মামতামতুনা_আফসার নিজাম
মামতামতুনা
আফসার নিজাম
বাইরে ঝুমবৃষ্টি। বর্ষার আগেই যেনো বর্ষা শুরু হয়েগেছে। বসে আছি। আজ যেনো কেউ আসবে না। সাহিত্য সভাটি না হওয়ার বেদনায় ভেতরটি কেমন শূন্য খাঁচা মনে হতে থাকলো। হাবিবকে ক্যানটিন থেকে একপেয়ালা কফি আনতে বললাম।
- মামা বসে বসে কফি খান আর খেয়ে চইলা যান। আজ আর কেউ আসবো না। যান বাসায় যান।
- না দেখি যদি কেউ আসে। আমাকে না দেখলে হতাশ হবে।
কফিতে চুমুক দিচ্ছি আর বিগত সাহিত্য আডডা নিয়ে স্মৃতিকাতর হচ্ছি। এমন সময় প্রায় কাকভেজা হয়ে একটি মেয়ে হাজির। জিন্সের প্যান্ট আর শার্ট পরা। চোখে গাড়ো কাজল। গভীর মেঘের মাঝে যেনো অসম্ভব সুন্দর দুটি নক্ষত্র। চোখ দুটি দ্যুতি ছড়াচ্ছে না কান্নার মেঘ হয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে, ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। তার কোলে একটি বাচ্চা। ঝুমবৃষ্টির মাঝেও একফোঁটা বৃষ্টির পানি তাকে স্পর্শ করেনি। শাদা তোয়ালে দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর জড়ানো। মেয়েটি যতোটা নিজেকে উন্মুক্ত করেছে বাচ্চাটি ততোটা আবৃত্ত করেছে। যেনো বিপরীত দৃশ্য সৃষ্টি করার একটি অনন্য প্রয়াস। বাচ্চাটি তোয়ালের খোলশ থেকে হাত-পা উন্মুক্ত পৃথিবীর প্রতি ছুড়ে নিজেকে জানান দিচ্ছে।
মেয়েটি এ অবস্থায় আমার সমনে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকালাম।
- কাকে চাচ্ছেন।
- আজ সাহিত্য আসর হবে না।
- হ্যাঁ হ্যাঁ হবে। আপনি সাহিত্য সভায় আসছেন।
- হ্যাঁ।
- হাবিব, আপাকে একটি তোয়ালে দাও। আপনি আপনার শরীর মুছে আসুন। না হয় অসুস্থ হয়ে যাবেন। যান পাশের রুমে চলে যান।
মেয়েটি বাচ্চাটিকে নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলো। নিজেকে শুষ্ক করে ফিরে আসে।
- আপনি লেখক!
- না।
- কবিতা আবৃত্তি করেন!
- না।
- গান করেন!
- না।
- পাঠক। সাহিত্য সভায় ভালো পাঠক পাওয়াও দুরহ। সত্যি আজ খুব ভালো একটি দিন। এই বৃষ্টিতে একজন লেখক পাওয়া না গেলোও একজন পাঠক পাওয়া গেলো।
- না আমি পাঠক না।
- তাহলে!
- আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে এসেছি।
- বলুন কি কথা।
মেয়েটি চেয়ার টেনে আমার মুখমুখি বসলো। কোলের বাচ্চাটি টেবিলের উপর শুইয়ে দেয়। এবার বাচ্চার চেহরাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠলো। বাচ্চার বয়স ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। দশ এগারো মাস হবে। আবার একবছরের উপরেও হতে পারে। চোখ দুটি বিড়ালের বাচ্চার মতো। তার থেকে যেনো আলো বের হচ্ছে। চোখের দিকে তাকানোই দায়। চোখ অন্ধ করে দেয়া নীল আলো তার চোখে।
- হ্যাঁ, বলুন কি কথা। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলাম।
মেয়েটি মিলনায়তনের পিছনে তাকালো। দরজাটি বন্ধ না খোলা দেখার জন্য। এমন সময় হাবিব কফি নিয়ে আসে। সাথে গরম গরম সিংগারা। মেয়েটি হাবিবের দিকে তাকায়। যেনো সে এখান থেকে গেলেই কথা বলা শুরু করতে পারে।
হাবিবকে ইশারা করলাম। দরজাটি ভিজিয়ে দিয়ে হাবিব চলে গেলো।
- নিন শুরু করুন।
মেয়েটি মিলনায়তনটির চারদিকে ভালো করে দেখে। তারপর আমাকে দেখলো। সাথে টেবিলে শুয়ে দেয়া বাচ্চাটির দিকে। এবার সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
