ছড়া ঘুম পাড়াতেও পারে, ঘুম ভাঙাতেও পারে_আতিক হেলাল
ছড়া ঘুম পাড়াতেও পারে, ঘুম ভাঙাতেও পারে
আতিক হেলাল
আতিক হেলালের জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৭ জুন। পিতা মরহুম হাফিজুর রহমান সিকদার, মাতা রিজিয়া খাতুন। ৪ ভাই, ২ বোনের মধ্যে ২য়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ যমজ কন্যাসন্তান সৌন্দর্য তাসনিম ও সৌবর্ণ তাসনিম এর জনক , তার স্ত্রী দুলারী রহমান একটি বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
১৯৮৬ সালে আতিক হেলালের লেখালেখি শুরু । মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত হন। তার প্রথম লেখা (ছড়া) ছাপা হয় ১৯৮৬ সালে স্কুল-ম্যাগাজিনে, যেটির সম্পাদক ছিলেন প্রিয় শিক্ষক মিলন সরকার। তিনি আতিক হেলালকে ওই ম্যাগাজিনের ছাত্র-সম্পাদকও মনোনীত করেছিলেন। একই বছরে আতিক হেলালের লেখা ছাপা হয় একটি পত্র-মিতালী-পত্রিকায়, নাম ‘সোহাগ’। এই বছর থেকেই তার লেখা বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাপ্তাহিক ‘ইস্পাত’ ও ‘জাগরণী’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন।
১৯৮৭ সালের ২ জুলাই প্রকাশিত বৃহত্তর কুষ্টিয়ার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র ‘বাংলাদেশ বার্তা’র সূচনালগ্ন থেকে তিনি সেটির সহ-সম্পাদক ও স্টাফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি স্থানীয় দৈনিক ‘আন্দোলনের বাজার’, দৈনিক ‘দেশভূমি’ ও সাপ্তাহিক ‘দেশব্রতী’সহ আরও অনেক পত্রিকায় বার্তা-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ, তিনি কুষ্টিয়ার দৈনিক ‘সূত্রপাত’ পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন এবং তিনি এই পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৩ সালের শেষের দিকে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। কলেজ-জীবনে তিনি ‘অবিরাম’, ‘সূর্যোদয়’, ‘যৌবন’, ‘প্রিয়, ‘নিকোটিন’, ‘তোড়া’, ‘আয়োজন’, ‘প্রজন্ম’সহ অনেকগুলো লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি দীর্ঘদিন সক্রিয় সাংবাদিকতা করেন। ঢাকায় তিনি সাপ্তাহিক বিক্রম, দৈনিক সবুজ দেশ এবং সর্বশেষ ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সহ-সম্পাদক ও স্টাফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশন দফতরের সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন। ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় এক বছর তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার ডেপুটি চীফ রিপোর্টার ছিলেন। বর্তমানে তিনি পাক্ষিক অর্থবীমা পত্রিকার সম্পাদক এবং অনলাইন পত্রিকা গ্লোবটুডেবিডি.কম-এর নির্বাহী সম্পাদক।
আতিক হেলালের এ পর্যন্ত ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বই ‘মশকরা’ (ছড়া) প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমী থেকে এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় ‘কোথায় ভূত’ নামে ছড়ার বই ২০০৬ সালে। অন্যান্য বইগুলো হলো : পলিটিশিয়ান (ছড়া), সৌন্দর্য প্রকাশ-১৯৯৯; আত্মপরিচয়ের সন্ধানে (অনুবাদ), লিখনী পাবলিকেশন্স-১৯৯৯; এই বইটা পাবলিকের (রম্য রচনা), বাড ক¤ প্রিন্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন্স-২০০২; এই বইটা আমাদের (ছড়া), ঝিঙেফুল-২০০২; আপনিও সুখী হতে পারেন (অনুবাদ), জ্ঞান বিতরণী-২০০২; শিশুদের সেরা গল্প (সম্পাদিত), একুশে বাংলা প্রকাশন-২০০৩; মেজর জলিল রচনাবলী (সম্পাদিত), কমল-কুঁড়ি প্রকাশন-২০০৬; ক্ষমতার ছড়া, ইলমা পাবলিকেশন্স ২০১১; হৃদয়ঘটিত (কবিতা), হাতেখড়ি ২০১১; সুখী হবেন কিভাবে (অনুবাদ), সাহিত্য বিকাশ ২০১১; পাখি হব (শিশু-কিশোর ছড়া), লোকালপ্রেস ২০১৩।
