Header Ads

Header ADS

মসজিদ ভিত্তিক সমাজের পূনর্জাগরণ_আফসার নিজাম


মসজিদ ভিত্তিক সমাজের পূনর্জাগরণ
আফসার নিজাম


এক নতুন জামানায় এসে আমরা উপনিত হয়েছি। যদিও এটা নতুন না, এটা পুরাতন। তবু বলবো এটা নতুন। নতুন ভাবে হাজির হয়েছে আমাদের কাছে। কারণ যার মধ্যে আমরা অবগাহন করি না সেখানে উপনিত হওয়াই নতুনত্ব। এই নতুনত্ব হলো সেই ১৪শ বছর আগের জামানা। যাকে সোনালি যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। হযরত মুহাম্মদ সা. এবং খোলাফায়ে রাশেদার যুগ। সেই সময়ের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এখনকার মতো ছিলো না। ছিলো মসজিদ ভিত্তিক একটি সমাজ ব্যবস্থা। সেখান থেকেই ঘোষণা করা হতো রাজ ফরমান। যদিও সেটা রাজা বা রাজ্যের বিষয় ছিলো না। তবুও হাল-আমলের মানুষের জন্য রাজ রাজ্যত্ব রাষ্ট্র বললে বোঝা সহজ হয়।

গত কিছুদিন ধরে একটি খবর সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। খবরটি নতুন। এর আগে এমন ঘটনা দেশে হরমেশা ঘটে নাই। মানুষের মধ্যে যে পরিবর্ত হয়। সমাজের মধ্যে যে পরিবর্তন, রাষ্ট্রে মধ্যে যে পরিবর্তন হয় তার উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে এই খবরটি। প্রথমেই আসি যে খবরটি আমাদের চমকে দেয়।
ফটিকছড়ি
'ফটিকছড়িতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের হরতাল-বিরোধী মিছিলে হামলা চালিয়েছে গ্রামবাসী। ‘আওয়ামী লীগের কর্মীরা মসজিদে হামলা করছে’ মাইকে এমন ঘোষণা শুনে হামলায় অংশ নিয়েছে স্থানীয় জনতাও। গতকাল দুপুর পৌণে দুইটার দিকে ভূজপুর থানার কাজীর হাটে এই ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। হামলাকারীরা জ্বালিয়ে দেয় মিছিলে অংশ নেয়া দুই শতাধিক মোটর সাইকেল, ১১টি জিপ ও পিকআপ ভ্যান, তিনটি কার ও একটি নোহা মাইক্রোবাস। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি আসলে সেটিও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।' যদি এই ঘটনা পর্যন্ত শেষ হতো তাহলে আমাদের সেদিকে দৃষ্টিপাত না করলেও চলতো। কিন্তু একি দেখি '
সাতকানিয়ার
সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিমকে শনিবার ভোরে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে জনতার হামলার শিকার হয়েছে সাতকানিয়া থানার পুলিশ। এ সময় জনতা পুলিশের কাছ থেকে দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ রেজাউল করিমের বাড়ি পৌঁছালে আশপাশের মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, পুলিশের পোশাক পরে গ্রামে ডাকাত এসেছে। এরপর লাঠিসোঁটা নিয়ে লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

