চলো ঈদগাহে_আফসার নিজাম
চলো ঈদগাহে
আফসার নিজাম
আজ যেনো আর মাগরিবের আজান হয় না। হাইফা, মিখাইল, রুবাইয়া, মেহতা, ওমর জোবায়ের, জাহিদ, রিতাজ, মারজুকা, বান্না, খুশবু, রাদিফুল সবাই অপেক্ষা করছে। কখন সূর্য ডুববে। কখন মাগরিবের আজান হবে। আজ ঈদের চাঁদ দেখা যাবে। গতকাল তারাবি নামাজে কোরান খতম হয়ে গেছে। হিসাব মতো রমজানের রোজা শেষ। ওদের তর সইছে না। সেই যে রমজানের চাঁদ দেখা দিলো তখন থেকে রোজা রাখছে। রোজা রাখা বেশ আনন্দের। আল্লাহ নিজের হাতে এই রোজার পুরস্কার দেবেন। কি দেবেন সেটা বিষয় না। আল্লাহ নিজের হাতে দেবেন। সাবান মাস থেকেই ওরা প্রস্তুতি নিয়েছে রোজার। যদিও আব্বু আম্মু তখন থেকেই প্রস্তুত। ছোটরা প্রস্তুত থাকে না। কিন্তু হাইফা ও তার বন্ধুরা প্রস্তুতি নিয়েছে। ওদের ইশকুলের বন্ধুরাও যোগ দিয়েছে। মসজিদের হুজুর যখন জুমাবারে ওয়াজে বলেছেন, সাবান মাস থেকেই হযরত মোহাম্মদ সা. রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন।
এবার রমজানেও ইশকুল খোলা। মিখাইল ওর বাবার কাছে শুনেছে বাবার ইশকুল নাকি রমজানে এক দেড় মাস ছুটি থাকতো। তারা ঘুরে বেড়াতো। আনন্দ করতো। রমজানের রোজ রাখতো। ঈদ করতো। ঈদের পরেও দীর্ঘ ছুটি কাটাতো। এ কথা শুনে সবাই দুঃখ করে বলে- আমাদের মানুষ করার নামে বাবা মা কি আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন। তারপওর ওরা প্রস্তুত নিলো। এবার রমজানে ভিন্ন কাজ করবে। রমজানের রোজায় ইশকুল যখন খোলা তখন তারা হাসান মুর্তাজা স্যারের কাছে রমজানের বাস্তব কিছু শিখবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। যেই কথা সেই কাজ। সবাই স্যারের কাছে ছুটলো।
সাবান মাস যখন প্রস্তুতির মাস স্যারের কাছে থেকে জেনে নেবে কিভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়।
আসসালামু আলাইকুম স্যার কেমন আছেন!
ওয়ালাইকুর সালাম। কি ব্যাপার আপনারা দল বেধে! কারণটা কি জানতে পারি!
জি স্যার।
সাবান মাস নাকি রমজানের প্রস্তুতির মাস! আমরা কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি স্যার!
খুব সহজ! একেবারেই সহজ!
কি বলেন স্যার!
