মেঘনা নদীর জলদস্যু_আফসার নিজাম

মেঘনা নদীর জলদস্যু
আফসার নিজাম
এক.
: বাবা ও বাবা।
: কি অইছে ক।
: আমরার একটা ইঞ্জিন কিনলে অয় না।
: অয়। কিন্তু এতো ট্যাকা পামু কই।
: ক্যা। আমরার গরু আর ডেহাডা বেইচ্চা হেই ট্যাকা দিয়া কিনমু।
: গরু বেইচ্চা দিলে দুধ খাইবা কইত্তে। আর মধ্যে মধ্যে দুধ বেইচ্চা ভাত খাইতে অয়।
: তয় গরু বেচন কাম নাই আমরার ঘরডা বেইচ্চা দেও। হেই ট্যাকা দিয়া ইঞ্জিন কিনো।
: ঘর বেইচা দিলে থাকবা কই।
: ক্যা আমরার ছনের ঘরটায় থাকমু।
: হ’ অহনে দাঁড় টান জলদি বাইত যাইতে অইবো।
: বাবা অহনে বাজে কয়ডা।
: ক্যা, রাইত নয়’ডা।
পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় নদীর ছোট ছোট ঢেউগুলো সোনার মোহরের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। নদীতে এখন তেমন চলাচল নাই। দূরে বহু দূরে জেলেদের দু’একটি নৌকায় হারিকেনের আলো মিটিমিটি জ্বলছে। জেলেরা সারা রাত নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে। ভোরে ট্রলার আসবে সেখানে মাছ বেচবে। ন্যায্য পাওনা তারা পায় না। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে।
মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে একটি বাড়ি। বাঁশ ও বেতঝাঁড়ের সঙ্গেই আম, জাম, পেয়ারা, নারকেল ও বিভিন্ন গাছ। বাড়িটির পাশে একটি বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে শিহজ লেখা পড়া করে। সকালে ইশকুুলে যায়, বিকালে বাবার সাথে নৌকা চালায়।
: তুই বাইত যা আমি নাও তালা দিয়া আই।
দুই.
: কিরে শিহজ দুই দিন অইল লঞ্চ আহে না ব্যাপার কি!
: বাবা। যারা লঞ্চ চালায় তারা স্টাইক করছে।
: কিয়ের স্টাইক।
: ক্যা, হুন নাই লঞ্চে কয়দিন বাদে বাদেই ডাকাতি অয়। জলদস্যুদের উৎপাত বাড়ছে। আবার সরকার নাকি তেলের দাম বাড়াইছে। হেলাগ্গাই হেরা সব লঞ্চ বন্ধ কইরা দিছে।
কয়েক মাস ধরে মেঘনা নদীতে জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা কড়া হয়েছে। মেঘনার নৌ পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। তবুও ডাকাতি হচ্ছে। দস্যুদের নাগাল পাচ্ছে না প্রশাসন। দস্যুরা একের পর এক ডাকাতি করেই যাচ্ছে। আবার উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণে তেলের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। এ সুযোগে অসাধু ব্যাবসায়ীরা তেল স্টক করে চড়া দামে বিক্রি করে রাতারাতি কলাগাছ বনে গেছে। লঞ্চ চালকদের যতো টাকা ইনকাম করে তার থেকে দেড়গুণ বেশি খরচ হয়। তাই অবিলম্বে তেলের দাম কমানোর জন্য লঞ্চ মালিক সমিতি স্টাইক করেছে।
শিহজদের নৌকাটা তরতর করে চলছে লঞ্চঘাটের দিকে। এক সময় ঘাটে এসে থেমে গেলো। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরেও কোনো যাত্রী পেলো না। শুধু শিহজরা না, এ ঘাটে যারা পানশী চালায় সবাই। তীর্থের কাকের মতো সবাই চেয়ে থাকে একটি যাত্রী পাবার আশায়। বসে থাকতে থাকতে তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। করিম মিয়া বলেÑ
: চল শিহজ বাইত যাইগা।
: বাবা একটু বও।
: অনেকক্ষণ তো বইলাম। আর ভালা লাগে না।
: বাবা এক কাম করলে অয় না!
: কি কাম?