- সমস্যা আমাকে নিয়ে না। বাচ্চাটিকে নিয়ে।
- বাচ্চার সমস্যায় ডাক্তারের কাছে যান। একজন কবি কাছে কেনো। বুঝতে পারলাম না।
- আছে।
- কি সমস্যা।
- এই বাচ্চাটি আমার না। ওর বয়স কতো তাও বলতে পারবো না। বাচ্চাটিকে আমার মানুষের বাচ্চা মনে হয় না। কারণ আমি ওকে পেয়েছি আজ পনের দিন। এই পনের দিনে ওর কোনো হাসি বা কান্না শুনিনি। তীব্র ক্ষুধা পেলেও কেঁদেছে এমন দেখিনি। আমি তাকে দুই দিন না খাইয়ে রেখেছি। ক্ষুধায় সে কাতর হয়েছে। তার চোখে কোনো পানি নাই। সে যে আমার কাছে আছে এটাও কেউ টের পায়নি।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটির কথা শুনছি। আমি যেনো স্থীর মিনার হয়েগেছি। জীবনে এমন অতিপ্রাকৃত সময়ের মুখোমুখি আর হয়নি। নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
- বুঝলাম কিন্তু আমি কি করতে পারি।
মেয়েটি আমার প্রশ্ন খেয়ালই করলো না। নিজের কথা বলে যেতে থাকলো।
আমার নাম লুডিয়া। লুডিয়া রাঙসা। ধানমন্ডি থাকি। একটি ফ্ল্যাটে তিন জন। আমি ফিলোসফিতে পড়ে। একজন এমবিবিএস পড়ে, একজন ব্যাংকে জব করে। তিনজনই অবিবাহীত।
সেদিনটি ঠিক এমনই ছিলো। ঝুমবৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছিল ধানমন্ডি। প্রায় কুয়াশাচ্ছন্ন ছিলো চারদিক। জানালার গ্লাস দিয়ে বাইরে ঝাপসা দৃশ্য ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কারেন্ট চলে গেছে। দিনের বেলায় ঘরটি প্রায় অন্ধকার। আমি মোবাইলের লাইট জ¦ালিয়ে দিলাম। বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছি। এমন সময় দরজায় কে কেনো টোকা দিলো। বাইরে বের হলাম। তাকালাম। না কেউ না। অথচ পায়ের কাছে একটি ফুটফুটে শিশু খেলা করছে। আমার চোখে তা পড়লো না। দরজাটি লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবো এমন সময় চোখে পড়লো। দরজা লাগোয়া একটি বাচ্চা। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নীল চোখ। চোখ দুটি যেনো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মনের অজান্তেই ছেলেটিকে কোলে তুলে নিলাম।
ছেলেটিকে কোলে তুলে নিতেই নিজের ভেতর পরিবর্তন খেলায় করলাম। আমি কেমন মা হয়ে ওঠেছি। ছেলেটি আমার নাকে মুখে হাত বুলাচ্ছে। কচি হাতের স্পর্শ আমাকে মা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিচ্ছে। সে আমার বুকে হাত রাখে। তার মুখটি গুজে দিচ্ছে আমার বুকে ভেতর। আমার ভেতরে অন্য এক আমি জেগে ওঠতে থাকে। স্তন দুটি যেনো শিশুখাদ্যে ভরে ওঠে। আমি রুমের ভেতর চলে যাই। ছেলেটির মুখে স্তন দিতেই ঝমঝম কুপের পানির মতো বের হয়ে আসে দুধ। শব্দ করে সে দুধ খায়। শব্দটি কেমন অপরিচিত। দুধ খাওয়ার শব্দের মতো নয়। আমি শব্দটি বুঝার চেষ্টা করি। মামতামতুনা, মামতামতুনা। এর অর্থ কি আমি বুঝি না। আর সারাদিন সে কোনো কথা বলে না। হাসে না। কাঁদে না। শুধু দুধ খাওয়ার সময় মামতামতুনা, মামতামতুনা শব্দ করে।
এতোটুকু বলেই সে থামে। বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা পরিবেশেও সে ঘামছে। কথা যেনো আর বলতে পারছে না। আমি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেই। সে পানি খায়।
- আপনি ক্লান্ত। একটু রেস্ট নেন।
