Header Ads

Header ADS

প্রকৃতপক্ষে আমরা জীবনের জন্যই ছড়া লিখি_শাহ আলম বাদশা

 
প্রকৃতপক্ষে আমরা জীবনের জন্যই ছড়া লিখি
শাহ আলম বাদশা

৭০ দশকের কবি, ছড়াকার, গীতিকার বিশেষত; শিশুসাহিত্যিক। ৬টি প্রবন্ধ সংকলন, ৩টি গল্পসংকলন, ৩টি শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ, ২টি ছড়াগ্রন্থ, ৩টি কাব্যগ্রন্থ, ৭টি অডিও-ভিডিও এলবাম প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশ রংপুর কর্তৃক ‘‘উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ ছড়াকার’’ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ১৯৮৬ সালে সিলেট ছড়া পরিষদ কর্তৃক ছড়ায় অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে সাংবাদিকতাছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা যেমন; লালমনিরহাট থেকে ত্রৈমাসিক চলমান, ত্রৈমাসিক ব্যতিক্রম, ত্রৈমাসিক দারুচিনি, ত্রৈমাসিক কিশোরকন্ঠ, ত্রৈমাসিক প্রজাপতিসহ (অধুনালুপ্ত) বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক এবং লালমনিরহাটের প্রথম প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক জানাজানি’র প্রতিষ্ঠাতা সাহিত্যসম্পাদক ছিলেন।
বর্তমানে ফেসবুকের গঠনমূলক ও ব্যতিক্রমী সাহিত্যগ্রুপ " রঙধনু" এর প্রতিষ্ঠাতা চিফ-এডমিন এর গ্রুপের জনপ্রিয় মুখপত্র 'রঙধনু সাহিত্য পত্র' এর সম্পদক।
প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থঃ ১। দুরছাই ধুত্তোরী ছাই [শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ-২০১৫], ২। ছড়িয়ে দিলেম ছড়া [ছড়াগ্রন্থ-২০১৬], ৩। হৃদয়জমিন [কাব্যগ্রন্থ-২০১৬], ৪। নিপুণ শব্দস্রোত [কাব্যগ্রন্থ-২০১৬], ৫। ছোট্টমণির প্রশ্ন অনেক [শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ-২০১৭], ৬। ছড়াময়-[ছড়াগ্রন্থ-২০১৭], ৭। লিন্তামণির চিন্তা-[শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ-২০১৭], ৮। লিমেরিক-[লিমেরিকগ্রন্থ-২০১৭], ৯। ধোঁয়াচ্ছন্ন অন্ধকার-[কাব্যগ্রন্থ-২০১৭], ১০। কবিকবি-ভাব ছন্দের অভাব [ছন্দবিজ্ঞান- ২০১৭], ১১। কিশোকন্ঠ গল্পসমগ্র-১ (গল্পগ্রন্থ)-২০০১], ১২। স্বপ্ন দিয়ে বোনা [গল্পগ্রন্থ-২০১৩], ১৩। মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যান্য গল্প [গল্পগ্রন্থ-২০১৫], ১৪। মা ও শিশু [প্রবন্ধগ্রন্থ (১মখণ্ড)-২০০৬], ১৫। মা ও শিশু [প্রবন্ধগ্রন্থ (২য়খণ্ড)-২০০৭], ১৭। মা ও শিশু [প্রবন্ধগ্রন্থ (৩য়খণ্ড)-২০০৮], ১৮। মা ও শিশু [প্রবন্ধগ্রন্থ (৪র্থখণ্ড)-২০০৯], ১৯। মা ও শিশু [প্রবন্ধগ্রন্থ (৫মখণ্ড)-২০১০]
২০। মা ও শিশু [প্রবন্ধগ্রন্থ (৬ষ্ঠখণ্ড)-২০১০]
লেখকের প্রকাশিত অডিও-ভিডিও এলবামঃ ১। ভোরের পাখিরা [অডিও-ভিডিও এলবাম-১৯৮৯], ২। শিহরণ-১ [অডিও এলবাম-১৯৯৩], ৩। শিহরণ-২ [অডিও এলবাম-১৯৯৩], ৪। প্রত্যয় [অডিও এলবাম-১৯৯৪], ৫। প্যারোডি গান [অডিও এলবাম-১৯৯৫], ৬। তথ্য পেলেন কাশেম চাচা [নাটিকা-২০১৪], ৭। তথ্য কমিশনের বিচারিক কার্যক্রম [প্রামাণ্যচিত্র-২০১৪]
শাহ আলম বাদশা’র প্রকাশিতব্য গ্রন্থসমুহঃ ১। ইষ্টিপাখি মিষ্টিপাখি [শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ], ২। ষড়ঋতুর দেশে [শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ], ৩। ফুল-পাখি-নদী [কিশোর কবিতাগ্রন্থ], ৪। ফুলবনে হই-চই [কিশোর উপন্যাস], ৫। সানিনে অভিযান [[কিশোর উপন্যাস], ৬। কালোমুরগি [শিশুতোষ গল্প], ৭। বেওয়ারিশ লাশ [শিশুতোষ গল্প], ৯। বাংলাবানান এবং শব্দগঠনঃ ভুল শুধু ভুল [প্রবন্ধগ্রন্থ], ১০। আমাদের সলমানিত্ব এবং কামড়াকামড়ির রকমফের।



