Header Ads

Header ADS

আল্লাহ আমার কণ্ঠে মাটির সুর দিয়েছেন তাই এই দেশের এই মাটির সুর আমার কণ্ঠে বেশী ওঠে আসে_মশিউর রহমান


আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ -আফসার নিজাম
ওয়া আলাইকুম আস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ -মশিউর রহমান

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের কান্না শুনে মা-ফুফুরা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সন্তানের শিল্পীত কণ্ঠের মহিমা। সন্তানটি জন্মগ্রহণ করেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেই ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ। যুদ্ধের দামামার মাঝে একফালি চাঁদ নেমে এসেছিল সেদিন মুস্তাফিজুর রহমান ফরিদের স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগমের কোল জুড়ে। ফরিদপুর জেলা জুড়ে যখন স্টেনগানের শব্দে বাতাস প্রকম্পিত তখন মশিউর রহমানের কান্নার শব্দে নেমে আসে রহমতের ফেরেস্তা, খেলা করে তার সাথে। সেই আনন্দে লালিত স্বপ্নের মাঝে এ জমিনে উদয় হয় লাল সূর্য। স্বাধীন হয় দেশ। স্বাধীন জমিনে মশিউর রহমান কণ্ঠ খুলে দেয় আকাশের পানে। তার কণ্ঠের সুর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম-নগর-শহরে। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় দেশ, এগিয়ে যায় মশিউর রহমানের কণ্ঠের মহিমা। ঝংকৃত হয় সুরের ফোয়ারা। সাংগঠনিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় গানের মাধুর্য।

মশিউর রহমানের সুরের সুরভী ভরে ওঠে আল্লাহর তাসবীতে ও রাসূলের গুণগানে। সেই ধারাবহিকতায় প্রথম এ্যালবামের জন্য টেক করেন ‘কে এলো মদীনায়’। অসম্ভব জনপ্রিয় হলো লোকসংগীত এ্যালবামটি। কি গভীর দরদ দিয়ে ঢেলে দেন সুরের জাদু। মুগ্ধ করে। নিয়ে যায় মদীনার পথে। যারা দিব্যচোখ দিয়ে দেখেনি মদীনা, তাদের অন্তর্চোখ যেনো খুলে যায়। দেখতে পায় মদীনায় হেঁটে যাচ্ছে দ্বীনের নবী। তখন তাঁদের চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্র“ধারা। আনন্দধারা। মশিউর রহমানের জন্য শ্রোতাদের উর্ধমুখি হয় দুটি হাত। তখন সুঁতা ছেঁড়া তসবী দানা ঝরে পড়ার মতো টুপ টাপ ঝরে পড়ে রহমত।

৭১-এর সেই কান্নার ধ্বনি এখন সুরের মূর্ছনা। সেই সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটি এখন অনেক বড়। বিশ্বজোড়া তার নাম। সুরের জাদুতে বাঁধে জাতিকে। সুরের মহিমায় সেজদা করে আল্লাহকে। সুরের মায়ায় স্পর্শ করে দরুদ। তিনি সময় দেন সি.এইচ.পি নামের এক প্রোডাকশন হাউজে। তার আছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কণ্ঠ দিয়ে যেমন মানুষকে মোহিত করে তেমনি নারীকে মোহিত করে পোষাকে। তার ব্যবসা সেই বিখ্যাত কবিতার
বোরখা পরা রমণীর মতো অন্তরালে অনিন্দ্য সুন্দর
মেঘ রোদ চিত্রকল্প অনন্ত রহস্যময়ী
আমি বুঝি না বুঝি না
ভালো লাগে ভালো লাগে- খুব ভালো
প্রাণের গভীরে।
এই তার ব্যবসা। রমণীদের মুগ্ধ করার ফাতেমা হিজাব।

