Header Ads

Header ADS

ডান-বাম থাক তয় পাশাপাশি তাদের মধ্যে ভালোবাসার মিল্লাতবামও থাক_জগলুল হায়দার


যখন কবিতা হয় ছড়া। ছন্দের তালে তালে ছড়িয়ে দেয় বিপ্লব। শিশুদের ঘুম ভাঙিয়ে নিয়ে যায় উন্নয়নের সোপানে তিনি কবি, তিনি ছড়াকার আমাদের জগলুল হায়দার। সমসময়ে জাগতিক কল্যাণে তার কলম চলতে দেখি সময়ের মতোই। জাতপাতের বাংলাদেশে তিনি সর্বজাতের কল্যাণকামী। তাই তার ছড়া, তার চিন্তা আমাদের জাগতিক কল্যাণ। এই কল্যাণকামী কবির ছড়া নিয়ে আমার সাথে মোলাকাত করেছন। তুলে ধরেছেন তার বয়ান। তুলে ধরেছেন তার কল্যাণ ব্রত।


আফসার নিজাম : শিশুতোষ ছড়ার ভাষা কেমন হওয়া প্রয়োজন?
জগলুল হায়দার : প্রশ্নটার দুইটা দিক। এক হইতেছে ভাষা আরেক হইতেছে শিশুতোষ প্রসঙ্গ। ভাষা নিয়া যেহেতু প্রচলিত ভাবনার বাইরে আমার নিজস্ব একটা ভাবনা-রুচি আছে তাই এইটা আমার কাছে জটিল। তুমি জানো সাধারণভাবেই আমি ভাষার শুদ্ধতার ধারণায় বিশ্বাস করি না। ভাষা তো ধর্ম না। আবার এই শুদ্ধতার ভঙ্গি দিয়া ভাষা বিচার বিজ্ঞান সম্মতও না। প্রগতি বা অগ্রসরমানতাই তো বিজ্ঞান। যাক এইটুক তো বললাম দুনিয়ার সব ভাষার কথা মাথায় রাইখা। এইবার খালি আমগো মায়ের ভাষার প্রেক্ষিতে যুদি কই তাইলে এই ভাষা প্রসঙ্গ আরো বেশি গোলমালের । এই গোলমালের দায় একাধারে ঔপনিবেশি ভাবনা আর কলকাতাকেন্দ্রিক উনিশ শতকীয় তথাকথিত রেনেসাঁর। মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক সংখ্যা লঘিষ্ট এলিট তথা বাবুশ্রেনীর হাতে বিকশিত এই রেনেসাঁসের পথ ধইরাই আসছে আজকের বাংলা মানভাষা। এইটারে সয়ং রবি ঠাকুর কৃত্রিম ভাষা বলছেন। এইসব নিয়া আমার 'ছড়ার সাম্প্রতিক ভাষারীতি' সহ আরো নানা গদ্যে বয়ান রাখছি। ভাষা প্রসংগে আপাতত এই বলি যে, আমি ঐতিহাসিক পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশের সহজাত ভাষারেই আমগো ভাষা মনে করি। এর মানে কিন্তু আবার আঞ্চলিক ভাষা না। আঞ্চলিক ভাষা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার সীমাবদ্ধতা আছে। আমি মূলত বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বোধগম্য একটা ভাষারীতিতে লিখতে চেষ্টা করি। আসলে আগামীতে গণমুখী এই ভাষাই হইব আমগো সাহিত্যভাষা। যাক এইবার আসি শিশুতোষ ছড়ায়। এই ক্ষেত্রে বলুম, যতোটা সম্ভব সহজ সরল হওয়া উচিত। আর কেবল শিশুতোষ ছড়া নয় বরং শিশুতোষ সাহিত্যের সকল শাখার ভাষাই এমুন হওয়া উচিত।

আফসার নিজাম : সমসাময়ীক ছড়ার শিল্পরূপ কতোটা রক্ষা হয়?
জগলুল হায়দার : সাধারণভাবে বলুম রক্ষা হয়। আর বিশেসভাবে বললে বলতে হয়, এই ক্ষেত্রে যারা পারঙ্গম তাদেরটার বেশি রক্ষা হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বা কুনো কুনো ছড়ায় এর হয় তো কিছু ঘাটতি থাকে। কিন্তু গড়পড়তায় আমগো এইখানে এখন যথেষ্ট শিল্পসম্মত ছড়া হইতেছে। তুমি জানো, ছড়াকে একসময় কেউ কেউ শিল্প বলতেন না। এমুনকি আজ থিকা ২ যুগ আগে যখন ছড়া করতে আসলাম তখনো এমুন মানসিকতা দেখতাম কারো কারো। পীড়িত হইতাম। তখন মনের মধ্যে প্রচণ্ড জিদ চাপতো তয় মুখে কিছু কইতাম না। খালি মনে মনে কইতাম খাড়া...। মাশাল্লাহ এখন তুমি নিজেই জানো এই দুইযুগে বাংলাছড়া কুন জাগায় পৌঁছাইছে। এর কৃতিত্ব কমবেশি আমগো সবার যারা সমসাময়ীক কালে ছড়া চর্চা কইরা আসতেছি।