আফসার নিজাম : অনেকে অভিযোগ করে বর্তমানে সমাজনির্ভর ছড়া লেখা হচ্ছে না
শাহ আলম বাদশা : প্রশ্নটা বিতর্কিত- আমার মনে হয়, সামগ্রিক অর্থে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাড়ার ক্ষেত্রে অভিযোগটা যথার্থ নয়। একসময় এ অভিযোগটা জোরালোভাবে শোনা যেতো কিন্তু এখন তেমন একটা শোনা যায় না। বরং আমি বলবো, এখন প্রচুর পরিমাণে সমাজনির্ভর ছড়া লেখা হচ্ছে এবং প্রচুর সংখ্যক ছড়ালেখকও বেরিয়ে এসেছে। তবে যথেষ্ট মানসম্পন্ন ও ভালো ছড়া লেখা হচ্ছে না- এ অভিযোগ তুমি করতে পারো



আফসার নিজাম :  বর্তমানে অণুকাব্যের নামে পর্নোছড়া লেখা হচ্ছে আপনার অভিমত কি
শাহ আলম বাদশা :  হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, অণুকাব্যের নামে পর্নোছড়াও কেউ কেউ লিখছে। ফলে ছড়ার মান ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং এতে ছড়ার ঐতিহ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার মনে হয়, পর্নোছড়ার লেখকরা ছড়া ও কাব্য বা কবিতার আসল পার্থক্যটাই বোঝে না কিংবা ছড়া লিখতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই অণুকাব্যের আশ্রয় নিচ্ছে, আরকী? প্রসঙ্গত: বলি- ইদানিং অনেক ছড়াই আমি পড়ি কিন্তু তা ছড়া-কবিতা কোনোটাই হয়ে ওঠে না। আসলে ছড়া লেখাটা অতো সহজ নয়, ছড়া লেখার আগে তাই যথার্থ ছন্দজ্ঞান ও ছড়ার বেশিষ্ট্যটাই রপ্ত করা চাই

আফসার নিজাম :  এখন রাজনৈতিক ছড়া বেশি লেখা হচ্ছে তেমন শিশুতোষ রচনা দেখা যায় না কেনো
শাহ আলম বাদশা :  জীবনের সবদিক নিয়েই এখন ছড়া লেখা হচ্ছে বলে রাজনৈতিক ছড়াকেও উপেক্ষা করা চলবে না। তবে রাজনৈতিক ছড়ার ভিড়ে প্রকৃত ছড়া অর্থাৎ শিশুতোষ ছড়া ও শক্তিমান ছড়াশিল্পীর আবির্ভাব খুব একটা ঘটছে না, এটাই আশংকার বিষয়। আমার মনে হয় না যে, রাজনৈতিক ছড়ার কারণে সামাজিকতা উপেক্ষিত হচ্ছে। তবে ছড়াকারদের সরাসরি রাজনৈতিক ছড়া লেখাটা একদম অনুচিৎ অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করে ছড়া লেখা ঠিক নয়। কেনো না ছড়াশিল্পী আর রাজনৈতিক কর্মী কক্ষনোই একসত্তা হতে পারে না