সৃষ্টিশীলতার কাজে আসে পুরস্কার। সেই পুরস্কার হিশেবে প্রস্ফুটিত হয়েছে তার একক এ্যালবাম ‘কে এলো মদীনায়, উদ্দীপন, কিসের ব্যথা বাজে, কামিনী ফুটেছে বনে, পাতা ঝরা মৌসুম, মিনতি আমার রাখো’ ইত্যাদি। সুর দিয়েছেন যেসব এ্যালবামে ‘হিজল বনের পাখি, øেহের ছায়ায়, নিয়ম মতো চল, মধুর সুরে গায় পাখি, উঠলো দুলে প্রাণ, এই নদীর দেশ’। বিখ্যাত ইসলামী সংগীত শিল্পী সাইফুল্লাহ মানছুরের একক এ্যালবাম সন্দীপন, বহতা নদী, মুসাফিরী মন ইত্যাদি।

তিনি দুটি জান্নাতের অধিকারী। প্রথম জান্নাত খাদিজা মুনতাহীনা ও দ্বিতীয় জান্নাত আরিফা মুস্তাহিদা। এই সাক্ষাৎকারটি তিনি আমাকে দিয়েছেন ৩ নভেম্বর ২০০৭ তারিখ সন্ধা ৭টায় মগবাজারস্থ সিএইচপির শোরুমে। মশিউর রহমানের সাথে আলোচনায় ছিলাম আমি আফসার নিজাম।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন? : ওয়ালাইকুম  আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো ভাইয়া। : আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কাছে আসলাম সংগীত সম্পর্কিত কিছু আলাপ আলোচনা করার জন্য। : ওয়েলকাম। আসো আলাপ আলোচনা করি। : তা কবে থেকে সংগীতাঙ্গণে প্রবেশ করলেন। : কবে থেকে তা মনে করতে পারি না তবে জন্মের পর থেকেই। আল্লাহ আমার কণ্ঠে সুর দিয়েছেন যখন বুঝতে শিখেছি তখন মনের ভেতর সংগীতের প্রতি একটা টান অনুভব করতাম। তারপর আল্লাহ প্রদত্ত এই কণ্ঠের চর্চা শুরু করি মা-ফুফু ও বাবার আন্তরিক উৎসাহে। এবং মানুষের অত্যাধিক ভালোবাসার টানে বিভিন্ন প্রোগ্রামে সংগীত পরিবেশনের জন্য অংশগ্রহণ করতাম। এভাবেইতো সংগীতের ভুবনে আমার প্রবেশ : এতো বললেন প্রোগ্রাম পর্যন্ত। কিন্তু কবে প্রথম টেক করলেন? : ১৯৯৩ সালে আমার গানে প্রথম টেক ধারণ করা হয়। ক্যাসেটের নাম ‘কে এলো মদীনায়’। এ্যালবামটি পল্লীগীতির। : পল্লীগীতিই আপনার কণ্ঠে বেশী ওঠে আসে। : আল্লাহ বুঝি আমার কণ্ঠে মাটির সুর দিয়েছেন তাই এই দেশের এই মাটির সুর আমার কণ্ঠে বেশী উঠে আসে। আর শ্রোতারা আমার কণ্ঠে পল্লীগীতিটাই বেশী শুনতে চায়। বিশেষ করে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও বইয়া’ গানটি। : আমাদের জাতীয় কবি বাংলা সংগীতের শ্রেষ্ঠগীতিকার। এখনকার গীতিকারদের সাথে আপনার সম্পর্কটা কেমন? : আমি কাজী নজরুল ইসলামকে না দেখলেও আমার সৌভাগ্য আশির দশকের সুপারস্টার গীতিকার কবি মতিউর রহমান মল্লিক, শিল্পী তোফাজ্জল হোসেন খান, শিল্পী সাইফুল্লাহ মানছুর ভাইদের মতো ইসলামী সংগীত ভুবনে যাঁদের সম্মান আকাশচুম্বি তাঁদের সাথে আমি গান নিয়ে রাত্রি যাপন করতে পেরেছি। তুমিতো দেখেছো প্রত্যাশা প্রাঙ্গণে আমরা রাত্রীকে রাত্রী যাপন করেছি একটি গানের কথা সৃষ্টি করার জন্য। একটি চমৎকার সুর দেয়ার জন্য। : হ্যাঁ : তা ছাড়া আশির দশক থেকে শুরু করে বর্তমান প্রথম দশকের গীতিকারদের সাথে আমার একটা আন্তরিক সু সম্পর্ক আছে। সবার উৎসাহে আমার এই সংগীতাঙ্গণে দীপ্ত পদচারণা। তাঁরা না থাকলে আমার এই পথচলা অনেকটাই রহিত হতো বলে আমি