এবার সে কেমন বিচলিত হয়ে ওঠে।
- ও দুধ খাবে।
আমি বিস্ময়ভাবে লুডিয়ার দিকে তাকাই। আবার ছেলেটির দিকে তাকাই। ছেলেটির ভেতর কোনো ক্ষুধারভাব দেখি না। সে স্থির। আপন মনে খেলা করছে।
- কিভাবে বুঝলেন। তার ভেতরে ক্ষুধার লাগার ভাব তো দেখছি না।
- এটা আপনি বুঝবেন না। আমি বুঝি। আমার বুক ভারি হয়ে আসছে। এই দেখুন, বলেই সে তার শার্টের বুতাম খুলতে থাকে।
ছেলেটি পরম শান্তিতে দুধ খেতে থাকে। মামতামতুনা, মামতামতুনা শব্দ তুলে। দুধ খাওয়ানো শেষ হতেই ছেলেটিকে আবার টেবিলে শুয়ে দেয়। লুডিয়া আমার দিকে মুখ করে বসে।
- আমি আর একবার কফি খাবো।
- হ্যাঁ অবশ্যই।
হাবিব কফি নিয়ে আসে। লুডিয়া কফিতে চুমুক দেয়। নিজের চুলগুলো ছড়িয়ে দেয় পিঠের ওপর। এবার তার মুখে একটু হাসি হাসি ভাব। যেনো একটি ভার নেমে গেছে বুকের থেকে। নির্ভার জীবনের প্রশান্তি তার মুখের ওপর খেলে যাচ্ছে। আমি তার দিকে নজর দেই।
- আচ্ছা আমি আপনার কথা শুনছি। কিন্তু আমার কি করার আছে।
- আছে। সেই জন্যেই তো কাকভেজা হয়ে আপনার কাছে আসলাম। আপনি বিরক্ত হলে আমি চলে যেতে পারি।
- আরে না না। আপনি বলুন। আমি আপনার কথা শুনছি।
- আমি ছেলেটিকে লালন পালন করছি। আমার পাশের ফ্লাটমেটরা টের পায় নাই। কিন্তু এদানিং কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যদিও তারা প্রথম থেকেই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়। আমি তাদের কিছুই বলেনি। তারা বলছে আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যা আমিও টের পাই। এখন একটা প্রবলেম হচ্ছে।
- কি প্রবলেম!
- আমাদের ফ্লাট থেকে নাকি একটি সুদন্ধি ছড়াচ্ছে। এটা আমি প্রথম বিশ^াস করিনি। কিন্তু যখন অন্য ফ্লাটের বাসিন্দারাও বলল তখন অবিশ^াস করার উপায় রইলো না। আমি এখন কি করবো।
- কিসের সুগন্ধ!
- শিশুবাচ্চার।
- এটাতো কোনো সমস্যা নয়।
- না সমস্যা। আমরা তিনজন অবিবাহিত মেয়ের রুম থেকে শিশুবাচ্চার ঘ্রাণ। এটাই তো বিপদজনক সমস্যা।
- আপনার ঘরে বাচ্চা আছে অন্যেরা জানে না।
- না জানে না। আমি একটি বড় পুতুল এনেছি। ছেলে পুতুল। এটাকে নানা রঙের পোষাক পরাই। কেউ আসলে আমি পুতুলটিকে দেখাই। বলি এটি আমার ছেলে। বিয়ে হলে আমি প্রথম ছেলে চাই। তাকে লালন পালন করার ট্রেনিং নিচ্ছি। কেউ সন্দেহ করে না। আমি ফিলোসফির ছাত্রী। মনে করে দার্শনিকরা একটু পাগল হয়। এটার তার পাগলামীর অংশ। কিন্তু বাড়িওয়ালী এসে খুব খারাপভাবে মিন করলো। তার সন্দেহ এখানে সত্যি সত্যি কোনো বাচ্চা কাচ্চা আছে। বাড়িওয়ালী চলে যাওয়ার পর ছেলেটির চেহরার পরিবর্তন দেখি। অবতার ছবির বিড়ালের মতো তার গায়ের রঙ হয়েগেছে। নীল। চোখও নীল। সেখান থেকে যেনো ঠিকরে বের হচ্ছে নীল আলো। প্রচন্ড রাগেই যেনো সে নীল হয়েগেছে। আর মুখে গরগর করে শব্দ হচ্ছে মামতামতুনা, মামতামতুনা। আমি তাকে আদর করি। মাতৃ¯েœহের পরশে সে যেনো তার রঙ পাল্টাতে থাকে। এযেনো গিরগিটি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার রঙ পাল্টাতে পারে। আমি ভয় না পেয়ে আরো মাতৃপ্রতিম হয়ে ওঠি। যেনো সে আমারই অংশ। আমার ¯েœহে, আমার পরশে সে আমারই রূপ ধারন করে। আমি এর সমাধান চাই। আমি স্মীকৃতি চাই। আমার মাতৃত্বের স্মীকৃতি। আমার সন্তানের স্মীকৃতি।