আফসার নিজাম :  অনেকেরই অভিযোগ মানসম্পন্ন বা অলংকারসমৃদ্ধ ছড়া খুব একটা লক্ষণীয় হচ্ছে না
শাহ আলম বাদশা :  আমাদের পথপ্রদর্শক ও অগ্রজ শক্তিমান ছড়াকারদের আদলে বর্তামানে অনেকেই ছড়ালেখায় মনোযোগী নয়। আগেই বলেছি এজন্যই এখন মানসম্পন্ন বা অলংকারসমৃদ্ধ ছড়া খুব একটা লক্ষণীয় হচ্ছে না। বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক অনেকেই ভুলে যান যে, ছড়া মূলত: চটুলছন্দে রচিত নিরেট ছন্দপ্রধান একটা শিল্প যা পাঠকের মনে রিদম বা ঢেউ সৃষ্টি করে, হৃদয়-মন আন্দোলিত করে। প্রকৃতপক্ষে ছড়া ছন্দনির্ভর আদৌ বক্তব্যনির্ভর নয়- একথা ভুললেই ছড়া কিন্তু আর ছড়ার স্থানে থাকে না। ছড়ার অলংকারই হচ্ছে চটুলছন্দ। কিন্তু দুখের বিষয় যে, আজকাল এমন ছড়া লেখা হচ্ছে যা নামেই ছড়ামাত্র এবং একারণেই জনপ্রিয় ছড়াও তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না

আফসার নিজাম :
  ছন্দকে ছড়া না ছড়াকে ছন্দ করায়ত্ত করবে
শাহ আলম বাদশা :  এটা একটা কঠিন ও বিতর্কিত প্রশ্ন্। মুরগি আগে না ডিম আগের মতো আরকি? আসলে ছন্দই হচ্ছে ছড়ার প্রাণ ও অলংকার- ছড়াতে বক্তব্যটা অগ্রাধিকার পায় না। অগ্রাধিকার পায় সুন্দর সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছন্দবন্ধ এবং ছন্দিত বাক্য। সুতরাং ছন্দকে ছড়া না ছড়াকে ছন্দ করায়ত্ব করবে- এ বিতর্কে না গিয়ে বরং বলি, ছড়াকারই ছন্দকে করায়ত্ব ও রপ্ত করার মাধ্যমেই আমাদের আকর্ষণীয় ছড়া উপহার দেবে। এক্ষেত্রে শক্তিমান ও দক্ষ ছড়াশিল্পীর ভূমিকাটাই মুখ্য

আফসার নিজাম :  সময়ই কী ছড়ার জন্মবেদনা
শাহ আলম বাদশা :  সময়ের প্রয়োজনে আমরা ছড়া লিখি- কথাটা আংশিক সত্য। প্রকৃতপক্ষে আমরা জীবনের জন্যই ছড়া লিখি-যে ছড়া সময়কেও অতিক্রম করে যেতে পারে, কালের স্রোতে হারিয়ে যাবার ভয় থাকে না। যুগযুগ ধরে প্রচলিত এধরনের অসংখ্য ছড়াই এর উদাহরণ এবং এখনো আমাদের সমাজে তা প্রচলিত ও সমানভাবে জনপ্রিয়। জীবনতো আসলে একার্থে সময়ের যোগফলমাত্র। তাই সময়কে ছড়ার জন্মবেদনা বলতে আপত্তি নেই আমার