আতিক হেলাল বাংলা একাডেমীর জীবন-সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য এবং ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটির সাবেক সদস্য এবং বাংলাদেশ বেতার-টিভির তালিকাভুক্ত গীতিকার। তিনি ২০০৮ সালে সাতক্ষীরার নলতা মিতালী কচিকাঁচার মেলা সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়া, সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার সম্মাননা, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ সম্মাননা, ছড়াকার রকীবুল ইসলাম সম্মাননা ও লিটল ফ্লাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল স্বাধীনতা সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি কুষ্টিয়ার সিরাজুল হক মুসলিম হাই স্কুল থেকে এস এস সি, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচ এস সি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএসএস-রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ও এল এল বি সম্পন্ন করেন।
আফসার নিজাম : সাহিত্যাঙ্গনে খারিজ করার প্রবণতা শক্তিশালী। ছড়াকাররা এই প্রবণতা থেকে দূরে সরে আসতে পারেন কি
আতিক হেলাল : আমার প্রশ্ন, কে কাকে খারিজ করে। সাহিত্যাঙ্গনের কুশীলবরাইতো এই কাজটির সাথে জড়িত। একজন লেখক আর একজন লেখককে নিছক ঈর্ষাপ্রসূত উপদ্রবজ্ঞান করে সাহিত্যাঙ্গনে থেকে খারিজ করে দেয়ার কাজে প্রবৃত্ত হন। কিন্তু কোনো লেখককে স্বাভাবিক গতিতে চলতে বাধা সৃষ্টি না করে, কেনো লেখকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে বা তার স্বাভাবিক চলার পথে পারস্পরিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা বজায় রাখা সত্ত্বেও তিনি খারিজ হয়ে যেতে পারেন। লেখকের সৃষ্টিকর্ম যদি তাকে জাহির না রাখে, তাহলেইতো তিনি খারিজ হয়ে যাবেন। সুতরাং, কাউকে খারিজ করার জন্য অন্য কারো কোনো বিশেষ কসরতের প্রয়োজন দেখি না। আর ছড়াকাররা এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন বলে বিশেষভাবে লক্ষণীয় নয়। ছড়াকাররাতো আর ভিনগ্রহের কোনো বাসিন্দা নন। তবে ছড়াকাররা এক্ষেত্রে একটা সূক্ষ্ম বৈষম্যের শিকার হন বলে আমি মনে করি। আমার মতে, প্রতিটি ছড়াই কিন্তু যুগপৎভাবে একটি কবিতাও বটে। পক্ষান্তরে, প্রতিটি কবিতা কিন্তু ছড়া হতে পারে না। ছড়াই কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে গান হয়ে ওঠে, প্রতিবাদের বাঙময় ভাষা হয়ে ওঠে, মিছিলের ঝাঁঝালো স্লোগান হয়ে ওঠে। বলতে গেলে, ছড়ার প্রয়োজনীয় ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনের কোথায় নেই? অথচ এই ছড়ার নির্মাতাকে স্বীকৃতি দিতে বা মূল্যায়ন করতে তথাকথিত আঁতেল বা সুশীল তাত্ত্বিক লেখক-গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় চরম উণœাসিকতা বা নাক-উঁচু ভাব-ভঙ্গি। অথচ কবি হিসেবে পরিচয় দিতে বা স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী একজন লেখক কিন্তু মাঝে-মধ্যেই একটি-দুটি ছড়া লিখে ছড়ার পাতা বা শিশু-কিশোরদের পাতায় অত্যন্ত কুলীন মর্যাদায় জায়গা পেয়ে যান। পক্ষান্তরে কয়জন ছড়াকারকে পত্রিকার সাহিত্য-পাতা বা কবিতার পাতায় অমন মূল্যায়ন করা হয়? সুতরাং, ছড়াকাররা এই খারিজ করার প্রবণতায় নয়, খারিজ হবার প্রবণতায়ই অধিক আক্রান্ত।
আফসার নিজাম : ‘রোমান্টিকতায় প্রকাশ’ এটা কি ছড়াসাহিত্যে নতুন মাত্রা? আপনার মূল্যায়ন কী
আতিক হেলাল : ‘রোমান্টিকতায় প্রকাশ’ তো ছড়াসাহিত্যে হতেই পারে। বরং আমিতো মনে করি, ছড়াসাহিত্যেই প্রকৃত রোমান্টিকতার প্রকাশ ঘটানো সম্ভব। কেবল নস্টালজিক রোমান্টিসিজম বা বিমর্ষকামী রোমান্টিক ভাব প্রকাশ করা ছড়ার কাজ নয়, ছড়াই পারে ট্র রোমান্টিসিজম-এর বহি:প্রকাশ ঘটাতে। নিছক নারী-সৌন্দর্য বর্ণনা, আরাধ্য নারীর প্রতি কাতরতা প্রকাশ কিংবা স্মৃতিমেদুরতা, বেদনাবিধুরতা ছড়ার প্রতিপাদ্য নয়। রোমান্টিকতা প্রকাশেও ছড়া যথারীতি তীর্যক ও সাহসী উচ্চারণের অব্যর্থ মাধ্যম হতে পারে
আফসার নিজাম : দৈনিক পত্রিকা অনেক ক্ষেত্রে তাদের ফরমায়েশি লেখা তৈরি করতে বলেন। এতে কি ছড়াকারের নিজস্বতা লোপ পায়?
