Header Ads

Header ADS

মলম বোরাকের খায়েস_আফসার নিজাম


মলম বোরাকের খায়েস
আফসার নিজাম


তারপর সে সোজা হাঁটা শুরু করে। রাস্তার শেষ লেমপোস্টের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। খানিক এদিক ওদিকে তাকায়। পেন্টের চেইন খোলে। বসে যায়। ওয়াসার পানির থেকেও স্প্রিটে বের হয়ে আসে গরম পানি। শীতের শরীরে ছেকা পরে। উড়ে যায় বাস্প। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে বোরাক। নিজের পেচ্ছাব কি সুন্দর। এর আগে সে অনুভব করেনি। পেচ্ছাব এমন সুন্দর হয়। কিভাবে রাস্তার ঢাল বেয়ে নেমে যায়। কাজ শেষ হতেই আবার ওঠে দাঁড়ায়। হাঁটতে থাকে। তাকে রাতের মধ্যেই পৌঁছোতে হবে। অনেক দিন অপেক্ষা করেছে। আর অপেক্ষা করতে পারছে না। আপদটি দূর করতে হবে। এবার চূরান্ত করার পালা।

যখন সে এসেছে তখন থেকে শুরু। বোরাক পড়া লেখার জন্য দ্বীপাঞ্চল ছেড়ে এই শহরে এসেছে। নিজেকে সফল করতে সে সব করবে। যা করা দরকার। সে খোঁজতে থাকে। অবশেষে পেয়ে যায়। সেই মোক্ষম ফল। যার জন্য সে অপেক্ষা করেছে। কলেজের সিনিয়র ভাই। ছাত্র রাজনীতি করে। তার গোলগাল নাদুস নুদুস চেহরা দেখে ভাইয়ের পছন্দ হয়। তাকে রাজনীতির মধ্যে টেনে নেয়। বংশিয় খাসলত পেয়ে যায়। ভিরে যায় রাজনীতিতে। বোরাক হাসি দিয়ে ওঠেÑ যার নীতি নাই তাই রাজনীতি। এটাই তো আমি চেয়েছিলাম। আমার বাবা খচ্চর ছিলো। আমি তার থেকেও বেশি খচ্চর হবো। বাবা শুধু বাটপারি করেছে। আমি করবো তারচেয়েও বেশি। হা হা হা।



বোরাক আজকাল বেশ ব্যাস্ত। রাজনীতির ময়দানে তার বেশ কদর। মারামারিতে বেশ হাত পাকিয়েছে। নিজের হাতে ককটেল বানায়। আবার ফুটিয়ে দেয় শত্রুর গায়। নিমিসেই উড়ে যায় আত্মা। বেশ। দেখে মজা লুটে। মানুষ তাকে ভয় পায়। এলাকায় বেশ নাম ডাক। দলের হয়ে চান্দাবাজি করে না। মানুষ তাকে ভালোবেসে টাকা দিয়ে যায়। ভালোবেসে না ভয়ে দিয়ে যায়। ঐ হলো। তার টাকার দরকার। সে যেভাবেই হোক পাচ্ছেতো।

বড়ভাই ছাত্র রাজনীতি থেতে বিদায় নেয়। বিয়ে করে। দলের মুরব্বির মেয়ে। সবাই আনন্দ করে। বোরাকের আনন্দ হয় না। সচারাচর এসব নারীর দেখা মেলে না। নেকাবে ঢাকা থাকে মুখ। লুকিয়ে থাকা চাঁদের আলো পৌঁছে না পুরুষের মনে। কিন্তু বিয়েবাড়িতে এ সুযোগ মিলে যায়। ভাইয়ের বউকে দেখে। বেশ সুন্দর। কলিজায় দাগা লাগার মতো সুন্দর। শরীরের ভেতর কেমন জ্বর ওঠে। ইচ্ছে করে এখনই উঠিয়ে নিয়ে যাই। বড়ভাইয়ের বউ। বেয়াদবী হবে। কিন্তু মন মানতে চায় না। নতুন বউয়ের চোখ তাকে চৌম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায়। চোখ দুটি যেনো সাগর। সেখানে বোরাক সাঁতার কাটে। ঠোঁট দুটি যেনো জোমজ পাহাড়। একটু মুচকি হাসিতেই বুকের ভেতর থেকে উপত্যকার নিরবতা ভেঙে একঝাক পাখি উড়ে যায়। না সহ্য হয় না। এখনি কিছু করতে হবে। বড়ভাইয়ে দিকে তাকায়। তার চোখে চোখ পরতেই অন্য কিছু হয়। না এখন না। সময় হোক।