মনে করি। : আচ্ছা নতুন গীতিকারদের আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? : তাদের সাথে আমি একটি ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করি। তারপর তাদের কথামালাগুলো ভালোভাবে ও মনোযোগের সাথে দেখি এবং পরামর্শ থাকলে দেই আর গানটি যদি সুর কারার মতো হয় তাহলে সুর করে প্রোডাকশন হাউজে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। কী আমিতো তোমার গানও সুর করেছি। তাতো ক্যাসেটে প্রকাশ হয়েছে। : আপনি গানের সুর করে থাকেন। কোন্ কোন্ গানে শ্রোতাদের থেকে বেশী ফিটব্যাক পেয়েছেন। : মল্লিক ভাইয়ের ‘যেমন তুমি দিলে জমিন ও প্রশংসা কেবল সবই তোমারি’ আসাদ ভাইয়ের ‘দাও খোদা দাও আমায় আবার ওমর দারাজ দিল’ গোলাম মোহাম্মদ ভাইয়ের ‘হলদে ডানার সেই পাখিটি এখন ডালে ডাকে না’ আবু তাহের বেলাল ভাইয়ের ‘হাজার গানের মাঝে একটি গানও যদি আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়’ প্রচুর ফিটব্যাক পেয়েছি। আল্লাহ যদি তাওফিক দেয় তা হলে এর চেয়েও ভালো সুর উপহার দেবো ইনশাআল্লাহ। : আলোচনা তো হচ্ছে তার আগে কিছু নাস্তাপানি করি কি বলো? : মন্দ হয় না। : অবদুস সালাম একটু ভাই এদিকে আসতো। [কানে কানে ... ... ... ...] : গোলাম মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম যখন আসলো তাঁর সম্পর্কে আপনার কাছে কিছু শুনতে চাই কারণ আপনারা যৌথভাবে অনেকদিন সিএইচপিতে কাজ করেছেন। : হ্যাঁ আমরা দুজন অনেক দিন একসাথে কাজ করেছি। তিনি গানের লিরিক দিতেন আর আমি সেখানে সুর সংযোজন করতাম। তিনি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও গীতিকার এবং আমার পরম বন্ধুও ছিলেন। তাঁর লেখা ‘হলদে ডানার সেই পাখিটি এখন ডালে ডাকে না’ গানটি দুহাজার সালে মীর কাসেম আলী পদকে ভূষিত হয়েছিল। সেই গানটি আমি সুর করি। এছাড়াও প্রায় চারশর উপরে তাঁর গান আমি সুর করেছি। : আচ্ছা তাঁর এতোগুলো গানের আপনি সুর করলেন। এসব গানের মূল বৈশিষ্ট্য কি? : তিনি প্রকৃতিকে নানা রঙে, নানা রূপে সাজিয়ে আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ত্ব প্রকাশ করেছেন এছাড়া তাঁর গানের মধ্যে ঈমানদার ও মুত্তাকি হওয়ার তাগাদা ছিলো। : এবার আমরা সংগীতের সুরের ভুবনে ঘুরে আসি। সুর করার সময় আপনি কিসের প্রতি মনোযোগি হন। : সহজ সরল প্রাণ ছুঁয়ে যায় এমন সুর বেশি পছন্দ করি এবং সেই আলোকেই সুর করার চেষ্টা করি। আর তাল ব্যাবহারের সময় কাহারবা ও ঝুমুর তাল ব্যাবহার করি। : আপনি কি প্রতিটি গানের স্বরলিপি তৈরি করেন। : প্রতিটি গানের গ্রামার অনুসরণ করে সুর করি। : গানের স্বরলিপি তৈরি করেছেন? : আমার প্রতিটি গানই স্বরলিপির আওতায়। আরে নাস্তাতো আইসা পড়ছে চলো নাস্তাটা সারি আর কথা বলি। কী বলো? : হ্যাঁ। : তা হলে শুরু করো। : [খেতে খেতে] আমাদের সংগীতে মিউজিক্যাল ইনস্টুুমেন্ট ব্যবহার কিভাবে দেখছেন? : ইনস্টুমেন্ট ইউজে ধর্মীয়ভাবে আমাদের কোনো বাধা না থাকায় আমাদের উচৎ প্রতিটি গানেই কিছু কিছু