ছড়াকারদের সাহসী উচ্চারণ পরিবেশবাদী, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে ভূমিকা পালন করেছে_মনসুর আজিজ
ছড়াকারদের সাহসী উচ্চারণ পরিবেশবাদী, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে ভূমিকা পালন করেছে
মনসুর আজিজ
মনসুর আজিজ মূলত কবি। জন্ম চাঁদপুর জেলার হাইমচরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে। নীলকমল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে এসএসসি আর সাভার কলেজ থেকে বাণিজ্যে এইচএসসি পাস করেন প্রথম বিভাগে। ব্যবস্থাপনায় কৃতীত্বের সাথে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি থেকে করেছেন এমবিএ। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে মনসুর আজিজ দ্বিতীয়। বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক মা আনোয়ারা বেগম। স্ত্রী নিলুফার আজিজ এবং দুই ছেলে ইউশা ও রাওহাকে নিয়ে তার কবিতার সংসার। সাংবাদিকতা আর শিক্ষকতার শিকল ছিঁড়ে বর্তমানে উর্ধতন মূখ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুরে।
লেখালেখির শুরু সাতাশিতে। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। দেশের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক, মাসিক, সাহিত্যপত্রিকা ও লিটল ম্যাগে লিখে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা দেশে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার সাথেই তার বসবাস, নিরন্তর পথচলা। তবে সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তার বিচরণ কম নয়। লিখছেন ছড়া, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ। অনুবাদও করছেন সমানতালে। এছাড়া একজন সংগঠন হিসেবেও তিনি তার দক্ষতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। রাইটার্স অব বাংলাদেশ ও সাভার সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চাঁদপুর রাইটার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘আড্ডাপত্র’।
প্রকাশিত গ্রন্থ ষোলোটি। তারমধ্যে কাব্যগ্রন্থ ছয়টি; অতলান্ত নীলচোখ-২০০২, অনন্ত আকাশের জ্যোতির্ময় নক্ষত্র- ২০০৭, মনুষ্যত্বের ল্যাম্পপোস্ট-২০০৯; শব্দের বেনারসি-২০১১; জোড়াপাখি ফুলের রুমাল-২০১২, জল ও জোয়ারের কাব্য-২০১৪, কিশোরকবিতাগ্রন্থ তিনটি; নীল গালিচার স্বপ্ন- ২০০৭, হৃদয়পুরের রাজা- ২০০৮, নতুন ভোরে হীরের কুচি-২০১১, ছড়াগ্রন্থ তিনটি; দুর্দিনের ছড়া-২০০৯, মেঘের খোপায় পালক ভরে-২০০৯; সবুজ পাতা আঁকতে জানি-২০১৪, কিশোর উপন্যাস একটি; ভেলায় চড়ে সারাবেলা- ২০০৮, কিশোর গল্প একটি; রাজকুমারী-২০১৪ ও উপন্যাস একটি- জীবনবেলার বিকিকিনি-২০১৩। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কটি পান্ডুলিপি। তিনি সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র লেখক সম্বর্ধনা ২০০৮ ও ম্যাজিক লণ্ঠন সম্বর্ধনা ২০০৮ লাভ করেন।
আফসার নিজাম: ছড়াকে সময়ের সমান্তরাল বলা হয়। এখন প্রশ্ন হলো সময়কে ছড়া ধারণ করে না ছড়া সময়কে ধারণ করে?