বড়ভাই বউ বাড়িতে নেয়ার সপ্তাখঅনেক পরেই দাওয়াত দেয়। নতুন বউয়ের হাতের রান্না। অনুসারিরা সবাই যায়। বোরাক না জাওয়ার ইরাদা করে। না যাবো না। গেলেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তু সাথিরা তাকে জোর করে নিয়ে যায়। ভাবি পর্দার আড়াল থেকে খাবার তদারকী করে। সবার আগ্রহ খাবার নিয়ে। বোরাকের সেদিকে খেয়াল নেই। সে পর্দার আড়ালে অন্য কিছু দেখতে চায়। হঠাৎ পর্দা নরে ওঠে। সবাই খাওয়া নিয়ে খোসগল্প করছে। বড়ভাইও খাওয়ায় মসগুল। একটি হাত বের হয়ে আসে। এই নেন পায়েস। কণ্ঠ যেনো কোকিলকেও হার মানায়। বোরাক হারিয়ে যায়। তার কণ্ঠে একটি গান শোনার জন্য। ‘কতো যে তোমাকে লেগেছে ভালো, সেকথা তুমি যদি জানতে।’ বোরাক দ্রুত ওঠে যায়। ভাবির হাত থেকে পায়েস নেয়। কিযেনো হাতে লাগলো। এটা স্পর্শ না আগুন। আগুনে জ্বলে যায়। অঙ্গার হয়ে যায়। একপলক ভাবির আঙুল দেখে। আঙুল নয় আঙ্গুর। এমন সুন্দর হাত সে জীবনে দেখেনি। একি পরীর হাত। না না এটা হুর গ্লেমান এর হাত। আমি বেহেস্তের হুর চাই না। গ্লেমান চাই না। আমি তাকে চাই। সবার খাওয়া শেষ। বোরাক এখনও শেষ করেনি। সবাই তাড়া দেয়। বোরহাক প্রায় না খেয়েই শেষ করে।

সবাই আলোচনা করে। রাজনৈতিক আলোচনা। সরকার পরিবর্তন হয়েছে। সামলে থাকতে হবে। কিছুদিন আড়ালে থেকে আবার বের হতে হবে। আমিও একটু দূরে থাকতে চাই। কখন কি হয়। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। বড়ভাইয়ের নির্দেশ সবাই মনোযোগ দিয়ে শোনে। বোরাক সুযোগ খোঁজে। সময় পরিবর্তন হয়েছে। এবার নিজেকেও পরিবর্তন করতে হবে। আমার অর্থ পাওয়ার দরকার ছিলো তাতো পাচ্ছি। আর রিক্স নিয়ে কি হবে। সে প্রস্তাব রাখে। ভাই আমি সংস্কৃতি করি। গান কবিতা আমার ভালো লাগে। আমি সেখানে কাজ করতে চাই। বড়ভাই সায় দেয়।