সফট মিউজিক ইউজ্ড করা। : আমাদের সংগীতে যদি প্রোপারলি মিউজিক ইউজ্ড হয় তা হলে আপনি ওরিয়েন্টাল মিউজিক না ওয়েষ্টার্ন মিউজিকের ওপর কাজ করবেন। : আমি আমাদের দেশের ইনস্টুুমেন্টগুলোই ইউজ্ড করবো। কারণ এর ভেতর আমার নাড়ির টান অনুভব করি। : এবার আমরা ইউটার্ন নেব। প্রোডাক্শন হাউজগুলো থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন। : আমাদের যতগুলো প্রোডাকশন হাউজ আছে সবগুলো থেকে আমি বেশি বেশি সহযোগিতা পাচ্ছি। কারণ আমি সৃজনশীল কাজ করি, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য নয়। : আপনার সাথে আমি কিন্তু সংগীত নিয়ে আলোচনা করতে আসছি। সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য ধারাবাহিক কোন প্রশ্ন তৈরি করি নাই তাই আমাদের এই আলোচনারও কোনো ধারাবাহিকতা নেই। : হ্যাঁ আমিওতো তোমার সাথে আলোচনা করছি আমাদের সংগীত নিয়ে আমাদের আনন্দ বেদনা নিয়ে। আমাদের জীবন জগৎ নিয়ে। এতে আর ধারাবাহিকত কি? : আমাদের সংগীতাঙ্গণে শিশুদের নিয়ে যত কাজ হয়েছে সেভাবে বড়দের নিয়ে কাজ হয়নি। কেনো বলবেন কি? : শিশুশিল্পীরা বেশী সহযোগিতা পায় কিন্তু বড়শিল্পীরা সমপরিমাণ সহযোগিতা পায় না বলে তারা লাইম লাইটে আসে না। বিশেষ করে কর্মজীবন ও সাংস্কৃতিক মনন এক হয় না বলে। : আপনিও তো শিশুদের নিয়ে বেশী কাজ করছেন। কেনো? : শিশুরা আমাদের জতির ভবিষ্যৎ। পেছনে কি হয়েছে তা আর না ভেবে এখন থেকে যেনো শিশুদের মানুষের মতো মানুষ হিশেবে গড়ে তুলতে পারি সেই জন্যই আমি শিশুদের নিয়ে বেশী বেশী কাজ করি। : এবার একটি অভিযোগ প্রশ্ন করবো। : করো। : বর্তমানের শিল্পীরা কণ্ঠ থেকে গান গায় হৃদয় থেকে গান না বলে অনেকেই অভিযোগ করে। : এর কারণ অন্য জায়গায়। অনেকের কণ্ঠ তেমন ভালো নয় কিন্তু গান গায়। অনেকের কণ্ঠ ভালো কিন্তু কোন রকমে দায়সারা গোছে কাজ করে। আর একটি ভালো গানের জন্য প্রথমে চাই আল্লাহ প্রদত্ত কণ্ঠ। দ্বিতীয়ত গানের প্রতিটি কলির কাজগুলো আয়ত্ব এবং তৃতীয়ত তাল ও লয় মেন্টেইন। তার সাথে হৃদয়ের সবটুকু দরদ ঢেলে দিতে হবে। এই দরদ যে দেবে না সে একদিন তার শ্রোতা হারাবে। এইযে অভিযোগ শিল্পীরা শ্রোতাদের ঠকাচ্ছে এতে শ্রোতাদের থেকে শিল্পীই বেশি প্রতারিত হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। কারণ একদিন শ্রোতারা তাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। : বর্তমানে গানের বাজার কেমন? : বর্তমানে গানের বাজার অনেক বড়। এই বাজারকে লক্ষ করে ইদানিং অনেক প্রোডাকশন হাউজও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অনেকের অভিযোগ আগের মতো মানসম্মত এ্যালবাম প্রোডাকশন হাউজগুলো দিতে পারছে না। : কেনো দিতে পারছে না? : সৃষ্টিশীল লোকের অভাব। আগে মল্লিকভাই, তাফাজ্জল ভাই, কাশেম ভাই, মানছুর ভাই, তারিক মনওয়ার ভাইদের মতো সৃষ্টিশীল লোক নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন। কিন্তু নতুন প্রজন্ম চায় সুনাম। আর সেই সুনামের জন্যই প্রোডাকশনে কিছুটা