আফসার নিজাম : ছড়াই এখন বাংলাভাসিদের কবিতা। ছড়ার এই উত্থানকে কিভাবে নিচ্ছেন?
জগলুল হায়দার : বাহ! দারুণ বলছো তো, ফেসবুকের কায়দায় লাইক দিলাম... হা...হা...। আমি এইটা খুব ভালোভাবে দেখতেছি। খুব উপভোগ করতেছি। আর যুদি চলতি টোনে বলি, তাইলে কমু, খুব মজাও লইতেছি। আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবজারভেশন শেয়ার করতেছি; আগে দেখছি ছড়াকারদের অনেকেই এক পর্যায়ে কবিতা লিখতেন আর এখন দেখতেছি অনেক কবি ( অবশ্য ছড়াকারও কবি) সিরিয়াসলি ছড়া লিখতে চেষ্টা করতেছেন। এই পরিবর্তন ভালো। আমি এইসব কবি বন্ধুদের ছড়ার ভুবনে স্বাগত জানাই। কবিতা আর ছড়া আসলে খুব দূরের কেউ নয়।

আফসার নিজাম : ছড়াকারদের প্রবন্ধ প্রবন্ধকারদের মতো তাৎপর্যপূর্ণ না হওয়ার কারণ কি?
জগলুল হায়দার : গদ্যসাহিত্যে প্রবন্ধকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ধারা মনে করি। এইটা খুব দরকারিও। মুশকিল হইল ফিকশন লিখতে ইমাজিনেশন,আবেগ আর ভাষা থাকলেই চলে। প্রবন্ধে আবার কেবল তা দিয়া চলে না। প্রবন্ধে প্রচুর মালমশলা থাকতে হয়। তার জন্য লাগে ব্যাপক পড়াশুনা। আমগো অনেকের সেই পড়াশুনা নাই। নাই অভিনিবেশ ও অন্বেষণ। ফলে এমুন ছড়াকার যখন প্রবন্ধ লেখেন তখন তা তাৎপর্যহীন হইতে বাধ্য। অবশ্য খুব কম হইলেও দুইএকজন ব্যতিক্রম আছেন। আর বিদগ্ধ পাঠকও তাদের প্রবন্ধে ঠিকই তাৎপর্য খুঁইজা পান।

আফসার নিজাম : কবিদের মতো ছড়াকারদের দশকওয়ারি বিচার দেখা যায় না কেনো?
জগলুল হায়দার : একবারে যে দেখা যায় না তা না। তয় না দেখা যাওয়াটারে আমি ইতিবাচক মনে করি। দশক আসলে কমজোরি লেখকের জন্য একধরণের প্রণোদনা ( দুষ্টলোক এরে লিল্লাহও বলতে পারে) প্যাকেজ। প্রকৃত লেখকের এইসব লাগে না। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদ্দিন কুন দশকের লেখক? এইসব আসলে জাত লেখকের জন্য অদরকারী বিষয়। ত্রিশের কবি বইলা একটা কথার চল শুরু হওয়ার পর থিকা বাংলা কবিতায় কেউ কেউ ধারাবাহিকভাবে এই প্রক্রিয়া জারী রাখছে। আমি মনে করি জাত লেখক দশকের হয় না হয় ইতিহাসের।

আফসার নিজাম : লেখকদের ডান-বাম সমস্যা সামাধানে ছড়াকারদের ভূমিকা কেমন হওয়া প্রয়োজন?
জগলুল হায়দার : ডান-বাম থাকবোই। এইটারে সেই অর্থে আমি সমস্যা মনে করি না। সমস্যা হইল মতান্তর এর লগে লগে যে অনাবশ্যক মন্বন্তর সেইটা। আমগো সাহিত্য অঙ্গন তো অনেক বড় না। ছড়া আবার তার একটা শাখা। এই কয়জন লোক এক লগে মিলাঝিলা চলতে পারুম না এইডা কুনো কথা হইল। ডান-বাম থাক তয় পাশাপাশি তাদের মধ্যে ভালোবাসার মিল্লাতবামও থাক এইটাই কামনা।





কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.