বোরাক বেশ খুশি। পরিবর্তনের হাওয়ায় সে বেঁচে গেছে। এবার সে নিজেকে পরিবর্তন করেছে। সে কবি, সে শিল্পী, সে আবৃত্তিকার, সে সংগঠক। মারামারিতে সে নেই। ভালো ছেলে। সংস্কৃতি করে। বোরাক ভাবছিলো এখানে টাকা নেই। কিন্তু টাকা আছে। ধরতে পারলেই হলো। বাবার কথা মনে হয়। সে যেখানেই গেছে সেখানেই টাকা দেখেছে। বাবার অসিয়তটা তার বেশ মনে পড়ে ‘গুয়ের মধ্যেও যদি পয়সা দেখো, তুলে আনো। পানিতে ধুয়ে ফেলো দেখবা চকচক করতাছে।’ তিনি সত্যি কথাই বলেছে। অনুষ্ঠানে কথা বলে মানুষের থেকে বেশ অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়। পঞ্চাশ হাজার টাকা উঠিয়ে বিশ হাজার টাকা খরচ করে। ত্রিশ হাজার টাকার ভাউটার দিলেই হয়ে যায়। বাহ বাহ দারুন কাজ। কে বলে সংস্কৃতিতে টাকা নাই। আমিতো বেশ টাকা কামাই করছি। খুশিতে বোরাক নাচতে থাকে।

বড়ভাইয়ের নামে বেশ কয়েকটা মামলা হয়েছে। বাড়িতে আসে মাঝে মধ্যে। পালিয়ে পালিয়ে রাজনীতি করে। বোরাককে দায়িত্ব দেয় তার বাড়ির দেখভাল করার জন্য। সংস্কৃতির মানুষ। কেউ কিছু বলবে না। রাজনীতি সে আর করে না। বোরাক তো এই সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সে আজকাল ভাইয়ের পরিবর্তে ভাই। সে বাড়ির কর্তা। ভাবির সাথে পর্দার আড়ালে কথা হয়। তার কলিজায়- পাউরুটি ফুলে ওঠে। কখন দেখবে সেই চোখ। যে চোখে সে প্রতিরাতে সাঁতার কাটে। কখন দেখবে সেই হুরপরী। কিন্তু হয় না। প্রথম প্রথম দূরত্ব মেইটেন করে। আসতে আসতে সহজ হয়ে আসে। নেকাবসহ স্বশরীরে হাজির হয়। কথা হয়। চোখে চোখ রাখে। চোখ কথা হয়। একদিন নেকাব ছাড়াই দেখা হয়। বোরাক অজ্ঞান হয়ে যাবার অবস্থা। ভাবি জিজ্ঞাসা করে শরীর খারাপ। না ভাবি ঠিক আছে। কিন্তু ভাবি বুঝতে পারে। তার কপালে হাত দেয়। সে গলে পরে। না আমার তাকে লাগবেই।

বোরাক এবার আসল চাল চালে। শত্রুপক্ষের কাছে হাত মেলায়। মামলার উপর মামলা হয়। বড়ভাই এবার শহর ছাড়ার অবস্থা। কিন্তু বড়ভাই ছেড়ে দেয়ার পাবলিক নয়। সে একটা খেল দেখাতে চায়। সবাইকে নিয়ে বসে। বোরাকও হাজির হয়। পরিকল্পনা হয়। এবার আমাদের জয় হতেই হবে। হল থেকে তাদের বের করে দখল করতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতি চলতে থাকে। বোরাকও প্রস্তুতি নেয়। তাকে এবার জয়ী হতেই হবে। অনেকদিন সে ধর্য ধরেছে। গোপনে গোপনে আহরণ করেছ মধু। এবার মধুরচাক তার হতে হবে। রাতে অন্ধকারে সে হাঁটতে থাকে। আপদটি দূর করতে হবে। এবার চুরান্ত করার পালা।