দুর্বলতা বিরাজ করছে। এটা থাকবে না। মেঘের আড়ালে যেমন সূর্য থাকে তেমনি এই দুর্বলতার আড়ালে মনে হয় সৃষ্টিশীল কাজ অপেক্ষা করছে তার নাগাল হয়তো আমরা অচিরেই পেয়ে যাবো। : কেনো বেছে নিলেন এই পথ? : আসলে যৌগ্যতা মানুষের সব দিকে থাকে না। আমি যখন ফিল করলাম কণ্ঠ আমার আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত, সংগীত আমার প্রতিভা। তখন কণ্ঠকে কাজে লাগাবো কিভাবে চিন্তা করছি; ঠিক সেই সময় সাইফুল্লাহ মানছুর ভাই আমাকে এই পেশায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অফার করলেন। আমিও লুফে নিলাম আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতকে কাজে লাগানোর আশায়। মূলত আল্লাহকে রাজি খুশি করে দুনিয়াতে বেঁচে থাকার জন্য বেছে নিলাম এই পথ। : আপনি কাদেরে উত্তরসুরী বলে মনে করেন। : আমি মূলত সাহাবীদের উত্তরসুরী। তারপরেও আমি আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বলছি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন, কবি ফররুখ আহমদ, কবি মতিউর রহমান মল্লিক,শিল্পী তাফাজ্জল হোসেইন খান, কবি আসাদ বিন হাফিজ, শিল্পী সাইফুল্লাহ মানছুর এছাড়া আমার থেকে যাঁরা একদিনের বড়; আমাকে গান দিয়ে সহযোগিতা করেছে, পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে আমি তাঁদের সবারই উত্তরসুরী। : সংগীত তো একটি গুরুভিত্তিক সৃজন মাধ্যম। আপনার সংগীত গুরু কে? : [হাসি ... ... ...] আমার সংগীত গুরু কবি মতিউর রহমান মল্লিক, শিল্পী তোফাজ্জল হোসেন খান, কবি আসাদ বিন হাফিজ, শিল্পী আবুল কাশেম, শিল্পী সাইফুল্লাহ মানছুর, শিল্পী তারিক মনওয়ার, গীতিকার আবু তাহের বেলাল আর একক ভাবে বলতে গেলে অবশ্যই কবি মতিউর রহমান মল্লিক। তিনিই আমার সংগীত গুরু। আমি সর্বাঙ্গীন তাঁর কল্যাণ কামনা করি, তিনিও আমার কল্যাণ কামনা করেন। : এ পর্যন্ত আপনার কতগুলো এ্যালবাম বের হয়েছে? : এ পর্যন্ত আমার ১৩টি একক এ্যালবাম বের হয়েছে। স্পন্দন থেকে ৫টি আর অন্যান্য প্রোডাকশন হাউজ থেকে ৮টি। আর ১৫০টির মতো এ্যালবামে কণ্ঠ দিয়েছি। : কতগুলো কথায় সুর দিয়েছেন। : ধর তো মা র একহাজার আটশর মতো গানে সুর দিয়েছি। : আপনার প্রতিষ্ঠান তো একটি প্রোডাকশন হাউজ। এখান থেকে কেমন হেল্প পেয়ে থাকেন। : স্বাধীনতা না পেলে সৃজনশীল কাজ করা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমি স্বাধীনতা পাই। আর সেই জন্যই আমি বিভিন্ন শিল্পীর জন্য কথায় সুর করে দিতে পারি। : তা অন্য প্রডাকশন হাউজ থেকে বের হলেও? : হ্যাঁ। : শিল্পীগোষ্ঠীর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন? : আমিওতো একটি শিল্পীগোষ্ঠী থেকে ওঠে আসি। তাই মেকসিমাম শিল্পীগোষ্ঠীর সাথেই আমার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। তারা যখন যেভাবে আমার কাছে সাহায্য চায় আমি তখন সেভাবেই তাদের হেলপ করার চেষ্টা করি। তুমিতো জানো মানুষ সীমাবদ্ধ। আর সেই সীমাদ্ধতাকে ছাড়িয়ে ওঠার নামই বিশালত্ব আমি সবাইকে