: চলো বাবা নারায়গঞ্জ যাই। ঢাহা যাওনের কয়েকজন যাত্রী আছে। হেগো দিয়া আহি আর আওনের সময় তো যাত্রী পাওয়াই যাবো।
: অহন রওনা দিলে তিনডা বাজবো নারায়গঞ্জ যাইতে।
: বাজুক।
: আর নারায়গঞ্জ থেইকা বাইত আইতে রাতই অইবো।
: অওক। আমরা তো রাইতে নৌকা চালাই।
: পারবি তো।
: হ পারমু।
: তয় চল। ডাক দে। যারা ঢাহা যাইতে চায়।
পাল উড়াইয়া দিলো শিহজ। হাল ধরে আছে করিম মিয়া। ফেনা উঠিয়ে তরতর করে মৃদু ঢেউয়ে দোল খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে নায়াগঞ্জের দিকে। ঘাটের কাছে আসতেই শিহজ চিৎকার দেয়Ñ
: ঐ যে বাবা লঞ্চঘাট। ঐ যে লঞ্চঘাট।
খুশিতে শিহজের চোখ নাচতে থাকে। যাত্রীরাও সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। লঞ্চ স্ট্রাইকের জন্য ঢাকায় আসতে পারছিলো না। নৌকা আসতে আসতে লঞ্চঘাটের পাশে ছোট্ট নৌকাঘাটে ভিড়ে। যাত্রীরা পাওনা পরিশোধ করে বিদায় নেয়।
: বাবা কয়ডা বাজে। ক্ষিদা লাগছে।
: বাজে আর কয়ডা সাড়ে তিনডা। ক্ষিদা তো লাগবো।
: চলো বাবা খাইয়া লই।
: চল আগে খাই। তারপর আবার যাওনের চিন্তা করতে অইবো।
তিন.
মসজিদে আসরের আজান দেয়। এক এক করে সব ইঞ্জিন নৌকা ও পানসিগুলো ক্ষেপ পেয়ে চলে গেলো। শিহজ ও তার বাবা নৌকাতেই নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষ করতেই-
: এই মাঝি যাবে।
গম্ভীর একটি কণ্ঠ ভেসে আসলো। মুনাজাত শেষে তাকালো সেদিকে। সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন যুবক চুলগুলো পেছনে সিঁথি করা। মুখভর্তি ছোট ছোট চাপদাড়ি। পরনে কোট প্যান্ট। গলায় টাই ঝুলানো। পায়ে বুট। হাতে বড় বড় দুটি ব্রিফকেস। ব্রিফকেসে লেখা ওমর ফারুক। হাফিজ চেয়াম্যানের দুই সন্তানের ছোট সন্তান ওমর। পাশে একটি সুন্দর মেয়ে মানুষ। ফারুকের স্ত্রী মনিকা। গত আট ফাল্গুন তাদের বিয়ে হয়েছে। গলায় সোনার হার। লাল টুকটুকে বেনারশী শাড়ি পরা। তাতে চুমকি ও বুনতি সুতার কারুকাজ। হাতে স্বর্ণের বালা। পায়ে নূপুর। পাশে ঝুলছে মনিপুরী ব্যানেটিব্যাগ। ওমর জাপানে দীর্ঘ দশ বছর কাটিয়েছে। গত পরশু ঢাকায় ফিরে। আজ গ্রামে যাচ্ছে। কিন্তু ঘাটে এসে দেখে লঞ্চ নাই। আবার ঢাকা ফিরে যাবে তাই একটি নৌকা ঠিক করেই গ্রামে যাবে ঠিক করে।
: যামু
উত্তর দিলো শিহজ। আবার প্রশ্ন করে
: কই যাইবেন আপনে।
: এখলাসপুর যাবে।
: যামু।
: ভাড়া কতো?
: আপনি দিয়েন। ইনসাফ কইরা। আমরাতো আর সব সময় এহানে আহি না। দিয়েন।
কায়দা করে বলে করিম মিয়া। সে বুঝতে পারে চাইতে গেলে কম পাবে বরঞ্চ তার উপর চাপিয়ে দিলে বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
: ঠিক আছে চাচা মিয়া। ইনসাফ কইরাই দিমু। আমার ব্রিফকেস দুটি উঠান।
শিহজ ও করিম মিয়া ব্রিফকেস দুটি নৌকায় উঠায়। স্বামী স্ত্রী দুজনও উঠলো।
: ও সিগারেট আনতে ভুলে গেছি। তুমি একটু বস আমি সিগারেট নিয়ে আসি।
বলেই ওমর সিগারেট আনতে নিচে নামলো। তার স্ত্রী বলে
: তাড়াতাড়ি এসো।
: ঠিক আছে। আমি তো সিগারেট নেবো আর আসবো। জাস্ট টু মিনিট।
চার.