হ্যাঁ একেবারেই সহজ বিষয়! চলো রমজানের জন্য আমরা কি কি করবো তার একটি পরিকল্পনা করে নেই। প্রথমেই রমজান মাসে যে কাজটি করবো তার একটি তালিকা তৈরি করি।
১. রমজান মাসে রোজ রাখার আগে সাবান মাসেই দু একটি রোজা রেখে ট্রায়াল দেবো। যাতে করে রমজান আমাদের গা সওয়া হয়ে যায়।
২. রমজানে আমাদের ইশকুল রুটিনের সাথে মিল করে বাসায় পড়ার একটি রুটিন করে নেবো যাতে করে রমজানে ইফতার, তারাবি নামাজ সাথে পড়া লেখাও ঠিক মতো চালিয়ে যেতে পারি।
৩. রমজানে আমরা টিফিন খাবো না কিন্তু টিফিনের টাকা জমিয়ে এমন কোনো কাজ করবো যে কাজ করলে সমাজের উপকার হয় আর আল্লাহও খুশি হন।
৪. ইফতার ও সেহরির নিয়তসহ ছোট ছোট দোয়া অর্থসহ মুখস্ত করবো।
৫. রমজানে বাসায় কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় আম্মুকে কাজে সাহায্য করবো।
৬. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবির নামাজ কোনো প্রকারেই মিস করবো না।
৭. আমাদের কাজের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না।
৮. বড়দের আগের চেয়ে বেশি সম্মান দেখাবো।
৯. ইসলামি সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করবো। যেমন ধরো, মসজিদের মাইকে হামদ-না’ত, কবিতা আবৃত্তি করবো। গ্রুপ ওয়াইজ কোরআন হাসিদের গল্প বলার আসর করবো। বক্তৃতা প্রতিযোগিতা করবো। ছোট ছোট সুরাগুলো মুখস্ত বলার প্রতিযোগিতা করবো। ইসলামি লেবাস পরিধান করবো।
১০. আমাদের ইফতার অন্যের সাথে শেয়ার করবো।
১১. রমজানের রোজা রাখা।
১২. নিয়মিত অর্থসহ কোরআন পাঠ করবো।
পরিকল্পনাটি বেশ পছন্দ হয়েছে সবার। সবাই স্যারকে সালাম জানিয়ে বিদায় নিলো। আর চলতে থাকলো রমজানের প্রস্তুতি।
রজানের শুরুতেই সবাই টিফিনের টাকা জমাতে শুরু করে। হাইফাদের ক্লাসে প্রায় ৩০জন। তারা সবাই টিফিনের টাকা স্যারের কাছে জমা রাখে। কেউ কেউ টিফিনের টাকা আগের চেয়েও বেশি দিচ্ছে। স্যার হাজিরা খাতার মতো ছক কেটে দৈনিক দেয় অর্থের হিসাব রাখছে। কিন্তু রমজানের ২০টি যেতেই ইশকুল ছুটি হয়ে যায়। এখন কি করা। আবার সবাই স্যারের কাছে গেলো।
স্যার আমরা এখন কি করবো। আমাদের ইশকুল তো বন্ধ দিয়ে দিয়েছে।
কোনো চিন্তা করো না। এবার আমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি না। আমি তোমাদের সাথেই থাকবো। আর রমজানের কাজগুলো করবো।
আমাদের এখন কাজ কি স্যার।
তোমরা কি পরিকল্পনার সবগুলো কাজ করেছো।
জি স্যার। আমরা আমাদের সাধ্য মতো সবগুলো কাজ করছি।
রুবাইয়া বললো, স্যার আমার ২ দিন জ্বর ছিলো তাই ২টি রোজা ছুটে গেছে।
নো টেনশান। তোমরা ছোট আল্লাহ তোমাদের অধিক ভালোবাসেন। ২টি রোজার কাফ্ফারা দিয়ে দেবে। ঈদের পরে তুমি রোজা ২টি পালন করে নেবে। আল্লাহ সবার প্রতি দয়াশীল। তিনি মানুষদের খুবই ভালোবাসেন। মানুষের জন্য সকল কিছু সহজ করে দিয়েছেন। আর আমাদের রসুল সা. তো বলেছেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে রাড়াবাড়ি করো না’। অতএব তুমি কোনো চিন্তা করো না। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখো। নিয়ত মজবুত করো।
রাদিফুল বললো স্যার আমাদের এখন করনিয় কি?
আমরা আগামী জুমাবার মার্কেটে যাবো।
রিতাজ বললো, স্যার আমাদের পরিবারের সবাই জুমাবার মার্কেটে যাবে। ঐদিন কি আমরা যেতে পারবো।
ঠিক আছে আমরা রবিবার যাবো। কিন্তু একটি কথা তোমরা মনে রাখবে!
কি কথা স্যার?
তুমি তোমার জন্য ঈদের পোষাক কিনেছো। কিন্তু!
কিন্তু কি স্যার!
কিন্তু তোমার বাড়ির পাশেই ছোট বন্ধু। তার বাবা মা খুব অসহায়। তার জন্য তার বাবা নতুন পোষাক কিনতে পারেনি। তুমি কি করবে!