নিয়ে সেই দিকে ধাবিত হতে চেষ্টা করছি। আমার জন্য দোয়া করবে। : ইনশাআল্লাহ। আপনার জন্য দোয়া রইল। সামনে আপনি কি ধরনের কাজ করতে চান? : আমি শিশুদের দিয়ে একটি মিউজিক এ্যালবাম তৈরি করতে চাই। যে এ্যালবামটি হবে শিশুসংগীতের মাইল ফলক। মানে ধ্র“পদী। : এবার বিশ্ব সংগীতের দিকে যাই? : চলো। : বিশ্ব ইসলামী সংগীতের সাথে বাংলাদেশের সংগীতের তুলনা করলে কেমন হয়। : বাংলাদেশের সৃজনশীল ইসলামী সংগীতের যে কাজ শুরু হয়েছে তার বয়স বেশি নয়। তার পরও আমাদের সংগীত মোটামুটি ভালো কিন্তু তাঁদের মতো আমরা পৃষ্ঠপোষকতা পাই না। পেলে আরো ভালো কাজ হতো। তাছাড়া সংগীত নিয়ে তারা প্রচুর গবেষণা করে আমরা তেমন করি না। : আপনি কি গবেষণাধর্মী কোন কাজ করতে চান? : আমি নতুন কিছু করার চিন্তা করছি। গবেষণা করছি জাতিকে নতুন কিছু দেয়ার জন্য। : কি সেটা? : হলেই দেখতে পাবে। : আশায় থাকলাম। এবার আপনার কাছে জানতে চাই ক্যাট স্টেফেন মুসলমান হয়ে ইউসুফ ইসলাম নাম ধারণ করেন। এরপর তিনি পপধারার সংগীতে যুক্ত না থাকলেও কিছু অসাধারণ ইসলামী গানের কম্পোজিশন করেছেন। কিন্তু ভারতের সুমন চট্টপাধ্যয় মুসলমান হয়ে কবির সুমন নাম ধারণ করেছেন এবং এ আর রহমানও মুসলমান হয়েছেন তাদের কোন ইসলামী সংগীতের কম্পেজিশন করতে দেখা যায় না। এ ব্যাপারে আপনি বা আপনার বন্ধুরা তাদের সাথে কি কোনো যোগাযোগ করছেন। বা ইসলামী সংগীত কম্পোজের জন্য কি তাগাদা প্রদান করেছেন? : কবির সুমন বা এ আর রহমানকে আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি কিন্তু তাদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমার কোন বন্ধুরা যোগাযোগ করছে বলেও জানা নেই। : সামনে তাদের সাথে কি যোগাযোগ করার কোন চেষ্টা চালাবেন? : আমি ব্যাক্তিগতভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে ইসলামী সংগীতকে দ্রুপদী সংগীতের মানে উন্নীত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। : এবার কিছু সাংগঠনিক প্রশ্ন করি? : করো। : সারাদেশের পুরাতন শিল্পীদের নিয়ে যৌথভাবে কি কিছু করার প্লান আছে? : যাঁরা প্রতিভাবান শিল্পী তাঁরা এগিয়ে আসুক আমি তাঁদেরকে ১০০% সহযোগিতা করব। কিন্তু যৌথভাবে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমি ব্যক্তি। ব্যক্তি একা কিছু করতে পারে না। এক্ষেত্রে চাই সাংগঠনিক শক্তি। যাঁরা সংগঠক তাঁরা করতে পারেন। আমি তাঁদেরকে সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ। কথা দিলাম। : সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দুটি। প্রথমটি নিজে সংগীত ভুবনে চিরদিন দৃঢ়তার থাকতে পারি সেই  চেষ্টা করা। দ্বিতীয়টি হলো সন্তানদেরও যেনো সংগীতে নিয়ে আসতে পারি। : আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা সফল হউক সেই দোয়া করি। আজ তা হলে এ পর্যন্ত। : ঠিক আছে ভাইয়া। আবার এসো। : আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ আফেজ। : ওয়ালাইকুম  আসসালাম। ফি আমানিল্লাহ ॥