- তাহলে আমি কি করতে পারি। আমি যেনো কিছুটা হাপিয়ে উঠেছি।
- আমি ছেলেটিকে সবার সামনে আনতে চাই। ও আমার সন্তান বলতে চাই।
- সমস্যা নেই। আপনি তা করতে পারেন।
- আছে। সমস্যা আছে। তার একটি নাম প্রয়োজন। নাম ছাড়া তো কাউকে পরিচিত করা যায় না। আপনি কবি সাহিত্যিক মানুষ। আপনারা গল্পে নায়কের সুন্দর সুন্দর নাম রাখেন। আমার সন্তানেরও একটি সুন্দর নাম দেন।
- আগামী কাল আসবেন আমি কয়েকটি নাম ঠিক করে রাখবো। যে নামটি আপনার পছন্দ হয়, সে নামটিই আপনার সন্তানের নাম।
- না এখনই চাই। কারণ আমি আর দেরি করতে পারবো না।
এমনভাবে তাগিত দিচ্ছে যেনো এ বিষয়টি সমাধান না হলে দুনিয়াই উল্টে যাবে।
- আচ্ছা বসেন দেখি কি নাম রাখা যায়। একটু চিন্তা করি।
- আচ্ছা আপনি চিন্তা করেন আমি একটু ওয়াসরুম থেকে আসি।
লুডিয়া মিলনায়তন থেকে বাইরে গেলে আমি ছেলেটির দিকে তাকাই। ছেলেটি শান্ত। আপন মনে খেলছে। তার নীল চোখ কোনো কথা বলে না। স্থির চাহনী। তার মুখের কোনো ভাবলেস নেই। নেই কোনো হাসি, নেই কোনো কান্না, নেই কোনো রাগ। আমি চিন্তা করি। কি রাখা যায়। ফ্রেস হয়ে সে মিলনায়তনে প্রবেশ করে। আমি তার দিকে তাকাই। চিন্তার ছাপ তার ভেতরেও নেই। মা আর সন্তান দুজনই চিন্তাহীন পৃথিবীর বাসিন্দা।
- কি নাম চিন্তা করেছেন।
- না, হ্যাঁ করেছি। আমার চিন্তাছেদক উত্তর।
- আচ্ছা বলেন। আমার সন্তানের নাম কি?
- মিকাইল।
- মিকাইল মানে মিকাইল ফেরেস্তা। এলজেল। বাহ সুন্দর নাম। আমার সন্তানওতো ইনজেল। নিশপাপ শিশু।
- হ্যাঁ। মিকাইল ফেরেস্তা বৃষ্টি উদ্ভিদ উৎপাদনের দায়িত্ব পালনকারী ফেরেস্তা। এই শিশু যেহেতু বৃষ্টির সময় আপনার কাছে এসেছে তাই তার নাম মিকাইল রাখলে ভালো হয়।
- হ্যাঁ, দারুন ব্যাখ্যা। আমার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমার নামের সাথে তার নামের মিল থাকলে ভালো হতো। আমি তার মা।
এমনভাবে মা উচ্চারণ করলো যেনো সে গর্ভধারিনী মা। আমি বললাম আপনার নামটি যেনো কি বলেছিলেন।
- লুডিয়া রাঙসা।
- তা হলে ওর নাম রাখা যায়। নাম রাখা যায়। মিকাইল লুইপা। আপনার নামের শুরুর অংশের সাথে মিল রেখে ওর নামের শেষ অংশ লুইপা। লুইপা কে জানেন।
না, না জানি না।
লুইপা একজন কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন কবি।
- ওয়াও দারুন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আজ তাহলে আসি। আমার অনেক আশা ছিলো আপনি আমার সন্তানের একটি দারুন নাম দেবেন। সত্যি আমার আশা পূর্ণ হলো। আমার সন্তানকে এখন নাম ধরে ডাকবো। মিকাইল। মিকাইল লুইপা।
এই কথা বলেই ছেলেটিকে কোলে তুলে নেয়। আর কোনো কথা না বলে ছেলেটিকে চুমু দিতে দিতে বের হয়ে যায়। লুডিয়া চলে যাওয়ার পর হাবিব মিলনায়তনে প্রবেশ করে।
- মামা আজ আর কেউ আসলো না। দুজনেই সাহিত্য সভা শেষ করলেন। চলেন এবার যাই।
আমি বললাম, আমাকে আর এক পেয়ালা কফি দাও। খেয়ে বের হই।
হাবিব কফি নিয়ে আসে। বাইরে তখনও বৃষ্টি। বৃষ্টির মতোই আমার চিন্তায় চুইয়ে পরছে অন্য এক চিন্তা। কোথায় যেনো হারিয়ে যায় আমার চিন্তা। বা আমি চিন্তা শূন্য শিশু হয়ে গেছি। কফি খাচ্ছি না কি খাচ্ছি বুঝতে পারছি না। ঠিক সেই সময়ে লুডিয়া আবার মিলনায়তনে প্রবেশ করে।
- বাইরে বৃষ্টি থামেনি। আরএকটু বসি। একটু কথাও আছে।
- হ্যাঁ অবশ্যই। বসুন!
