সাহিত্যিক আবদুল হকের কাছে লেখা ফররুখ আহমদের চিঠি-২
বন্ধুবরেষু,
বহুদিন পর আপনার উৎসাহব্যঞ্জক চিঠি পেয়ে উল্লসিত হয়েছি। কারণ আমার অবস্থা বর্তমানে সেই রূপকথার শেয়ালের মত যাকে প্রহারান্তে আধমরা অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল । অবশ্য শেয়ালের সঙ্গে আমার পার্থক্য এইটুকু যে, শেয়ালের অন্নচিন্তা ও বস্ত্র সমস্যা ছিলনা। আমার এ দুটো তো আছেই তার উপর আছে পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণ চিন্তা। ঐ চিন্তাতেই বিশেষ বিব্রত এবং প্রয়োজন মত চেষ্টিত ছিলাম বলে সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হয়েছিল। আপনি যে আত্মবিলোপের কথা লিখেছেন তা অনেকাংশে ভুল, কারণ আত্মরক্ষার সংগ্রামে আমাকে কালাতিপাত করতে হচ্ছে।
লেখার দিক থেকে অবশ্য এই কয় মাস একেবারে ফাঁকা যায়নি। ক’দিনের মধ্যেই অনেকগুলো ঝধঃরৎব, ব্যঙ্গ কবিতা [ধনতন্ত্র ও অন্যান্য সামাজিক বিস্ফোটকের পক্ষে যা মূল্যবান ওষুধ হতে পারে] এবং দুই চারটি সামান্য সিরিয়াস কবিতা লিখেছি। কাগজের অভাবে এতদিন প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এবার প্রকাশ করার সুযোগ এসেছে। ট্যাকের অসচ্ছলতার দরুন আমাকে বাধ্য হয়ে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে বন্ধুুবান্ধবদের সঙ্গে পত্রালাপ অথবা সংশ্রব বর্জন করতে হয়েছিল। [কারণ পোস্টকার্ড কেনার মত পয়সা প্রচুর সংখ্যায় হামেসাই থাকতো না।] ঐ একই কারণে আপনাকে একখানা অর্ধ-ব্যবহৃত কাগজের ক্ষুদ্র বর্জাইস অক্ষরে চিঠি লিখেছি, কারণ পরিষ্কার কাগজ আমার তহবিলে নেই।
যাই হোক, কলকাতা যাওয়ার পাথেয় জোগাড় করেছি, কয়েকদিন আহারের বন্দোবস্ত করতে পারলেই আমি অনতিবিলম্বে কলকাতা অভিমুখে পদচালনা করবো। হয়তো এ চিঠি পাওয়ার কয়েকদিন পরেই আপনারা এ মহাকবির মুখচন্দ্র [দাঁড়ি আবৃত] দর্শন করে কৃতার্থ হবেন। এই উপলক্ষে প্রাথমিক আয়োজন প্রায় শেষ করে ফেলেছি। নগদ আট আনা খরচ করে জুতো সেলাই এবং কয়েকটি পট্টি সংযোগ করা হয়েছে। এমনকি একটি নতুন কামিজের জোগাড়ও হয়ে যেতে পারে। পুরনো শীত বস্ত্রগুলো বর্তমানে খুব কাজে লাগছে। ... অতএব যতদিন ধনতন্ত্রের কবর খোঁড়া না হচ্ছে ততদিন বাধ্য হয়ে বলতে হবে ধনতন্ত্র জিন্দাবাদ।
-প্রীতিমুগ্ধ
ফররুখ আহমদ
দুর্গাপুর, ৫-১-৪৮
বহুদিন পর আপনার উৎসাহব্যঞ্জক চিঠি পেয়ে উল্লসিত হয়েছি। কারণ আমার অবস্থা বর্তমানে সেই রূপকথার শেয়ালের মত যাকে প্রহারান্তে আধমরা অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল । অবশ্য শেয়ালের সঙ্গে আমার পার্থক্য এইটুকু যে, শেয়ালের অন্নচিন্তা ও বস্ত্র সমস্যা ছিলনা। আমার এ দুটো তো আছেই তার উপর আছে পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণ চিন্তা। ঐ চিন্তাতেই বিশেষ বিব্রত এবং প্রয়োজন মত চেষ্টিত ছিলাম বলে সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হয়েছিল। আপনি যে আত্মবিলোপের কথা লিখেছেন তা অনেকাংশে ভুল, কারণ আত্মরক্ষার সংগ্রামে আমাকে কালাতিপাত করতে হচ্ছে।
লেখার দিক থেকে অবশ্য এই কয় মাস একেবারে ফাঁকা যায়নি। ক’দিনের মধ্যেই অনেকগুলো ঝধঃরৎব, ব্যঙ্গ কবিতা [ধনতন্ত্র ও অন্যান্য সামাজিক বিস্ফোটকের পক্ষে যা মূল্যবান ওষুধ হতে পারে] এবং দুই চারটি সামান্য সিরিয়াস কবিতা লিখেছি। কাগজের অভাবে এতদিন প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এবার প্রকাশ করার সুযোগ এসেছে। ট্যাকের অসচ্ছলতার দরুন আমাকে বাধ্য হয়ে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে বন্ধুুবান্ধবদের সঙ্গে পত্রালাপ অথবা সংশ্রব বর্জন করতে হয়েছিল। [কারণ পোস্টকার্ড কেনার মত পয়সা প্রচুর সংখ্যায় হামেসাই থাকতো না।] ঐ একই কারণে আপনাকে একখানা অর্ধ-ব্যবহৃত কাগজের ক্ষুদ্র বর্জাইস অক্ষরে চিঠি লিখেছি, কারণ পরিষ্কার কাগজ আমার তহবিলে নেই।
যাই হোক, কলকাতা যাওয়ার পাথেয় জোগাড় করেছি, কয়েকদিন আহারের বন্দোবস্ত করতে পারলেই আমি অনতিবিলম্বে কলকাতা অভিমুখে পদচালনা করবো। হয়তো এ চিঠি পাওয়ার কয়েকদিন পরেই আপনারা এ মহাকবির মুখচন্দ্র [দাঁড়ি আবৃত] দর্শন করে কৃতার্থ হবেন। এই উপলক্ষে প্রাথমিক আয়োজন প্রায় শেষ করে ফেলেছি। নগদ আট আনা খরচ করে জুতো সেলাই এবং কয়েকটি পট্টি সংযোগ করা হয়েছে। এমনকি একটি নতুন কামিজের জোগাড়ও হয়ে যেতে পারে। পুরনো শীত বস্ত্রগুলো বর্তমানে খুব কাজে লাগছে। ... অতএব যতদিন ধনতন্ত্রের কবর খোঁড়া না হচ্ছে ততদিন বাধ্য হয়ে বলতে হবে ধনতন্ত্র জিন্দাবাদ।
-প্রীতিমুগ্ধ
ফররুখ আহমদ
দুর্গাপুর, ৫-১-৪৮
কোন মন্তব্য নেই