরনের নেতৃত্বে তিনি মুহাম্মদী বেগের অস্ত্রের আঘাতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। সূচনা হয় ব্রিটিশ দুঃশাসনের এক কলো অধ্যায়ের।
ইতিহাসের এই ক্রিমিনালদের ক্রিমিনালি দেখে হাইফা মিখাইলের মন খারাপ হয়ে যায়। তারা তাদের রাজার মৃত্যু সহ্য করতে পারে না। ক্রধ্য হয় ক্রিমিনালদের প্রতি আর বলে, বাবা যারা ক্রিমিনালি করেছে তাদের কিছু হয়নি? এ প্রশ্ন যখন হাইফা আমাকে করে তখন ইতিহাস ঘেটে দেখতে ইচ্ছে করে ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যু কতোটা ভয়ংকর বিভৎস হয়েছিলো। সত্যি সে এক করুন ও আনন্দয়াক কাহিনী। ষড়যন্ত্রকারীরা সরাজীবনই নর্দামর কিট হিসেবে ছিলো আছে থাকবে। আমরা দেখি সেইসব ক্রিমিনালদের কি অবস্থা হয়েছিলো। জগৎ শেঠ, মহারাজা স্বরূপচাঁদকে দূর্গের চূড়া থেকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হত্যা করে মীর কাসেম। রায় দূর্লভবে যুদ্ধের পরপরই কারাগারে বন্দি করা হয় আর সেখানেই এই ক্রিমিনালের মৃত্যু হয়। উমিচাঁদ যুদ্ধের যে খরচ তা বহন করে। রবার্ট ক্লাইভ যুদ্ধে জয়ী তার ওয়াদা ভঙ্গ করে তাকে কোনো অর্থ ফেরত দেয় না। অর্থ শোকে এই ক্রিমিনাল মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং শেষপর্যন্ত রাস্তার পাগল হয়ে মৃত্যু হয়। রাজা রাজবল্লভকে পদ্মার এক মাঝি বজরা ফুটো করে দেয়। আর সেই নদীতেই এই ক্রিমিনাল ডুবে মরে। বিশ্বাসঘাত মীর জাফর পবিত্র কোরআন শরীফ মাথায় রেখে নবাবের সামনে তার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করবার পর পরই বেঈমানী করেছিলো। সিংহাসন লাভের পর তার মেয়ের জমাই মীর কাসেম তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। পরবর্তীতে এই ক্রিমিনাল দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয় আর বিনাচিকিৎসায় ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করে। মীর জাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে মীর কাসেম ক্ষমতা দখল করেন। পরবর্তীতে ইংরেজদের থেকে দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করে কিন্তু বকসারের যুদ্ধ পরাজিত হন। পরে ইংরেজদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান এবং অজ্ঞাতনামা অবস্থায় দিল্লীতে তার করুণ মৃত্যু ঘটে। তার মাথার কাছে পড়ে থাকা একটা পোঁটলায় পাওয়া যায় নবাব মীর কাসেম হিসেবে ব্যবহৃত চাপকান। এ থেকেই জানা যায় মৃত্যু ব্যক্তি বাংলার ভূতপূর্ব নবাব মীর কাসেম আলী খান। ইয়ার লতিফ খান যুদ্ধের পর হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ধারণা করা হয় জগৎ শেঠ তাকে গোপনে হত্যা করে। মহারাজা নন্দকুমার রাজ তহবিল থেকে অর্থ চুরির অভিযোগের বিচারে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। ইংরেজদের নিদের্শে মীর জাফরের বড় ছেলে মিরনকে মেজর ওয়ালস হত্যা করে। ঘষেটি বেগমকে হত্যার জন্য মিরন নদীদে নৌকা ডুবিয়ে তাকে হত্যা করার নিদের্শন দেন আর সেখানেই তার করুন মৃত্যু হয়। নবাব সিরাজদৌল্লার হত্যাকারী মুহাম্মদী বেগের মাথায় গড়গড় রোগ হয়। মাথা গড়গড়ানি সহ্য করদে না পেরে কুয়াতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। নবাব সিরাজকে ধরিয়ে দেয়া ফকির দানিশ শাহর বিষাক্ত সাপের কামড়ে মৃতু হয়। রবার্ট ক্লাইভ প্লাসি হিরো বদনাম সহ্য করতে না পেরে নিজের গলায় ক্ষুর লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
পৃথিবীর ইতিহাসের ষড়যন্ত্রীকারী ও বেইমান মুনাফেকরা যুগ যুগ ধরে এভাবেই করুন মৃত্যুর কাছে পরাজীত হয়েছে। দেশপ্রেমিক নবাব, দেশপ্রেমিক জনগণ সব সময়ই জয়ী হয়েছেন সততা, নিষ্ঠা ও পরেপকারীতার মাধ্যমে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.