যে সম্পদের কোনো মূল্য নির্ধারণ হয় না
শেখ আবুল কাশেম মিঠুন



সুরকার ও শিল্পী মশিউর
শিল্পী মশিউর রহমানের গান শুনার আগে তার সুর করা গান প্রথম শুনি শিল্পী শাহাবুদ্দীনের কণ্ঠে। অভূতপূর্ব সুর। গানের কথা এবং তার অর্থের সঙ্গে সুরের যে সমন্বয় এটা দেখে আমার সুরকারের উপরে একটা ধারণা হলো যে, এ সুরকারের অন্তর্লোকের সঙ্গে সংগীতের বসবাস। সেই মুহূর্তে সুরকার মশিউর রহমানকে আমি ভালোবেসে ফেললাম। কারণ আমি গান ভালোবাসি। পরবর্তীতে কোনো একটি অনুষ্ঠানে যখন ঘোষণা হলো ‘এবার গান পরিবেশন করবেন শিল্পী মশিউর রহমান’ তখন শ্রোতা হিশেবে আমি খুব উৎসাহিত হলাম। মশিউর রহমান যখন গান শুরু করলেন তখন তার উদার কণ্ঠ, সুর ক্ষেপনের স্টাইল, মায়াভরা দরদী কণ্ঠের খেলা আমাকে তার প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তিতে আরো কয়েকধাপ এগিয়ে দিলো।

ব্যক্তি মশিউর
কিছুদিন পর তার সাথে পরিচয় হলো। সার্বক্ষণিক হাসি মুখ, বিনয়ী ভঙ্গি, মানুষ মশিউরকে আমার কাছে আরো প্রিয় করে তুলল। আরো পরে দিনাজপুরের একটি অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য রাখার পরে কিছু মাদরাসা শিক্ষিত তরুণ আমার ভাষণের একটি পয়েন্ট নিয়ে আমার কাছে প্রতিবাদ করলো। আমি তাদের কথার জবাব দিচ্ছিলাম। এমন সময় মশিউর এসে আমাকে বললÑ আপনি ভাষণে যা বলেছেন তা অত্যন্ত যুক্তিসংগত বলেছেন। ওদের কথার জবাব দেয়ার কি দরকার।’ এই বলে সে ছাত্রগুলোকে সরিয়ে দিলো। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ওরা আপনার ভাষণের অর্থ বুঝেনি। সেই মুহূর্তে মশিউর আমার অন্তরে স্থান করে নিলো।

ক্রিয়েটিভ মশিউর
আরো পরে মশিউর আমার লেখা এবং সুর করা একটি গান রেকর্ড করলো। এখনো বার বার আমি শুনি। অর্থাৎ মশিউরের গায়কি ঢং তার মায়াভরা দরদী কন্ঠ বারবার অসংখ্যবার শুনলেও বিরক্তি লাগে না বরং বারবার শুধু ভালোলাগা বাড়তেই থাকে। মশিউরের কণ্ঠ যদি ভারত পেতো, ভারতবাসি তাকে নিয়ে অহংকার করতো। আল্লাহর রহমত মশিউর ইসলামী আন্দোলনের এক অনন্য সম্পদ। নাম, প্রশংসা এবং অর্থ সম্পদের মোহ ত্যাগ করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সে ইসলামী আন্দোলনের খেদমত করছে। সে এমন এক সম্পদ যার মূল্য আল্লাহ ছাড়া কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। আল্লাহ তার খেদমত কবুল করুন। আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করুন। আল্লাহ তার রিজিক এবং হায়াত বাড়িয়ে দিন। আমিন ॥