মনসুর আজিজ: ধন্যবাদ নিব পরিবারকে ছড়া নিয়ে আমার সাথে কিছু কথা বলার সুযোগ করে দেবার জন্য। পাঠকদেরকে ছড়া শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দুটো কথাই ঠিক। আমরা যখন পড়ছি- ‘ধান ফুরোল পান ফুরোলো খাজনার উপায় কি/ আর কটা দিন সবুর করো/ রসুন বুনেছি’ তখন কিন্তু একটা সময়ের সমাজচিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আবার যখন পড়ছি- কর্ণফুলির হাঁড়িতে ব্যাঙ ডাকে আজকাল’ (আল মাহমুদ) ‘রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা’ (আবু সালেহ) এটা দেবো ওটা দেবো / চন্দন ফোটা দেবো/ এতটুকু ঝরবে না রক্ত বাঁশ দেবো শক্ত (সাজজাদ হোসাইন খান) তখন কিন্তু আমাদের চোখের সামনে এক একটা সময়ের সমাজচিত্র ভেসে ওঠে। মানুষের সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ভেসে ওঠে। এখানে সময়কে ছড়া ধারণ করেছে আবার ছড়াও সময়কে ধারণ করেছে।
আফসার নিজাম: ছড়াকে অসমান্তরাল বিন্যাসে বিন্যাস করার একটি প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। অসমান্তরাল ছড়া কি তার রূপ যৌবন হারিয়ে ফেলে না? আপনার মতামত কি?
মনসুর আজিজ: ছড়ার বিন্যাস একসময় পয়ার ছিল। এরপর এর বিন্যাস সমান্তরাল অসমান্তরাল নানা দিকে বাঁক নিয়েছে। ছড়ার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এসেছে। আপনি যদি প্রথম লাইনে চারমাত্রা দেন আবার দ্বিতীয় লাইনে দশ মাত্রা দেন আবার তৃতীয় লাইনে এসে ছয় মাত্রা আর চতুর্থ লাইনে এসে দুইমাত্রা করেন তাহলেও এটা অসমান্তরাল হবে। কিন্তু পাঠক পথ চলতে গেলে নুড়িরর মিছিলে বারবার হোচট খেয়ে পড়ে যাবে। অসমান্তরাল বিন্যাস যদি একটি কাঠামোর ভিতর দিয়ে করা যায় তাহলে পাঠক চলার পথে একটা ছন্দময় আনন্দ পাবে। তাতে সমান্তরাল বিন্যাসের একঘেয়েমি থেকে পাঠকমন ছড়ার নতুন স্বাদ পেতে পারে। অসমান্তরাল বিন্যাসে কাজী নজরুল ইসলামই সবচেয়ে বেশি নতুনত্ব এনেছেন। এখন তরুনদের ভিতর এর প্রবণতা বেশি চোখে পড়ে। আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি বিমোহিত হই। আবার অনেকের লেখায় বিরুক্তি এসে যায়। মূল কথা হল আপনি সমান্তরাল লিখলেন না অসমান্তরাল লিখলেন সেটা বড় কথা নয়, লেখাটায় লেখার গুণ, ছড়ার গুণ কতটা ধারণ করতে পেরেছে সেটাই মূল কথা। অসমান্তরাল ছড়া তার রূপ যৌবন হারাতে যাবে কেন? কিশোরী তো তার রূপ হারাতে পারে না। অসমান্তরাল বিন্যাসটা আমার কাছে চপল চঞ্চল কিশোরীর মতোই মনে হয়।
আফসার নিজাম: সময়ের প্রতিটি বাঁকে ছড়া রাখে তার স্বাক্ষর। বর্তমানে যে জটিল সময় আমরা আবর্তন করছি সেখানে ছড়া কিরূপ স্বাক্ষর রাখছে?