আফসার নিজাম :  তরুণ ছড়াকাররা নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে এটা সমর্থনযোগ্য
শাহ আলম বাদশা :  তুমি বলছো- তরুণ লেখকরা ছড়ায় নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। হ্যাঁ এটা ভালো লক্ষণ যদি ওতে ছড়ার মানোন্নয়ন তথা ছড়ার গঠনশৈলী, অবকাঠামো, ছন্দ-মাত্রা ইত্যাদি বিষয়ে নতুনত্ব আনার প্রয়াস থাকে। তাহলে তো এটা শুধু সমর্থনযোগ্যই নয় অনুপ্রেরণাযোগ্যও বটে।

শাহ আলম বাদশা এর ছড়া
প্রজাপতি খেলে না

মানুষ হতে চাইনি আমি
হতেও আভাস পাইনি আমি
একটু যদি জানাতে;
প্রজাতির রঙ্গিন পাখা
কী মোহময় মিষ্টি-আঁকা
সেটাই যদি বানাতে?

ধন্য হতাম ধন্য হতাম
আনন্দেতে বন্য হতাম
প্রেমিকসেরা গণ্য হতাম
দেখতে তুমি সত্যি।
মানুষের মন ভুলিয়ে দিতাম
ফুলগুলো সব দুলিয়ে দিতাম
ভালোবাসায় ফুলিয়ে দিতাম
মিথ্যে নয় একরত্তি।

মিষ্টি করে গুনগুনিয়ে
দুঃখীগুলোয় গান শুনিয়ে
মনটা ভালো করতাম;
ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দিতে
গন্ধে হৃদয় ভরিয়ে দিতে
আচ্ছা করে লড়তাম!

খুনের দেশে ঘুণের দেশে
আনলে যে ক্যান অবশেষে
দেশটা কি আর পেলে না?
গাছপালা সব দূর করেছে
ধ্বংসলীলাই সুর করেছে
প্রজাপতিই খেলে না!

প্রজাপতির আলো-হাসি
খুব যে আমি ভালোবাসি।
প্রজাপতিই বানিয়ে দাও
দয়া করে জানিয়ে দাও।


বিষ্টিমেয়ে

বিষ্টি ওরে দুষ্টুমেয়ে
অশ্রুঝরাস চক্ষু বেয়ে
রিমঝিমিয়ে ঝুম-
এই মেয়ে তোর দুখটা কীগো
কেউ ভেঙ্গেছে সুখটা কিগো
কোথায় গেল ঘুম?

বিষ্টি রে তুই ইস্টি রে তুই
অশ্রুভরা দৃষ্টি রে তুই
কার?
ছুঁয়েছে কি লোলুপগুলো
পার পেয়েছেও দিয়ে ধূলো
পার!

বিষ্টি ওরে কাঁদিস নারে
সমব্যথায় বাঁধিস নারে
কষ্ট যে পাই, ইস;
নাকি ভীষণ দুঃখ মনে
রাগ করেছিস স্বামীর সনে
ঝগড়া অহর্নিশ?

বিষ্টি রে তুই মিষ্টি রে তুই
দিস কি ধুয়ে পাপ
পাপীদের পাপ পা-ছুঁইছুঁই
করিস নারে মাফ!


ঈদ এবং দাঁতকপাটি
[ঈদুল আযহায় কীযে হয়]

ভিক্ষুকেরা ভালোই আছিস
করিস তো ঈদ বেশ তোরা
উদর ভরে পোলাওটা নিস
আমার ভালেই রেস্তোরা!

বউয়ের দাবি মেয়ের দাবি
না মিটিয়ে কোথায় যাবি?
বেতনবাড়ার আগেই প্রচার
উপায়টা কই দুঃখ-ঘোচার।
পণ্যবাজার গরম হলে
শান্তিতে কি জীবন চলে!

দেইনি তাদের সাধ মিটিয়ে
তাইতো ওরা দাঁতখিটিয়ে
করলো ধর্মঘট;
ভাত রাঁধেনি ঝগড়াঝাটি
দেখে লাগে দাঁতকপাটি
পালাই ফটাফট!

রেস্তোঁরাতেই পেটটা ঠেলি
এইতো আমার ঈদ
তোরা খেলি তোরাই পেলি
আমায় খেলো জিদ!!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.