Header Ads

Header ADS

বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণি’র আবর্তে অর্ণব আশিক_আফসার নিজাম

 
আফসার নিজাম
বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণি’র আবর্তে অর্ণব আশিক


অর্ণব আশিকের সপ্তম কাব্যসন্তান ‘বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণি’। এই বইটি সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে প্রথমেই যে শব্দটি আমাদের ভেতর শব্দকম্পন সৃষ্টি করে তার নাম ‘বেয়াড়’। এই শব্দটি প্রচলিত সমাজকে উপেক্ষা করে নিজের দায়িত্ব পালনকারি এক মানুষকে বুঝিয়ে থাকে। যে প্রচন্ড আক্রশে সমাজের যাবতীয় অনাচার, দুঃখ, ক্লেদকে মাড়িয়ে নতুন এক আলোর জন্য লড়াই করে। আমার অন্যভাবে বলতে পারি রাস্ট্রের দুষ্টাচারের প্রতি এক বিদ্রোহীবীর। যে ক্রমাগত রাস্ট্রযন্ত্রের অনিয়মের প্রতি বিদ্রোহ করে একটি শুদ্ধ রাস্ট্র ব্যাবস্থার জন্য তার লড়াই জারি রাখে। এই দায়িত্বটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সমাজে বা রাস্ট্রে নিজের লড়াই জারি রাখা। যে কজন লেখক এই লড়াই জারি রাখে তাদের মধ্যে অর্ণব আশিক অন্যতম।

আমরা তার গ্রন্থের নামের মধ্যে যে দ্বিতীয় শব্দটি খুঁজে পাই তা চাঁদ। চাঁদ বলতেই এক পেলব, কোমন নারীরূপি এক চরিত্র ভেসে ওঠে। যার জীবন ক্রমাগত জ¦লে জ¦লে পৃথিবীকে আলোকিত করে যাওয়া। তার অনুপস্থিতিতে পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার। গাঢ় অন্ধকার। তখন শয়তানের রাজ্যত্ব হাজির হয়। চাঁদ তাই এক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে মানবজীবনে। অর্ণব আশিক তাই বেছে নিয়েছে তার দ্বিতীয় শব্দ চাঁদ। চাঁদকে সে মানবজীবনের প্রতীক হিশেবে হাজির করেছে। এই রূপক আর আধ্যাত্মীক জীবনের সংমিশ্রন এক অপ্রার্থীব জীবনের প্রতি ইঙ্গিত করে। শক্তিমান কবিদের বৈশিষ্টকে হাজির করে এই চিন্তার মধ্য দিয়ে। অর্ণব আশিক সেই শক্তিমান কবিদরে পদাঙ্ক অনুসরণে এগিয়ে যায় অনন্ত জীবনের প্রতি।



তার গ্রন্থ নামে তৃতীয় শব্দটি হলো ঘূর্ণী। এই শব্দটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবী বা চাঁদই নয়। বিশ^জগতের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কণাও এই আবর্তনের মধ্য দিয়ে তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখে। এই ঘূর্ণী বন্ধ হয়ে গেলে জীবনেরও অবশান হয়। বিশ^জগতের ঘূর্ণী বন্ধ হওয়াকেই জগতের ধ্বংস বলা হয়। ইসলাম ধর্মে তাকে কিয়ামত হিশেবে অবিহিত করেছে। পৃথিবী যদি তার ঘূর্ণন বন্ধ করে তবে আর রাত দিন বলে কোনো শব্দ থাকবে না। তাই রাত এবং দিনকে জারি রাখার জন্যই এই ঘূর্ণয়ন আমাদের প্রয়োজন। আমাদের জীবনাশক্তিও এই ঘূর্ণয়নের মধ্যে নিহিত। কবি তাই  এই ঘূর্ণীকে গুরুত্বের সাথে তার বইয়ের নামে শব্দ নির্বাচন করেছেন।

কবি অর্ণব আশিক তার বইয়ের নাম রেখেছেন ‘বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণী’। আমরা একে ‘বিদ্রোহী বীরে অভিযান’ হিশেবেই দেখতে পারি। রূপকার্থে এই নামটি যুতসই হয়ে ওঠেছে। সমাজ, সংসার ও রাস্ট্রযন্ত্রের এই গোলকায়নে বিদ্রোহী জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সমাজ সংসার ও রাস্ট্রের পদস্খল কবিকে যখন বিচলিত করে তুলে তখন কবি এই দুরাচার পদস্খলনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বলেন-
তুমি সেই বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণী
‘হৃদয়ের গোখরো
দংশন করো সারারাত
জ¦ালাও প্রেমের চিতা
আমি দেখি ধূ ধূ মরুভূমি।’
     -বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণী

ছাপান্নটি কবিতার মালা গেঁথে কবি রচনা করেছেন এই ‘বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণী’। দীর্ঘ জীবন পরিক্রমায় তিনি কবিতাগুলো সৃজন করেছেন চিন্তাহৃদয়ের মধ্য দিয়ে। ক্রমাগত নিজের সাথে নিজের লড়াই করে। সমাজ ও রাস্ট্রের সাথে লড়াই জারি রেখে এগিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। তারপর পরম এক মুহূর্তে তিনি লিখে গেছেন কবিতা। জীবনের প্রতিটি অনুসঙ্গই তখন তার কবিতা হয়ে ওঠেছে।

অর্ণব আশিক তার কবি জীবনে কি দেখেছেন, কি চেয়েছিলেন এই জীবনে, কার সান্বিধ্য তাকে অনুপ্রাণিত করেছে, কার ব্যথায় কাতর হয়েছে, কার প্রতিহিংসায় নিজেকে কুকড়ে নিয়েছেন, দুষ্টজীবনের হটকারিতায় হয়েছেন ক্ষুব্ধ। সেইসব লিপিবদ্ধ হয়েছে তার কবিতার ভেতর দিয়ে-
‘একদিন হলুদ গল্প শুনিয়েছিলে
সূর্য তখন মাথার উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে স্থির
বিকেল এগুচ্ছে ধীরে সাপলুডু খেলা জীবনের
সাথে নিয়ে ক্লন্তি আর জীবনের মৃত গল্পের ভার।’
                                  -নির্মিত নিয়তি

আমরা এই বই পাঠে যে ধরনের জীবনালোকে মধ্য দিয়ে যাই। তাহলো আত্মোপলব্ধি, জীবনরূপ বিনির্মাণ, যন্ত্রণার বিদ্যমানরূপ, অসহায়ত্ব, ক্ষোভ. হতাশা উত্তোরণ। এই সকল বিষয়াবলীর ভিতর দিয়ে অর্ণব আশিক জীবনকে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। নারী, প্রেম, বিদ্রোহ একাকার হয়েগেছে এইসব কবিতার শরীরের ভেতর।
‘জানার কিছু কী আছে
জানাবার কিছু নেই
মনের ঘড়িতে বেঁজে উঠে পেণ্ডুলাম
হৃদয়ের জোছনা ক্রুশবিদ্ধ হয়।’
         -জানাবার কিছু কী আছে
অথবা
‘বহুকাল বহুকষ্টে
 বেদেনীর মতো
স্বজনের ডানাওঠা যুবক-যুবতী
পুষেছি দুধ-কলা দিয়ে
বুকের ঝাঁপির ভিতর।’
             -উঁইপোকা স্বজন

সমাজ রাজনীতির মধ্য দিয়ে কবি হাঁটা চলা না করলেও রাজনৈতিক সচেতনতা তার ভেতরে প্রবলভাবে বিরাজ করে। সে সব সময়ই একপ্রকার রাজনীতির মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়। তার কান সজাগ থাকে নিপিড়িত জনগনের আর্তনাদ শুনে বিচলিত হওয়ার জন্য। তার চোখ খোলা থাকে দুরাচারের বিরুদ্ধে রক্তচক্ষু প্রদর্শনের জন্য।
‘আকাশে চাঁদ নিরব ছিলো
শব্দ উড়ে ভাঙরে আগল
ঈর্ষা ক্রোধ কালো শাসন
এই মাটিতে নতুন অনল।’
            -শাসনের ফাঁস

সে পৃথিবীকে একটি বাসযোগ্য পরিবেশে দেখতে চায়। যেখানে সৌন্দর্য খেলা করবে শাপলাফুলের মতো। দোয়েল পাখির মতো শিশ দিয়ে যাবে নতুন সময়। ভালোবাসা আর প্রেমে অবগান করবে সবুজ প্রকৃতি।
‘নাগরিক জীবনের ঝুলন্ত বারান্দা থেকে
জীবনের ভাঁজ খুলে মেটায় তৃষ্ণা
অবরুদ্ধ হৃদয়ের
স্বপ্ন বোনা ওরা দু’জন।’
       -স্বপ্ন বোনা ওরা

এভাবেই এক চরম বিদ্রোহী জীবন পরম জীবনের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যায় অনন্ত্য জীবনের অভিমুখে। জগতবাসির জন্য এই স্বপ্ন আমাদের পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে তোলবে অর্ণব আশিকের স্বপ্নের মতো। আমরাও সেই প্রত্যাশ কবিতা পাঠ করি।

কবি অর্ণব আশিকের ‘বেয়াড়া চাঁদের ঘূর্ণি’ কবিতার বইয়ে প্রচ্ছদ করেছেন কাইয়ুম আল আমিন, একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ বইটি প্রকাশ করেছে ‘চিত্রা প্রকাশনী’ যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় একশত পঞ্চাশ টাকা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.