মনসুর আজিজ: চমৎকার স্বাক্ষর রাখছে। অতীতের তুলনায় ছড়াকারগণ এখন অনেক বেশি সাহসী। আগের তুলনায় ছড়াকারগণ অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন। আগের ছড়াকাররা পশুপাখি ও নানা প্রতীক ব্যবহার করে তাদের মনের আকুতি ছড়ায় প্রকাশ করতেন। এখনকার বক্তব্য অনেক সরাসরি। বর্তমান জটিল সময়ে সরকারের সরাসরি সমালোচলা করেও ছড়া লেখা হচ্ছে, মানুষের দুর্ভোগ, দুর্দশা, সামাজিক অবক্ষয় সরাসরি উঠে আসছে ছড়ায়। এমনকি সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, সামন্তবাদ, যুদ্ধ, পরিবেশ সংরক্ষন প্রত্যেকটি জটিল মূহুর্তেই ছড়াকারগণ সোচ্চার। একটি জরুরি সরকারের অধীনে আমরা দুটি বছর পার করেছি । সেখানেও ছড়াকারদের সাহসী পঙতি সময়ের স্বাক্ষর রেখেছে। টিপাইবাঁধের বিরুদ্ধে ছড়াকারদের সাহসী উচ্চারণ পরিবেশবাদী, রাজনৈতিক -সামাজিক সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে ভূমিকা পালন করেছে।
আফসার নিজাম: বর্তমানের ছড়াকাররা কিশোরকবিতা এবং ছড়াকবিতার যে সুক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান তা স্বীকার করছে না। এতে কি দুটি বিষয়ের বিলুপ্তি ঘটে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে, না ছড়া কবিতার মধ্যে একটি জটিলতা সৃষ্টি করবে?
মনসুর আজিজ: ঢালাওভাবে সবার ক্ষেত্রে এটা বলা ঠিক নয়। কিশোরকবিতা আর ছড়াকবিতা এক নয়। একটা সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। অনেকে তো ছড়াকেও কবিতা বলতে চান। ছড়াও এক ধরণের কবিতা। কবিতার গুণ ছড়ার ভিতর থাকলে তা কবিতাও হতে পারে। আবার অনেক কবিতায় ছড়ার গুণও লক্ষ্য করা যায়। তাই বলে কিন্তু কবিতা ছড়া হয়ে যায় না বা ছড়া কবিতা হয়ে যায় না। কিশোরকবিতার কিছু চারিত্র্য আছে। কিশোরবেলার বিস্তৃত, সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম, অনুসন্ধিৎসু বিষয়আশয়, জানা অজানা নানা বিষয় উঁকি দেয় কিশোর কবিতার জানালায়। যে কবিতা ছড়ার ঢঙে লেখা হয় তা ছড়া কবিতা। একটি বক্তব্যের প্রকাশ এতে থাকে। কিশোর কবিতা কিশোর মনের ভাবনাকাশে টোকা দেয়। কখনো কিছু বলে, কখনো মুখটিপে হেসে চলে যায়। কিন্তু ছড়া কবিতায় এই আলো আঁধারী চলে না। মনে হয় না দুটি বিষয়ের বিলুপ্তি ঘটবে। এগিয়ে যাবে আরো পরিশীলিত রূপে। আগে তো এই দুটো বিষয় নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণও দেখা যায়নি। কেউ যদি দুটো বিষয়কে একত্র করে কবিতা লেখে; যাতে কিছুটা কবিতা থাকবে আবার কিশোরকবিতার লুকোচুরি থাকবে। তাতে করে একটি কবিতা হবেÑ সেটাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন।
আফসার নিজাম: একটা সময় ছিল যখন ননসেন্স ছড়া লেখা হতো। বর্তমানে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বর্তমানে আবার কিছু ছড়ায় ননসেন্স অবস্থায়ই বিরাজ করছে। এতে করে কি ছড়া যে গণসাহিত্য তা অস্বীকার করা নয়।
মনসুর আজিজ: একসময় ননসেন্স ছড়া লেখা হতো । এখনও হয়। ভবিষ্যতেও হবে। ননসেন্স ভার্স সাধারণত শিুশুতোষ হয়ে থাকে। শিশুরদের আনন্দ দেয়াটাই এখানে মূখ্য। অর্থ মূখ্য নয়। গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে বলে আমি মনে করি না। গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা কমেটে বটে। কেউ ননসেন্স ছড়া লিখলেই যে ছড়াকে গণসাহিত্য থেকে অস্বীকার করা হবে, এটা ঠিক নয়। আর গণসাহিত্য তো শিশুদের বিষয় নয়। তাহলে ছড়াকে গণসাহিত্য বললে শিশুসাহিত্যকেও তো স্বীকার করা হয় না। আমি মনে করি ছড়া সামগ্রিক সাহিত্য। তবে ছড়ার প্রধান চারিত্র গণমুখিতা।
আফসার নিজাম: বর্তমান সাহিত্যে ছড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প মাধ্যম। কিন্তু ছড়াকারদের সে তুলনায় গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে না, কেনো?