চারজন লোক পাটি দিয়ে পেঁচানো একটি লাশ কাঁধে করে নিয়ে আসলো ঘাটে। ঘাটের আশে পাশে ইঞ্জিন নৌকা ও পানসি খোঁজে, কিন্তু পেলো না। অবশেষে করিম মিয়াকে বললো আমরা এই লাশটি নিয়া কলাকান্দা যাবো। দয়া করে আমাদের পোঁছে দেন। শিহজ বলল-
: না ভাড়া অইয়া গেছে আমরা হেগো নিয়া যামু।
: তারা কারা?
: ঐ যে ঐ যে লোক।
সিগারেট নিয়া ফিরলো ফারুক। লাশবাহীদের একজন ফারুককে গিয়ে বললোÑ
: ভাই আমরা লাশ নিয়া বিপদে পড়ছি। আশেপাশে কোনো পানসি নাই। আপনারা এলাসপুর যাবেন আমরা কালাগান্দা যাবো।
অন্য একজন বললো-
: একঘাট আগে পিছে। আমাদের নিলে বড় উকৃত হতাম।
: না না নেয়া যাবে না। আপনারা অন্য কোনো ব্যবস্থা করেন।
এমন এসময় একজন ফারুকের হাত ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো
: ভাইজান লঞ্চ বন্ধ। তারপর পানসি নাই। এই বিপদে আপনি ছাড়া আমাদের উদ্ধার করার কেউ নাই। আল্লা আপনার ভালো করবো।
লোকটির কান্নাজড়িত কণ্ঠে অনুরোধ শুনে মনিকা বললো-
: যাক না কি হয়েছে! এতো বড় পানসি। আমাদের তো আর সব জায়গা লাগবো না।
: ঠিক আছে উঠেন।
পাঁচ.
নৌকার পাল তুলে দিলো। তরতর করে এগিয়ে চলছে পানশি। ফারুক ও মনিকা পানসির মাথায় ছইয়ের উপরে বসলো। লাশটি ছইয়ের নিচে রাখে। তারা চারজন পানসির পেছনে বসলো। পানসি চলছে তার গতিতে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য। হাল ধরে আছে করিম মিয়া। নিশানা এখলাসপুরের দিকে। পানসির কর্ণধার সে। যে দিকে পানসি ভাসায় সেদিকে চলবে পানসি। তার এই গতির উপর যাত্রীদের জীবন মরণ। ভালো মন্দ ফয়সালা। করিম ডেকে উঠলো,
: শিহজ তামাকডা বানাইয়া দে।
: দিতাছি বাবা। তুমি একটু অপেক্ষা করো।
শিহজ পানসির মাথা থেকে ছইয়ের ভিতরে আসলো। হুক্কা নিয়ে তামাক বানাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি তীব্র নিঃশ্বাসের আওয়াজে আৎকে উঠলো। কিন্তু বিচলিত হলো না। বোঝার চেষ্টা করলো নিঃশ্বাসটি কোথা থেকে আসছে। পেছনে ফিরে তাকালো। পাটিতে পেঁচিয়ে রাখা লাশের উপর নিবন্ধ হলো তার দুটি চোখের মণি। প্রচ- গরম পড়েছে। গরমে যেনো লাশটি হাঁপিয়ে উঠেছে। ঘামে ভিজে যাচ্ছে তার সারা শরীর। কান দুটি এগিয়ে দিলো শিহজ। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে লাশটি। তামাক সাজানো বন্ধ করে। চুপিসারে উঠে গেলো বাবার কাছে। তার কানে কানে সব ঘটনা খুলে বললো। সব কথা শুনে করিম মিয়া শিহজকে বললোÑ
: নৌকার মাথায় গিয়া তাড়াতাড়ি বৈঠা চালা। সন্ধ্যার আগেই আমাগো মোহনপুর যাইতে হইবো। নইলে সর্বনাশ হইয়া যাইবো। যা যা তাড়াতাড়ি যা।
ছয়.