স্যার আমি দুটি পোষাক কিনেছি। বললো মারজুকা। আর বড় মামা আরো একটি দিয়েছে। শুনেছি চাচ্চুও একটি দেবে। আমি নিয়ত করেছি। আমাদের পাশেই ফেলানী নামে একটি মেয়ে থাকে। ও আমার মতোই ছোট। ওকে আমি আমার একটি জামা দিয়ে দেবো।
হ্যাঁ আমি এই কথাটিই বলতে চেয়েছিলাম। অথচ তোমরা আগেই থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছো। তোমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। মনোযোগ দিয়ে শোনো। আমরা একিউসি একাডেমিতে যাবো রবিবার। সেখানে অনেক অসহায় ছেলে মেয়েরা পড়া লেখা করে। একিউসির ম্যাডামরা শুধু বিনা খরচে তাদের পড়া লেখা শিখায় না! ম্যাডামরা অনেক খরচ নিজেরাই বহন করে। সেই একাডেমির ছাত্র ছাত্রীদের যদি আমাদের জমানো টাকায় জামা কিনে দেই, তা হলে কেমন হয়।
সবাই খুশিতে টববগ করে বললো, তাহলে বেশ ভালো হয় স্যার।
রবিবার। সবাই একিউসি একাডেমিতে গেলো। আর তাদের নিয়ে মার্কেটে। টিফিনের টাকার সাথে অনেকেই আব্বু আম্মুর থেকে কিছু অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এসেছে। স্যার খুশিতে কেঁদে দিলো। সবাই কেমেন সচেতন হয়ে ওঠেছে। আর এভাবে সবাই যদি সমাজের জন্য কাজ করে তাহলে বাংলাদেশ একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ হবে। কেউ আর অসহায় থাকবে না। সবাই মার্কেটে গিয়ে লাল নীল সবুজ। যার যেমন পছন্দ জামা জুতা কিনে নিচ্ছে। হাইফা, ওমর, মেহতারা আনন্দে তা উপভোগ করছে। আর দেখছে একিউসি-এর ছাত্র-ছাত্রীদের হাসিমাখা মুখ। আজ ওরা তাদের বন্ধু হয়ে গেছে। স্যার দোকানদারদের কাছে নতুন জামা কেনার কাহিনীগুলো সবিস্তারে বলছে। দোকানদাররাও খুশি হয়ে বলে, আমরা লাভ করবো না। শুধু কেনা দাম রাখবো। আমরাও তো এ কাজটিতে শরিক হতে চাই। আজ যেনো ছাত্র ব্যাবসায়ী একাকার। সবাই আমরা সবার জন্য প্রত্যেকে আমার পরের জন্য। মার্কেট শেষে সবাই বাসায় ফিরে আসলো।
এবার নতুন কিছু করার পালা। সবাই শেষ রোজায় স্যারের বাসায় ইফতার করছে। অপেক্ষায় কখন মাগরিবের আজান হবে। কখন ঈদের চাঁদ দেখবে। স্যার বললো, রাত জেগে আনন্দ না করে যতো দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়তে হবে। যাতে করে ফজরের নামাজ মিস না হয়। আমরা ইফতার করে মাগরিবের নামাজ পড়বো। তারপর যাবো ঈদগাহে। ঈগাহ যদিও প্রস্তুত হয়ে আছে। তবুও আমরা সবাই মিলে একবার দেখে নেবো কোথাও অপরিচ্ছন্ন আছে কি না। নামাজের চট বিছাতে বড়দের সাহায্য করতে হবে কি না। বড়রা ঈদগা নিয়ে বেশি চিন্তুত থাকবে তাই আমরা অন্য কাজ করবো। ঈদগাহে আসার সবগুলো রাস্তা পরিস্কার করবো। যাতে সবাই ঈদগার মতোই রাস্তাগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখে। পরিকল্পনাটি কেমন হলো! সবাই সমস্বরে বললো দারুন! দারুন!