মনসুর আজিজ: ছড়া নিঃশন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প মাধ্যম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সাহিত্য ক্ষেত্রে ছড়াকাররা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। যার কারণে অনেকেই ট্র্যাক পরিবর্তন করেন। শুধু ছড়াকার হিসেবে পরিচিত এরকম লেখকের সংখ্যা হাতে গোনা। ‘ছড়া একটা বিষয় হলো না কি’Ñ এরকম একটা নাক সিঁটকানো ভাব থেকেই ছড়াকারদের গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে না। এজন্য ছড়াকাররাও কম দায়ী নয়। একটা কথা আছে আদায় করে নিতে হয়। কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ বের হয় । কবিতার আলোচনা সমালোচনা সাহিত্য রয়েছে। কিন্তু ছড়ার নেই। রবীন্দ্র নজরুল জীবনানন্দের কবিতাকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা করা হয়েছে। কিন্তু ছড়া! সুকুমার রায়ের ছড়ার শিল্পগুন, অন্নদার ছড়ার বিষয়বৈচিত্র্যÑ এরকম কোন প্রবন্ধ বা গবেষনা কি আমাদের হাতে আছে? নেই। একটি কবিতার বই বের হলে তার গ্রন্থালোচনা হয়। কবিরা করেন। কিন্তু ছড়া! ছড়ার বইয়ের তীক্ষè আলোচনা সমালোচনা হয়? হয় না। ছড়াকারদের গদ্য রচনায় এগিয়ে আসতে হবে। সাহিত্য পাতায় ছড়ার জন্য জায়গা করে নিতে হবে। এটি একটি সামষ্টিক উদ্যোগ। কোন ব্যক্তির একার পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। সরকারও তার দায় এড়াতে পারেন না। ছড়াকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয়। বাংলা একাডেমীসহ অন্যান্য সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি হাউজিং কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে যে টাকা খরচ হয় তা বিয়ে পঞ্চাশটি ছড়ার বই বের হতে পারে। পাঁচ জন ছড়াকারকে সম্মাননা দেয়া যায়। সামাজিক দায়িত্ব ছড়াকার এড়িয়ে যান না। তাদেরও যাওয়া উচিৎ নয়।
আফসার নিজাম: ছড়াকে ছড়িয়ে দিতে কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করা উচিৎ?