মোহনপুর আসতেই মাগরিবের আজান শোনা যায়। করিম মিয়া বলে-
: বাবা হারিকেনডা ধরাওতো।
: বাবা তেল নাই। হারিকেন ধরামু কি দিয়া।
: হারিকেনডা দাও। আমি তেল নিয়া আর নামাজটা পইড়া আহি। হাল ধরো তুমি।
শিহজ পানসি ভিড়ালো ঘাটে। নামলো করিম মিয়া। ফারুক বললো-
: কোথায় যাবেন আপনি?
: সন্ধ্যা হইছে হারিকেন ধরাইতে হইবো না। কিন্তু হারিকেনে তেল নাই। তেল ভইরা আহি আর সাথে নামাজটাও পইড়া আহি।
: হারিকেন জ্বালানো লাগবো না। আপনে আগে আমাদের পৌঁছে দেন।
ফাঁরুক ঝাঁঝালো কণ্ঠে করিম মিয়াকে ধমক দেয়।
: সন্ধ্যায় হারেকেন না দিলে অমঙ্গল হয়।
: হোক অমঙ্গল। আগে আমাদের পৌঁছে দেন।
ফারুকের কথা উপেক্ষা করে চলে গেলো করিম মিয়া। লাশবাহী চারজন মহা খুশি। মাঝি নামাজ পড়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসবে। অন্ধকার গ্রাস করে নেবে চারপাশ। অন্ধকারের এই সুযোগে তারাও গ্রাস করে নেবে তাদের কার্য। সফল হবে তাদের উদ্দেশ্য।
সাত.
করিম মিয়া হারিকেন হাতে করে চলে গেলো বাজারের ভেতরে। মসজিদ পাশ কাটিয়ে হাজির হলো মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়িতে। দারোগাকে সব ঘটনা খুলে বললো। দারোগা সব কথা শুনে চাঁদপুর ও মতলব থানাকে জানায়। ওসি সাথে সাথেই একশানে যেতে বলেন। দারোগা সেই মোতাবেগ ব্যবস্থা নেন। দারোগো করিম মিয়াকে বলে-
: আপনি আসতে আসতে নৌকায় চলে যান আমরা আসছি।
: ঠিক আছে। আমি মসজিদে নামাজ পড়ে তারপর যাই।
: আচ্ছা যান। এর ফাঁকে আমাদের কাজও শেষ হবে।
মসজিদে নামাজ আদায় করে করিম মিয়া হারিকেন হাতে করে আসতে আসতে ঘাটের দিকে রওয়ানা দেয়।
আট.
করিম মিয়া পানসির কাছে যেতেই ফারুক খুব রেগে গেলো।
: এতো দেরি করলেন কেন? রাত হইয়া গেছে। শুনছি এখন জলদস্যুদের বেশ উৎপাত।
করিম মিয়া ফারুকের গোস্সাকে আমল না দিয়ে মাথা নিচু করে পানসিতে গিয়ে উঠে। আর শিহজকে ভারি গলায় বলে-
: এই শিহজ পানসি ছাড়।
শিহজ পানসি ছাড়লো। করিম মিয়া ফারুককে উদ্দেশ্য করে বলে-
: আরে সাহেব ডরান ক্যা। আমাগো লগে এই চার চারজন জুয়ান মানুষ। তাগো দেখলে ডাকাইতরাই তো ডরে বাপ বাপ কইরা পলাইবো।
: হ ঠিক বলছেন।
লাশের সাথে একজন মিনমিনে কণ্ঠে এ কথা বললো। করিম মিয়া ধীরে ধীরে বৈঠা ফেলছে। ধীরে ধীরে বৈঠা চালাতে দেখে ফারুক আবারও রেগে যায়।
: তাড়াতাড়ি বৈঠা চালান।
ফারুকের ভয় আর রাগ এক সাথে বের হয়ে আসে। ফারুক দীর্ঘ দশ বছর জাপানে চাকুরি করে যা সঞ্চয় করেছে আজ দস্যুরা যদি সব নিয়ে যায়।
নয়.