লুডিয়া খুব তাজিম করে বসে। একটি দীর্ঘশ্বাস নেয়। এদিক ওদিন তাকায়। তারপর ঝটপট করে বলে
- বিবি মরিয়মকে চেনেন।
- কোন মরিয়ম।
Ñ বিবি মরিয়ম। জিসুর মা। মানে ঈসা নবীর মা। তিনি কুমারী মা ছিলেন। তাকে মানুষ যখন প্রশ্ন করতো তখন তিনি তার কোনো জবাব দিতেন না। শিশু ঈসা তার জবাব দিতেন।
হ্যাঁ।
মরিয়ম তার সন্তানকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। বুকে জড়িয়ে রাখতেন, পৃথিবীর সকল অনিষ্টতা থেকে যেনো তার সন্তান মুক্ত থাকে। আমিও কুমারী মা। কিন্তু এ সন্তান আমার গর্ভজাত সন্তান নয়। এন্জেল। এন্জেল একজন মা পেয়েছে। মানুষ হওয়ার জন্য। তার একজন বাবা প্রয়োজন। একজন আদর্শ বাবা। এটা আমার ঠিকানা। এই ঠিকানায় আমার সন্তান অপেক্ষা করবে তার বাবার জন্য।
কথাটি শেষ হতেই লুডিয়া ওঠে দাঁড়ায়। ছেলেকে কালে তুলে নেয়। হনহন করে বের হয়ে যেতে থাকে। মিকাইল আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। যেনো তার নীল চোখ থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে তারার আলো। আর একচিলতে হাসি দিয়ে বলতে থাকলো। মামতামতুনা, মামতামতুনা।
মলম বোরাকের খায়েস
আফসার নিজাম
তারপর সে সোজা হাঁটা শুরু করে। রাস্তার শেষ লেমপোস্টের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। খানিক এদিক ওদিকে তাকায়। পেন্টের চেইন খোলে। বসে যায়। ওয়াসার পানির থেকেও স্প্রিটে বের হয়ে আসে গরম পানি। শীতের শরীরে ছেকা পরে। উড়ে যায় বাস্প। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে বোরাক। নিজের পেচ্ছাব কি সুন্দর। এর আগে সে অনুভব করেনি। পেচ্ছাব এমন সুন্দর হয়। কিভাবে রাস্তার ঢাল বেয়ে নেমে যায়। কাজ শেষ হতেই আবার ওঠে যায়। হাঁটতে থাকে। তাকে রাতের মধ্যেই পৌঁছোতে হবে। অনেক দিন অপেক্ষা করেছে। আর অপেক্ষা করতে পারছে না। আপদটি দূর করতে হবে। এবার চূরান্ত করার পালা।
যখন সে এসেছে তখন থেকে শুরু। বোরাক পড়া লেখার জন্য দ্বীপাঞ্চল ছেড়ে এই শহরে এসেছে। নিজেকে সফল করতে সে সব করবে। যা করা দরকার। সে খোঁজতে থাকে। অবশেষে পেয়ে যায়। সেই মোক্ষম ফল। যার জন্য সে অপেক্ষা করেছে। কলেজের সিনিয়র ভাই। ছাত্র রাজনীতি করে। তার গোলগাল নাদুস নুদুস চেহরা দেখে ভাইয়ের পছন্দ হয়। তাকে রাজনীতির মধ্যে টেনে নেয়। বংশিয় খাসলত অনুযায়ী জিনিস পেয়ে যায়। ভিরে যায় রাজনীতিতে। বোরাক হাসি দিয়ে ওঠেÑ যার নীতি নাই তাই রাজনীতি। এটাই তো আমি চেয়েছিলাম। আমার বাবা খচ্চর ছিলো। আমি তার থেকেও বেশি খচ্চর হবো। বাবা শুধু বাটপারি করেছে। আমি করবো তারচেয়েও বেশি। হা হা হা।
বোরাক আজকাল বেশ ব্যাস্ত। রাজনীতির ময়দানে তার বেশ কদর। মারামারিতে বেশ হাত পাকিয়েছে। নিজের হাতে ককটেল বানায়। আবার ফুটিয়ে দেয় শত্রুর গায়। নিমিসেই উড়ে যায় আত্মা। বেশ। দেখে মজা লুটে। মানুষ তাকে ভয় পায়। এলাকায় বেশ নাম ডাক। দলের হয়ে চান্দাবাজি করে না। মানুষ তাকে ভালোবেসে টাকা দিয়ে যায়। ভালোবেসে না ভয়ে দিয়ে যায়। ঐ হলো। তার টাকার দরকার। সে যেভাবেই হোক পাচ্ছে।