আমাদের সুরের কোকিল
মাসুদ রানা


আমি তখন বগুড়ার স্বনামধন্য শিল্পীগোষ্ঠী সমন্বয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের একজন কিশোর শিল্পী। ঠিক সেই সময় শিল্পী মশিউর রহমান লিটনের পল্লীগীতির একটি ক্যাসেট কিনে বাসায় গিয়ে শুনলাম এবং তাঁর কণ্ঠের অসাধারণ নৈপুন্য আমাকে বিমোহীত করলো দারুণভাবে। শুরু হলো প্রথম ভালো লাগা। যদিও তাঁর নাম আগে শুনেছিলাম কিন্তু তাঁর গান শোনার সৌভাগ্য সেবারই প্রথম। পরবর্তীতে ঢাকায় এলে মশিউর ভাই আমার অভিনয় দেখে আমার খুব প্রশংসা করেছিলেন। তখনই তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় যদিও তিনি তখনও জানতেন না আমি গান লিখি বা গান গাই।

ধীরে ধীরে পরিচয় আরো গাঢ়ো হলো। মেশার সুযোগ হলো তখন জানলাম তাঁর প্রায় কয়েকশ সুর করা গান বের হয়েছে এবং আমার অনেক প্রিয় গানের সুরকার যে তিনি সেটা জেনেছিলাম সেদিনই। ততক্ষণে প্রিয় সুরকার হিশেবে হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সুর কারার ধরনটা আমার খুব ভালোলাগে। তাঁর সুর করা গানের মধ্যে আমার প্রিয় গান অনেক তবে বর্তমানে একটি গানের সুর ‘ঈমানে পথে অবিচল থেকে’ তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। তাঁর সুরের মধ্যে আলাদা দরদ কাজ করে যার কারণে খুব সহজেই মানুষের হৃদয় কেড়ে নিতে সক্ষম।

আমার মনে হয় তিনি গান বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করেন। বহু গীতিকারের গান তিনি সুর করেছেন তবে আবু তাহের বেলাল ভাই ও কবি গোলাম মোহাম্মদ ভাইয়ের গান বেশি সুর দিয়েছেন। কবি গোলাম মোহাম্মদের ‘হলদে ডানার সেই পাখিটি ও তুমি কাঁঠাল পাতার রঙ’ সুরে চিরদিন মনে রাখার মতো। এছাড়াও তিনি শ্রদ্ধাভাজন কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাইয়ের অনেক গানেও সুর দিয়েছেন। তাঁর সুর করা গানের মুখটুকু শুনলেই অন্তরা, সঞ্চারী শুনতে ইচ্ছে করে কারণ তাঁর সুরের একটি গতি আছে। যেটা শুধু তাঁর মতোই।

মশিউর রহমান লিটম ভাইয়ের সাথে বর্তমানে আমার সর্ম্পকটা আরো বেশি নিবিড়। তাঁকে খুব কাছে থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। তাঁর ব্যবহার আমাকে কাছে টানে খুব করে। অসম্ভব গান পাগল এই মানুষটি আমার প্রিয় শিল্পী ও সুরকারদের একজন।

তিনি যে গান পাগল তা বুঝা যাবে তাঁর সাথে সাক্ষৎ হলেই দেখা যায় কাধে ব্যাগের মধ্যে অনকেগুলো গান, হাতে একটি গান নিয়ে গুনগুন করছে।
কি করছেন?
জিজ্ঞাসা করলে বলেন-
নতুন গান সুর করছি।
এই দৃশ্য দেখলেই আমার মনে হয় আল্লাহ শুধুমাত্র সুর করার জন্য তাঁকে প্রেরণ করেছেন। যা তিনি করে চলছেন অবিরাম। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তিনি আমৃত্যু সুস্থ্য থেকে সুর করার মতো এই কঠিক কাজটি করে যেতে পারেন। তাঁর সুর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়–ক এই কামনা করি ॥

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.