মনসুর আজিজ: সংগঠন, সংগঠক, পাঠাগার বাড়াতে হবে। একটা সংগঠনে ১০ জন সংগঠক, ২০ জন পাঠক, ৫০টি বই থাকলে ৮৫ হাজার গ্রামে কতগুলো বই থাকবে? নিজেরাই শুধু নয় পুরো দেশ বদলে যাবে। তারা শুধু ছড়া চর্চা করবে না। সামাজিক উন্নয়নেও কাজ করবে। আগে গ্রামে ক্লাব থাকতো । খেলাধুলা, বইপাঠ দেয়ালিকা প্রকাশ করা হতো। আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ক্লাবের দেয়ালিকায়। এখনও ক্লাব হয়। ভিডিও ক্লাব। হিন্দি গান দেখা হয়, শোনা হয়। হিন্দি ছবি দেখা হয় রাত জেগে। গ্রাম পর্যন্ত পোঁছে গেছে ডিশ লাইন। হিন্দি আমাদের সংস্কৃতির প্রধান শত্র“। গানের বাংলায়, কবিতায় বাংলায়, ছড়ায় বাংলায় তরুনদের ফিরিয়ে আনতে হবে। একজন কবি হিসেবে একজন ছড়াকার হিসেবে হৃদয়টা ছিঁড়ে যায় যখন দেখি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবসেও আমাদের আগামী প্রজন্ম হিন্দি গান গেয়ে নেচে নেচে অনন্দ করে। কিছু আবেগের কথা বলে ফেললাম। এ ব্যাপারে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে সরকারকে। আমরা তার সাথে আছি। ছড়াকারদের একত্রে কাজ করতে হবে। বেশি বেশি লিটল ম্যাগ হওয়া দরকার। সাহিত্য পাতায় ছড়াকে স্থান দিতে হবে। ছড়া নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। ছড়ার আর্কাইভ দরকার। লোকছড়া সংগ্রহ করে আর্কাইভে সংরক্ষণ করা এতে সহজ হবে। পান্ডুলিপিও সংরক্ষণ করা যাবে। গণমুখি ছড়ার কনসার্ট করা যেতে পারে। এতে ছড়া জনপ্রিয় হবে। ছড়া চর্চা বাড়াতে হবে; পরচর্চা-পরনিন্দা-প্রতিহিংসা কমাতে হবে । এটা শুধু ছড়ার নয় ছড়াকারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে সিডরের মতো।
আফসার নিজাম: দুর্দিনের ছড়া সম্পর্কে বলুন। বইটি সারা দেশেই বেশ আলোড়ন তুলেছে। আপনি কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?
মনসুর আজিজ: নিজের ছড়া সম্পর্কে আর কী বলবো। আমি দুর্দিনের কিছু খন্ডচিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছি। একুশে বই মেলা ২০০৯ এ সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স থেকে বইটি প্রকাশিত হবার পর মেলাতেই অনেকগুলো চ্যানেল সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক পত্রিকাতে রিভিউ হয়েছে। চিনি না জানি না এমন অনেক সমালোচকও সমালোচনা লিখেছেন। আমি ভাবতেও পারিনি। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। মেলার শেষদিন সিদ্দিকীয়ার স্টলে দুর্দিনের ছড়ার কোন কপি ছিল না- এটি নিঃশন্দেহে একটি আনন্দের দিক। প্রথম দশকের কয়েকজন ছড়াকার আমাকে বলেছে মনসুর আজিজ ভাই আমরা গতকাল রাত চারটা পর্যন্ত দুর্দিনের ছড়া পড়েছি। পড়েছি আর তিনজনে মিলে মার্কিং করেছি। ওদের একজন এখন মেডিকেলের ছাত্র। এই মেধাবী ছড়াকারের দল রাত জেগে আমার এই ছোট্ট বইটি নিয়ে এতটা নিবিষ্ট থেকেছে- একজন ছড়াকার হিসেবে আমার আর কী পাওয়ার আছে। দুর্দিনের ছড়া কিছু নতুন পাঠকও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আমি আশাবাদী দুর্দিনের ছড়া বাংলা ছড়া সাহিত্যে একটা স্থায়ী আসন করে নিতে পারবে।
আফসার নিজাম: আপনাকে ধন্যবাদ।
মনসুর আজিজ: নিব পরিবারকেও ধন্যবাদ।
মা তো স্বপ্নবোনা পাখি
মনসুর আজিজ
মায়ের গলা ধরে শুই
মা কি মাচার লতা পুঁই।
মায়ের বকা শুনে ভাবি
মা তো ভালোবাসার চাবি।
মায়ের আকাশ অনেক বড়ো
আমি তাতেই জড়োসড়ো।
মা যে সুবাস মাখা ফুল
আমি চিনতে করি ভুল।
মা তো সঙ্গে সারাবেলা
তবু চলছি যে একেলা।
মাকে মান্য করে চলি
তাকে সকল কথা বলি।
মা তো স্বপ্নবোনা পাখি
আমার স্বপ্ন তাতে রাখি।
কোন মন্তব্য নেই