বড়ভাই ছাত্র রাজনীতি থেতে বিদায় নেয়। বিয়ে করে। অনুসারী একজরে বোন। সবাই আনন্দ করে। বোরাকের আনন্দ হয় না। সচারাচর এসব নারীদের দেখা মেলে না। নেকাবে ঢাকা থাকে মুখ। চাঁদের আলো পৌঁছে না পুরুষের মনে। কিন্তু বিয়েবাড়িতে এই সুযোগ মিলে যায়। ভাইয়ের বউকে দেখে। বেশ সুন্দর। কলিজায় দাগা লাগার মতো সুন্দর। শরীরের ভেতর কেমন জ্বর ওঠে। ইচ্ছে করে এখনই উঠিয়ে নিয়ে যাই। বড়ভাইয়ের বউ। বেয়াদবী হবে। কিন্তু মন মানতে চায় না। বউয়ের চোখ তাকে চৌম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায়। চোখ দুটি যেনো সাগর। সেখানে বোরাক সাঁতার কাটে। ঠোঁট দুটি যেনো জোমজ পাহাড়। একটু মুচকি হাসিতেই উপত্যকার নিরবতা ভেঙে একঝাক পাখি উড়ে যায় বুকের ভেতর থেকে। না সহ্য হয় না। এখনি কিছু করতে হবে। বড়ভাইয়ে দিকে তাকায়। তার চোখে চোখ পরতেই অন্য কিছু হয়। না এখন না। সময় আছে।
বড়ভাই বিয়ে করেছ। দাওয়াত দেয়। নতুন বউয়ের হাতের রান্না। তার অনুসারিরা সবাই যায়। বোরাক না জাওয়ার ইরাদা করে। না যাবো না। গেলেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তু সাথিরা তাকে নিয়ে যায় জোর করে। ভাবি পর্দার আড়াল থেকে খাবার তদারকী করে। সবার আগ্রহ খাবার নিয়ে। বোরাকের সেদিকে খেয়াল নেই। সে পর্দার আড়ালে দেখতে চায়। হঠাৎ পর্দা নরে ওঠে। সবাই খাওয়া নিয়ে খোসগল্প করছে। বড়ভাইও খাওয়ায় মসগুল। একটি হাত বের হয়ে আসে। এই নেন পায়েস। কণ্ঠ যেনো কোকিলকেও হার মানায়। বোরাক হারিয়ে যায় তার কণ্ঠে একটি গান শোনার জন্য। ‘কতো যে তোমাকে লেগেছে ভালো, সেকথা তুমি যদি জানতে।’ বোরাক দ্রুত ওঠে যায়। ভাবির হাত থেকে পায়েস নেয়। কিযেনো হাতে লাগলো। এটা স্পর্শ না আগুন। আগুনে জ্বলে যায়। অঙ্গার হয়ে যায়। একপলক ভাবির আঙুল দেখে। আঙুল নয় আঙ্গুর। এমন সুন্দর হাত সে জীবনে দেখেনি। একি পরীর হাত। না না এটা হুর গ্লেমান এর হাত। আমি বেহেস্তের হুর চাই না। গ্লেমান চাই না। আমি তাকে চাই। সবার খাওয়া শেষ। বোরাক এখনও শেষ করেনি। সবাই তাড়া দেয়। বোরহাক প্রায় না খেয়েই শেষ করে।
সবাই আলোচনা করে। রাজনৈতিক আলোচনা। সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নিজেদের সামলে থাকতে হবে। কিছুদিন আড়ালে থেকে আবার বের হতে হবে। আমিও একটু দূরে থাকতে চাই। কখন কি হয়। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। বড়ভাইয়ের নির্দেশ সবাই মনোযোগ দিয়ে শোনে। বোরহাক সুযোগ খোঁজে। সময় পরিবর্তন হয়েছে। এবার নিজেকেও পরিবর্তন করতে হবে। আমার অর্থ পাওয়ার দরকার ছিলো তাতো পাচ্ছি। আর রিক্স নিয়ে কি হবে। সে প্রস্তাব রাখে। ভাই আমি সংস্কৃতি করি। গান কবিতা আমার ভালো লাগে। আমি সেখানে কাজ করতে চাই। বড়ভাই সায় দেয়।