বাগমারায়
মাইকে ঘোষণা দিয়ে রাজশাহীর বাগমারায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।  বৃহস্পতিবার উপজেলার কাজিহাটা বিলে এ সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে কাজিহাটা মাঠে মোহনপুরের তাঁতীপাড়া ও আতুবাড়ি একাদশের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। এ সময় আতুবাড়ি একাদশের একটি গোল হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আয়োজকেরা উভয় পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা করে দেয়। কিন্তু তাঁতীপাড়ার কিছু সমর্থক এ মীমাংসায় সন্তুষ্ট ছিল না।
সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়
সোমবার ভোরে ফজর নামাজের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার গাছ ফেলে রাস্তায় বেরিকেড দেয় হেফাজত কর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এসময় তিনজন গুলিবিদ্ধ ও প্রায় শতাধিক আহত হয়। এক পর্যায়ে হেফাজতীদের পক্ষ থেকে মসজিদের মাইকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়। তখন মাদানীনগর এলাকা থেকে শত শত মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে পাল্টা আক্রমণে গেলে শুরু হয় সংঘর্ষ। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বৃষ্টির মতো শত শত রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে।
সিরাজগঞ্জে
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ডাকাতির আশঙ্কায় পূর্ব থেকেই তামাই গ্রামের লোকজন নিজেদের এলাকায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থা করে। শনিবার রাতে তামাই বাজারে পাহাড়া দিচ্ছিলেন ওই গ্রামের কয়েকজন। নাগগাঁতী গ্রামের কয়েকজন যুবক বাজার এলাকায় আড্ডা দেওয়ার চেষ্টা করলে পাহারাদাররা বাধা দেয়। এ সময় উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এর জেরে গতকাল রোববার সকালে নাগগাঁতী গ্রামের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে তামাই গ্রামের হাজি চাঁন মোহাম্মদ ও মো. দিদার সরকারের বাড়িতে হামলা চালায়। তামাই গ্রামবাসী পাল্টা হামলা চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা ভাংচুর সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। তবে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষের আহান সম্ভবত এই প্রথম। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক গ্রামের। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’ গ্রপে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। শুক্রবার এক গ্রপের সমর্থকরা অন্য গ্রপের সমর্থকদের মারধর করলে এলাকায় উত্তেজনা বাড়ে। এ প্রেক্ষিতে আক্রান্তদের দলীয়প্রধান রাতে মসজিদের মাইক থেকে নিজের কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষের জন্য তৈরি হতে বলেন। মাইকে ঘোষণা শুনে রাতভর সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয় দু’ গ্রপ। সকালে শুরু হয় মুখোমুখি যুদ্ধ। দেশী অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কেঁপে ওঠে বিল গ্রামটি। ছয় ঘণ্টা ধরে চলা লড়াইয়ে আহত হয় দু’দলের অর্ধ শতাধিক লোক। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নরসিংদী
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদের মাইকের ঘোষণা দিয়ে সোমবার রাতে নরসিংদী শহরের কাউরিয়া পাড়া বাউল আখড়ায় হামলার চেষ্টা চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাউল আখড়ার তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রাণেশ কুমার বাউল ঝন্টু বলেন, বাড়ির সড়ক নিয়ে সম্প্রতি দু’পক্ষের মধ্যে ঝগড়ার ঘটনা ঘটে।
গাজীপুরে আসামি ধরতে গিয়ে গ্রামবাসীর হামলায় পুলিশ সদস্য নিহত
বড়গাঁও গ্রামে সাইদুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করে। এরপর গ্রামবাসী গ্রামে ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিলে চারিদিক থেকে পুলিশকে ঘিরে ফেলে। গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া তিন পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার ভোর ৫টার দিকে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে এই ঘটনা ঘটে‍।
এইসব ঘটনা থেকে একটি কথা স্পষ্ট, তাহলো মসজিদ ভিত্তিক সমাজের পূনর্জাগরণ। মসজিদই হবে ক্ষমতার মূল কেন্দ্রস্থল। এখানে মাইক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাইকে নিছক একটি বস্তু বিচার করলে চলবে না। মাইকের চালিকা শক্তিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আগামীর রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি যে মসজিদ ভিত্তিক একটি সমাজ ব্যাবস্থার আওতায় চালিত হবে তার একটি নমুনা মাত্র। মসজিদ ভিত্তিক এই সমাজ ব্যবস্থা রাষ্ট্র নামের আধুনিক যে ধারণা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই যে সমাজ ব্যবস্থা তার ফিরে আসাকে হয়তো এখন অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখবেন। তা দেখতে পারেন। কিন্তু অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। সমাজে এই নতুন শক্তির উপস্থিতি চোখ বন্ধ করে অস্বীকার করলেও সে আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়বে। তার অস্থিত্ব সে জানান দেবে।
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া উপরের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে আমাদের সেই বিষয়টি প্রতিয়মান হয়। রাষ্ট্র নয়, এখনও সমাজ অনেক শক্তিশালী সংগঠন। এই সমাজ আবার গ্রাম্য সমজিদ ভিত্তিক বিভাজিত। যারা গ্রামের পোলা তারা জানেন একই গ্রামে কয়েকটি গোষ্ঠী থাকে তারা নিজেদের সমজিদ ভিত্তিক সমাজে পরিচিত হয়। শুধু গ্রাম কেনো শহরের মধ্যবৃত্ত জীবনও সেই মসজিদ ভিত্তিক সমাজের উপর নির্ভরশীল। মধ্যবৃত্তরা যখন বাপ মায়ের জন্য দোয়ার আয়োজন করে, কুরবানী দেয়, নামজ পড়ে, বা সামাজিক কোনো কাজে যোগদান করে তখন তার পাশের মসজিদেই যায়। সেখানে সে তার অজান্তেই দায়বদ্ধ হয়ে থাকে। সে তার কাছের মসজিদ ছেড়ে অন্য মসজিদে যায় না। অতএব এখানেও সে মসজিদ ভিত্তিক একটি সমাজের অধিবাসী।
এবার আসি রাষ্ট্র বা সরকার কেনো সমজিদ ও মাইকে ভয় পায়। সরকার তার হানাদার বাহিনী পুলিশ বিজিবি রেব বা দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা গ্রামে আগ্রাসণ চালায়। যারা ক্ষমতার দাপটে গ্রামে প্রবেশ করে তারা গ্রামবাসীর কাছে অন্যজন আগ্রাসী। সে তার অবস্থানে অন্যের মাতাব্বরী পছন্দ করে না। তার জনগণকে অন্যে শোষণ করবে, জুলুম করে তা সহ্য করে না। তাই দেখি সরকারের বাহিনী যে গ্রামেই প্রবেশ করেছে সে গ্রামেই জনসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা রুখে দিয়েছে সরকারী বাহিনীকে। আর এখানে প্রচারের মাধ্যম হিসেবে হাজির হয়েছে মাইক। মাইক হাজির থাকে মসজিদে। মসজিদই হয়ে ওঠেছে এখন হানাদারের বিরুদ্ধে সেনাদুর্গ। মসজিদই হয়ে উঠেছে গ্রামের সংসদভবন। মসজিদই হয়ে উঠেকে স্বাধীনতা সার্বভৌত্ব রক্ষার অন্যতম পিঠস্থান।
অতএব আমাদের আবার ভাবতে হবে। আমাদের নতুন আগত শক্তিকে গ্রহণ করার মনোভাব তৈরি করতে হবে। মসজিদ ভিত্তিক সমাজকে স্বীকার করে শক্তির পূর্নবিন্যাস করতে হবে। মসজিদ ভিত্তিক জীবনকে সম্মানের আসন দিতে হবে। তার থেকে দূরে থাকলে আমরা হয়তো সময়কে ধারণ করতে পারবো না। বা নতুন শক্তির এই লড়ায়ের জায়গায় আমরা হেরে যাবো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.