আজান হলো। সবাই ইফতার করে মাগরিবের নামাজ আদায় করলো। আমগাছের ফাঁক দিয়ে ঈদের চাঁদ দেখে সালাম দিলো। আর সাবাই গেয়ে ওঠলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত ঈদের গান-
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।।
তোর সোনাদানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ।।
তুই পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজি মুসলিম হয়েছে শহিদ।।
আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা নিত-উপবাসী
সেই গরিব মিস্কিন দে যা কিছু মফিদ।।
ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরিতে শিরনী তৌহিদের,
তোর দওত করবুল করবেন হযরত, হয় মনে উমিদ।।
তোরে মারল ছুঁড়ে জুড়ে ইঁট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গ’ড়ে প্রেমেরি মসজিদ।।
এবার জাহিদ জাতীয় চেতনার কবি মতিউর রহমান মল্লিকের ঈদের ছড়াটি পুরো মুখস্ত আবৃত্তি করলো।
ঈদের দিন:/খুশির দিন;/সুখের দোলায়/সব রঙিন।/আকাশ পারে/মন-শাহীন/মেললো পাখা/বেহতেরীন;/ইরান-তুরান/জাপান-চীন/সব ছাড়িয়ে/তার উড্ডীন।/ঈদের দিন:/খুশির দিন/সুখের দোলায়/সব রঙিন।/ঈদের দিন/খুশির দিন/উঠলো হেসে/চাঁদ সে ক্ষীণ।/সবাই দ্বিধা-/দ্বন্দ্বহীন/নেই যে- কোথাও/দুখের চিন,/ভালোবাসায়/সব বিলীন;/সুর ছড়ালো/পরণ-বীণ।/ঈদের দিন:/খুশির দিন;/উঠলো হেসে/চাঁদ সে ক্ষীণ।/ঈদের দিন:/খুশির দিন;/আয় আতিয়া,/আয় তুহিন,/আয়রে নবীন/আয় প্রবীণ,/দুই চোখে সব/দে দূরবিন,/তারপরে ভোল/কে কূলীন/কে ছোটজাত/কে মলিন,/ঈদের দিন:/খুশির দিন;/আয় আতিয়া/আয় তুহিন।/ ঈদের দিন:/খুশির দিন;/ধনীর তরে/ক্ষণ-জরীন-/গরীব-দুখির/পাওনা ঋণ/বুঝে দেবার:/এই তো দ্বীন;/এই তো ঈমান/এই একীন,/এই তো জীবন-/স্বাদ-শিরীন।/ঈদের দিন:/খুশির দিন;/গরীব-দুখির/পাওনা ঋণ/ ঈদের দিন:/খুশির দিন;/এক হও সব/মোসলেমীন,/বক্ষ মিলাও/মোহসেনীন,/দাও হাতে হাত/জাহেদীন,/কায়েম করো/খোদার দ্বীন,/ঈদ হবে যে/নিত্য দিন,/নামবে যে সুখ/বিরামহীন।/ হাসবে ধরাÑ/মানুষ-জ্বীন/ঈদের দিন:/খুশির দিন;/হও এক সব/মোসলেমীন।/ঈদের দিন:/খুশির দিন;/সুখের দোলায়/সব রঙিন।
সবাই রাস্তার ময়লা, কাগজ, পরিতেক্ত ভাঙা ইট সরিয়ে দিলো। ভাঙা স্থানে মাটি বালি দিয়ে ভরাট করলো। কেউ কেউ ঝাড়– নিয়ে আসলো। রাস্তা ঝাড় দেয়ার জন্য। বড়রা দেখে খুশিতে বাহবাহ দিচ্ছে। মেহতার আব্বু এক প্যাকেট চকলেট এনে দিলো। সবাই চকলেট খায়। ময়লা পরিস্কার করে। কাজ শেষ হয়। এশার আজান দেয়। সবাই বাসায় চলে যায়। কেউ গোসল করে কেউ অজু করে মসজিদে রওয়ানা দেয়।
শেষরাত। মসজিদ থেকে ভেসে আসলো। আসলাতু খায়রুমমিনাননাওম। ঘুম থেকে নামাজ উত্তম। সবাই ঘুম থেকে ওঠে। ফজরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরে। আম্মু নামাজ পড়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করছে। ফিরনি, পায়েস, সেমাই, পোলাও, গোস্ত কতো কি। আজ এসব দেখার যেনো সময় নেই। কি রাধলো কি রাধলো না। এবার সবাই গোসল সেরে নতুন পোষাক পরে তৈরি হয়ে গেছে। গতকালই শুনেছে আব্বা যাকাত দিয়ে দিয়েছে। ঈদগাহে যাবার আগেই ফিতরা দিয়ে দেবে। ওরা চিন্তা করেছে বাবাকে বলবে আমাদের ফিতরা আমরা দেবো। অতএব তোমরা আমাদের পরিশোধের ফিতারার টাকা আমাদের হাতে দাও। আমরা নিজেরাই ফিতরা আদায় করবো। আব্বু আম্মু তাই করলো। এবার স্যার সবাইকে নিয়ে ঈদের মাঠে চললো। বেশ সুন্দর রাস্তা। গতকাল রাতে যে পরিস্কার করেছে তা আজ রোদের আলোয় চকচক করছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। কাজ সুন্দর হয়েছে। সবাই বলো আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!