বোরাক বেশ খুশি। পরিবর্তনের হাওয়ায় সে বেঁচে গেছে। এবার সে নিজেকে পরিবর্তন করেছে। সে কবি, সে শিল্পী, সে আবৃত্তিকার, সে সংগঠক। মারামারিতে সে নেই। ভালো ছেলে। সংস্কৃতি করে। বোরাক ভাবছিলো এখানে টাকা নেই। কিন্তু টাকা আছে। ধরতে পারলেই হলো। বাবার কথা মনে হয়। সে যেখানেই গেছে সেখানেই টাকা দেখেছে। বাবার অসিয়তটা তার মনে পড়ে ‘গুয়ের মধ্যেও যদি পয়সা দেখো, তুলে আনো। পানিতে ধুয়ে ফেলো দেখবা চকচক করতাছে।’ তিনি সত্যি কথাই বলেছে। অনুষ্ঠানে কথা বলে মানুষের থেকে বেশ অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়। পঞ্চাশ হাজার টাকা উঠিয়ে বিশ হাজার টাকা খরচ করে। ত্রিশ হাজার টাকার ভাউটার দিলেই হয়ে যায়। বাহ বাহ দারুন কাজ। কে বলে সংস্কৃতিতে টাকা নাই। আমিতো বেশ টাকা কামাই করছি। খুশিতে বোরাক নাচতে থাকে।
বড়ভাইয়ের নামে বেশ কয়েকটা মামলা হয়েছে। বাড়িতে আসে মাঝে মধ্যে। পালিয়ে পালিয়ে রাজনীতি করে। বোরাককে দায়িত্ব দেয় তার বাড়ির দেখভাল করার জন্য। সংস্কৃতির মানুষ। কেউ কিছু বলবে না। রাজনীতি সে আর করে না। বোরাক তো এই সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সে আজকাল ভাইয়ের পরিবর্তে ভাই। সে বাড়ির কর্তা। ভাবির সাথে পর্দার আড়ালে কথা হয়। তার কলিজায়- পাউরুটি ফুলে ওঠে। কখন দেখবে সেই চোখ। যে চোখে সে প্রতিরাতে সাঁতার কাটে। কখন দেখবে সেই হুরপরী। কিন্তু হয় না। প্রথম প্রথম দূরত্ব মেইটেন করে। আসতে আসতে সহজ হয়ে আছে। নেকাব দিয়ে স্বশরীরে হাজির হয়। কথা হয়। চোখে চোখ রাখে। চোখ কথা হয়। একদিন নেকাব ছাড়াই দেখা হয়। বোরাক অজ্ঞান হয়ে যাবার অবস্থা। ভাবি জিজ্ঞাসা করে শরীর খারাপ। না ভাবি ঠিক আছে। কিন্তু ভাবি বুঝতে পারে। তার কপালে হাত দেয়। সে গলে পরে। না আমার তাকে লাগবেই।
বোরাক এবার আসল চাল চালে। শত্রুপক্ষের কাছে হাত মেলায়। মামলার উপর মামলা হয়। বড়ভাই এবার শহর ছাড়ার অবস্থা। কিন্তু বড়ভাই ছেড়ে দেয়ার পাবলিক নয়। সে একটা খেল দেখাতে চায়। সবাইকে নিয়ে বসে। বোরাকও হাজির হয়। পরিকল্পনা হয়। এবার আমাদের জয় হতেই হবে। হল থেকে তাদের বের করে দখল করতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতি চলতে থাকে। বোরাকও প্রস্তুতি নেয়। তাকে এবার জয়ী হতেই হবে। অনেকদিন সে ধর্য ধরেছে। গোপনে গোপনে আহরণ করেছ মধু। এবার চাকটিই তার হতে হবে। রাতে অন্ধকারে সে হাঁটতে থাকে। আপদটি দূর করতে হবে। এবার চুরান্ত করার পালা।