সে পৌঁছে যায়। শত্রুপক্ষের ঘাটিতে আনন্দ চলছে। বোরাককে দেখে সবাই বিস্মিত হয়। শয়তান মলমটা আবার আসলো কোথা থেকে। ওকে শেষ করে দে। রমিজ বাধা দেয়। কিরে মলম তুই এইখানে কেন! রমিজ দা একটা কথাছিলো। খুব জরুরী কথা। বল বল কি! বড়ভাই প্রস্তুতি নিতাছে। আপনাদের মঙ্গলবার রাইতে এটাক করবো। রমিজ তারে রুমে নিয়ে যায়। বড়ভাইদের প্রস্তুতির পরিকল্পনা সব শুনে নেয়। দেখরে মলম তোরে কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না। যদি কোনো বাটপারি করছ আগে তোরে খামু। বোরাক বলে মায়ের কসম দাদা একরত্তিও মিথ্যা বলছি না।
না না তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে একজনও ভালা মানুষ নাই। আমিতো তোদের পাশের গ্রামের। আমি সব জানি।
দাদা আমিতো এই জন্যই আপনার কাছে আসছি। আপনি আমার দ্বীপের মানুষ। বড়ভাইতো এই দেশের। ওরে আমি বিশ্বাস করি না। শালারে শেষ করে দেন।

মঙ্গলবার রাতে পরিকল্পনা মাফিক অপারেশন শুরু হয়। বোরাক সঙ্গে আসে। দূর থেকে ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু কিছুতেই রমিজরা পেরে উঠে না। রাতের আঁধার ভেদ করে বড়ভাই জয়ী হয়ে যাচ্ছে। সূর্য উঠছে বড়ভাইয়ে পক্ষে। না না তা হতে পারে না। বড়ভাই বোরাককে কাছে ডাকে। আর একটা রুম পার হলেই। হল মুক্ত। বোরাক তো তা চায় না। বড়ভাই থাকুক আর তারসাথে সূর্য উঠুক। বড়ভাই বেঁচে থাকলে তো তার মৃত্যু। ওকে ছাড়া তো আমার চলবে না। বড়ভাই আবার বাড়িতে নিয়মিত থাকবে। কুঁড়িতেই মরে যাবে প্রেমের সিৎকার করে বেরিয়ে আসে রক্ত। লাল রক্ত। ভিজে যায় বোরাকের শরীর। সূর্য উঠে। সকাল হয়। রমিজ হল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। হল দখল হয়েছে। শুধু বড়ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে হলের কোণায়। পাশে বসে আছে বোরাক।

লাশ নিয়ে মিছিল হয়। বোরাক মিছিল ধরেÑ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই। রমিজের ফাঁসি চাই। শহরের চায়ের দোকানে নিরবতা ভাঙে। খুন নিয়ে আলোচনা হয়। বড়ভাইয়ের যুবতী বউয়ের কি হবে। নতুন বউয়ের হাতের মেহদীর রঙই না মুছতেই। বিধবা হলো মেয়েটি। সবাই দারুন উদ্বিগ্ন। বোরাক এগিয়ে আসে। আমিই দায়িত্ব নেবো। একজন শহীদের স্ত্রীকে আমি বিয়ে করবো। আমি সমাজকে দেখিয়ে দেবো কিভাবে একজন বিধবাকে, একজন শহীদের স্ত্রীকে সম্মান দিতে হয়। আমি শহীদের স্ত্রীকে সম্মান দেবো, আমি বিয়ে করবো।

মানুষের মুখে প্রশংসার স্তুতি। আজ বোরাকের বিয়ে। বাসরঘরে পূর্ণিমার চাঁদ উঠে। বাইরে অমাবস্যা। আঁধার গিলে খায় তাবদ দুনিয়া। দূরের কোনো ঘর থেকে বাচ্চার কান্না ভেসে আসে। রাত গভীর হয়। বেদনার রঙ খসে খসে সুবেহ সাদেক হয়। আলো ফুটতে থাকে। বোরাক বাসর ছেড়ে ওঠে আসে। সূর্য উঠে। বউয়ের দিকে চেয়ে সে হাসে। সূর্য উঠেছে। বিজয়ের সূর্য।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.