ঈদগাহের পাশেই কিছু অসহায় মানুষ থাকে। স্যার সবাইকে নিয়ে সেইখানেই চললো। ফিতারার টাকা সবাই নিজের হাতে ওদের হাতে তুলে দিলো। অসহায় মানুষরা কিছু বললো না। শুধু চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিলো। ছোট ছোট বাচ্চারা আজ তাদের পাশে। অথচ সমাজে কতো বড় বড় মানুষ আছে। এ দৃশ্য দেখে হাইফা মারজুকাদের চোখেও পানি আসলো। তারা সেখানে বেশি সময় থাকতে পারলো না। দ্রুত চলে আসলো। সহ্য করতে পারছিলো না। আজ ঈদের দিনে ওরা ভালো খাবার খেতে পারছে না। নতুন পোষাক পরতে পারছে না।
ঈদের মাঠ আজ ভরপুর। সবাই নতুন জামা পরে আসছে। এমন দিন যদি প্রতিদিন হতো তাহলে কতোই না মজা হতো। ইমাম সাহেব মিমবারে ওঠে দাঁড়ালেন। এমন সময় জাহিদ হুজুরের কাছে গিয়ে দাঁড়লো। সালাম বিনিময় করে কানে কানে কি যেনো বললো। জাহিদ চলে আসার পর হুজুর বক্তৃতা দিলেন। বললেন, রসুলের আদর্শের কথা। ঈদের মর্তবার কথা। প্রতিবেশিকে অভুক্ত রেখে কারোই ঈদ হবে না। আর বললেন, আমাদের ঈদগাহের সাথেই কিছু অসহায় মানুষ আছে। তারা আজ কিছুই রান্না করেনি। নতুন জামা পরেনি। তাদের অভুক্ত রেখে। তাদের অখুশি রেখে আমাদের ঈদ হবে। সবাই বললো না। তাহলে তাদের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সবার আগে। না হয় আল্লাহ আমাদের ঈদকে কবুল নাও করতে পারে। সবাই হাত বাড়িয়ে দিলো। যে যা পারছে তাই দিয়ে দিলো। জাহিদ ও তার বন্ধুরা সেই টাকা কাতারে কাতারে গিয়ে ওঠালো। আর হুজুরের কাছে জমা দিলো। হুজুর বললেন, নামাজের পরে গিয়ে আমরা তাদের হাতে তুলে দেবো। আজ সত্যিই ঈদের দিন। আমরা আমাদের প্রতিবেশির হক আদায় করলাম।
ঈদের নামাজ পরে সবাই কোলাকোলি করে। আজ যেনো কারো সাথে কারো বিবাদ নেই। সবাই সবার বন্ধু। ওপাড়ার তমিজও আজ কোলাকোলি করলো। যদিও রাদিফুলের সাথে তার ঝগড়া ছিলো। আজ সব মিটে গেছে। নামাজ শেষ করে হুজুরের সাথে হাইফা জাহিদসহ সবাই সেই অসহায়দের কাছে গেলো। তাদের হাতে অনেকগুলো টাকা দিলো। সেই টাকা দিয়ে তাদের হয়তো দুই-তিন মাস চলে যাবে। সাথে সুন্দর করে ঈদটাও হয়ে যাবে। অসহায় মানুষেরা বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদলো। এদৃশ্য দেখে হুজুর কাঁদলেন, মুরব্বিরা কাঁদলেন। কান্নার পানিতে খুশির জোয়ার আসলো। যেনো এমন ঈদের জন্য সবাই অপেক্ষা করেছিলো।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ
তোর সোনাদানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
তুই পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজি মুসলিম হয়েছে শহিদ।।
কোন মন্তব্য নেই