করিম মিয়ার নৌকা যখন মোহনপুর ঘাট থেকে কিছু দূর অগ্রসর হয় ঠিক তখনই উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে দুই স্প্রিট বোট আসতে আসতে নৌকার কাছে ভিড়তে চেষ্টা করছে। স্প্রিট বোট দেখে করিম মিয়া বুঝতে পারলো এ বোট কাদের। আসতে আসতে অতি নিকটে এসে পড়েছে বোট। বোট থেকে একজন চিৎকার করে বলে-
: ঐ পানসি। কি নিয়া যাও।
: যাত্রী
: আর কিছু আছে?
: হ একটি লাশ আছে।
: লাশ কোথা থেকে?
: নারায়গঞ্জ থেকে।
স্প্রিট বোট পানসির কাছে ভিড়ে গেলো। ফারুককে একজন জিজ্ঞাসা করলো।
: লাশ কাদের।
: আমাদের না। লাশটি ওনাদের
ফারুক হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয় লাশবাহী অন্য চারজনকে। ঐ চারজনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তারা। একজন জিজ্ঞাসা করলো-
: লাশের পোস্টমোর্টম রিপোর্ট কোথায়?
: কিসের রিপোর্ট! বাড়িতে মারা গেছে, এখন গ্রামে নিয়া যাইতাছি।
: তোরা মারছস না নিজেই মরছে আমাদের একটু পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
: লাশ আর কি দেখবেন?
: দেখবো লাশটা মরা না জিন্দা।
স্প্রিট বোট থেকে ছয়জন পানসিতে উঠে আসলো। দুজন নৌকার ছয়ের নিচে প্রবেশ করলো। একজন হাত দিয়ে লাশটিকে দেখতে চেষ্টা করলো অন্যজন বোট দিয়ে সজোড়ে লাত্থি মারলো। কেৎ করে উঠলো লাশটি। এজন চিৎকার করে বললো,
: এটা তো লাশ না জ্যান্ত মানুষ।
: সবাইকে আটক করো।
সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে যাপটে ধরলো তারা। একজন নদীতে লাফ দিলো। তারা তাকে নদী থেকে তুলে আনলো। নৌকা ঘাটে ভিড়লো।
: লাশটিকে দেখবো স্যার?
: হ্যা দেখেন।
: স্যার পাটি দিয়ে পেঁচানো।
: সাবধান! সাবধান। এর সাথেই অস্ত্র আছে।
: আগে একটু উত্তম মাধ্যম দিয়ে নিতে হবে।
এ কথার সাথে সাথে শুরু হলো। রোলের আঘাতে লাশ চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে বাজারের লোকজন জড়ো হতে থাকলো। পিটাতে পিটাতে যখন দেখলো আর চিৎকার করে না তখন একজন বলে-
: স্যার সম্ভবত অজ্ঞান হইয়া গেছে।
: এবার তাহলে খোলা যায়।
লাশের পাটি খোলেই সবাই অবাক। লাশের সঙ্গে আধুনিক আগ্নেয় অস্ত্র। এবার ফারুকের দিকে তাকিয়ে ওসি বলে-
: চলুন। আপনাদের একটু থানায় যেতে হবে।
: আমাদের না আসলে হয় না।
: না হয় না।
স্প্রিট বোট এগিয়ে গেলো। যেতে যেতে ফারুককে সব ঘটনা বললো ওসি। এই পানসিওয়ালাই আপনাদের মাল এবং জান বাঁচিয়েছেন। এ কথা শুনে ফারুক যারপরনাই খুশি হলো করিম মিয়ার প্রতি। ফারুক বললো
: আমি তাদের জন্য কিছু করতে চাই।
: করেন এটা তো আপনার ইচ্ছে।
: হ্যাঁ আমি এদের একটি নৌকা করে দেবো
: এখন তো ইঞ্জিন নৌকা চলে।
: ঠিক আছে আমি তাদের জন্য ইঞ্জিন নৌকাই করে দেবো। যে আমার জান মাল দুটোই বাঁচিয়েছেন।
দশ.
নতুন ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে করিম মিয়া আর শিহজ চাঁদপুর থেকে রওয়ানা দিলো। ইঞ্জিনের শব্দে সাথে কাঁপছে নৌকা। শরতের জোছনায় ভরে উঠছে নদীর বুক। করিম মিয়া নিশ্চিন্তে হাল ধরেছে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কোন মন্তব্য নেই