সে পৌঁছে যায়। শত্রুপক্ষের ঘাটিতে আনন্দ চলছে। বোরাককে দেখে সবাই বিস্মিত হয়। শয়তান মলমটা আবার আসলো কোথা থেকে। ওকে শেষ করে দে। রমিজ বাধা দেয়। কিরে মলম তুই এইখানে কেন! রমিজ দা একটা কথাছিলো। খুব জরুরী কথা। বল বল কি! বড়ভাই প্রস্তুতি নিতাছে। আপনাদের মঙ্গলবার রাইতে এটাক করবো। রমিজ তারে রুমে নিয়ে যায়। বড়ভাইদের প্রস্তুতির পরিকল্পনা সব শুনে নেয়। দেখরে মলম তোরে কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না। যদি কোনো বাটপারি করছ আগে তোরে খামু। বোরাক বলে মায়ের কসম দাদা একরত্তিও মিথ্যা বলছি না।
না না তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে একজনও ভালা মানুষ নাই। আমিতো তোদের পাশের গ্রামের। আমি সব জানি।
দাদা আমিতো এই জন্যই আপনার কাছে আসছি। আপনি আমার দ্বীপের মানুষ। বড়ভাইতো এই দেশের। ওরে আমি বিশ্বাস করি না। শালারে শেষ করে দেন।
মঙ্গলবার রাতে পরিকল্পনা মাফিক অপারেশন শুরু হয়। বোরাক সঙ্গে আসে। দূর থেকে ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু কিছুতেই রমিজরা পেরে উঠে না। রাতের আঁধারকে ভেদ করে বড়ভাই জয়ী হয়ে যাচ্ছে। সূর্য উঠছে বড়ভাইয়ে পক্ষে। না না তা হতে পারে না। বড়ভাই বোরাককে কাছে ডাকে। আর একটা রুম পার হলেই। সব হল মুক্ত। বোরাক তো তা চায় না। বড়ভাই থাকুক আর তারসাথে সূর্য উঠুক। বড়ভাই বেঁচে থাকলে তো তার মৃত্যু। ওকে ছাড়া তো আমার চলবে না। বড়ভাই আবার বাড়িতে নিয়মিত থাকবে। কুঁড়িতেই মরে যাবে প্রেমের গোলাপ। তা হতে পারে না। যে করোই হোক আজ আমাকে বিজয়ী হতে হবে। এবার আমাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। অন্ধাকারের ভিতরেই কাজটি শেষ করতে হবে। বোরাক চিৎকার করেÑ বড়ভাই রমিজ বলেই রামদা দিয়ে কোপ মারে। অন্ধকারে সিৎকার করে বেরিয়ে আসে রক্ত। লাল রক্ত। ভিজে যায় বোরাকের শরীর। সূর্য উঠে। সকাল হয়। রমিজরা পালিয়ে গেছে। বড়ভাইদের দখলে হল। শুধু বড়ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে হলের কোণায়। পাশে বসে আছে বোরাক।
লাশ নিয়ে মিছিল হয়। বোরাক মিছিল ধরেÑ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই। রমিজের ফাঁসি চাই। শহরের চায়ের দোকানে নিরবতা ভাঙে। খুন নিয়ে আলোচনা হয়। বড়ভাইয়ের যুবতী বউয়ের কি হবে। নতুন বউয়ের হাতের মেহদীর রঙই মুছেনি। বিধবা হলো মেয়েটি। সবাই দারুন উদ্বিগ্ন। বোরাক এগিয়ে আসে। আমিই দায়িত্ব নেবো। একজন শহীদের স্ত্রীকে আমি বিয়ে করবো। আমি সমাজকে দেখিয়ে দেবো কিভাবে একজন বিধবাকে, একজন শহীদের স্ত্রীকে সম্মান দিতে হয়। আমি শহীদের স্ত্রীকে সম্মান দেবো, আমি বিয়ে করবো।
মানুষের মুখে প্রশংসার স্তুতি। আজ বোরহাকের বিয়ে। বাসরঘরে পূর্ণিমার চাঁদ উঠে। বাইরে অমাবস্যা। আঁধার গিয়ে খায় তাবদ দুনিয়া। দূরের কোনো ঘর থেকে বাচ্চার কান্না ভেসে আসে। রাত গভীর হয়। বেদনার রঙ খসে খসে সুবেহ সাদেক হয়। আলো ফুটতে থাকে। বোরাক বাসর ছেড়ে ওঠে আসে। সূর্য উঠে। বউয়ের দিকে চেয়ে সে হাসে। সূর্য উঠেছে। বিজয়ের সূর্য।
কোন মন্তব্য নেই