আতিক হেলাল : না, নিজস্বতা লোপ পায় না, তবে ক্ষেত্রবিশেষে নিজস্বতার ব্যত্যয় ঘটে, এটুকু বলা যায়। তবে, এক্ষেত্রে কেবল ছড়াকার কেন, অন্য লেখকরাও ফরমায়েশি লেখা তৈরি করেন। জীবিকার বাধ্যবাধকতায় এমনটি করতে হয় কম-বেশি প্রায় সকল লেখককেই। আর এই ধরনের ফরমায়েশি রচনা ‘চাহিবামাত্র’ সরবরাহ করতে পারার যোগ্যতাটাও বর্তমানে লেখক-পরিচিতি অর্জনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠেছে। তাহলে ছড়াকার বেচারাই বা যাবে কোথায়?
আফসার নিজাম : বর্তমান যে জটিল সময়ে আমরা আবর্তন করছি, সেখানে ছড়া কিরূপ স্বাক্ষর রাখছে?
আতিক হেলাল : ছড়া ভালো ভূমিকাই রাখছে। ছড়া যথারীতি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তবে, ছড়ার প্রচার-প্রসার ও স্বীকৃতি-মূল্যায়ন যথেষ্ট নয় বলে সাহিত্যে ছড়ার ভূমিকা ও অবস্থান সেভাবে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে না। যেমন দেখুন, কবিতায় অনেক প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় পদক-পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে, ছড়ার বেলায় নেই। যৎসামান্য যা আছে তা ‘শিশুসাহিত্য’ নামে, ছড়ার নামে নয়। ছড়া এতোটাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিগৃহীত ও অপাঙতেয় যে, কেউ এই ছড়া নিয়ে খুব একটা এগুতে চান না, কবিতায় চলে যান। কেউবা এগুতে চেয়েও এগুতে পারেন না। ফলে, যা হবার তাই হয় প্রাইমারি স্কুলের মতো ‘ড্রপ-আউট’। অর্থাৎ ঝরে পড়ে। তারপরও ছড়াসাহিত্য যা হচ্ছে, তা অনেক সমৃদ্ধ, বিশেষভবে উল্লেখ করার মতো। ছড়া ক্রমাগত তীর্যক, শানিত এবং ভারী হচ্ছে। ছড়ার আবেদনও ক্রমবর্ধমান। তবে, এতোটুকু দেশে ১৫-১৬ কোটি মানুষ, তাও ক্রমবর্ধমান। ছড়ার প্রকাশমাধ্যম বাড়লেও জনসংখ্যার তুলনায় তো আর সেভাবে বাড়েনি। আগে পাঠ্যপুস্তকই ছিলো প্রধান মাধ্যম। পাঠ্যপুস্তকের প্রতিটি ছড়া ছোট-বড়, সকলের মুখে-মুখে ফিরতো। আর, সংবাদপত্রের এক ‘মুকুলের মাহফিল’ই ছিলো যথেষ্ট। খেলাঘর, কচিকাচার আসরÑএগুলোরও যথেষ্ট আবেদন ছিলো। আর এখন? ধনিকশ্রেণীর প্রতিযোগিতার মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান, পাঠকদের বিভক্তিও সেই হারে ক্রমবর্ধমান। ফলে, অবিভক্ত পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করাটাই দু:সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত থেকে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ প্রমুখ কবি হয়ে যে ছড়া লিখেছেন, তাও পাঠ্যপুস্তকের কল্যাণে জনপ্রিয় হয়েছে এবং পাঠকের মুখে-মুখে ফিরেছে। পক্ষান্তরে, তাদের উত্তর-প্রজন্মের বেশিরভাগ ছড়াকারের পক্ষে তেমনটি সম্ভব হয়নি। তবে, ছড়াকাররা লিখে যাচ্ছেন, মূল্যায়নের দায়িত্ব পাঠকসমাজের।
আফসার নিজাম : কিশোর-কবিতা এবং ছড়ার যে সূক্ষ্ম পার্থক্য, তা স্বীকার করলে ছড়া বা কিশোর কবিতার মধ্যে কি জটিলতা সৃষ্টি করবে?
আতিক হেলাল : না, তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে আমার মনে হয় না। ছড়া কেবল শিশু কিংবা কিশোরদের জন্য লেখা হয় না। সবার জন্যই লেখা হয়। কোনটাকে কী নামে ডাকতে হবে, সেই বিতর্কে ছড়াসাহিত্যকে পিষ্ট করার কাজে আমি শামিল হতে চাই না
আফসার নিজাম : ছড়া কি নন-সেন্স ভার্সন না ছড়া গণসাহিত্য
আতিক হেলাল : না, নন-সেন্স ভার্স থেকে তো ছড়া বেরিয়ে এসেছে। এখন ছড়ার কোয়ানটিটি এবং কোয়ালিটি অনেক বেড়েছে। নন-সেন্স ভার্স যা আছে, তাকে অনায়াসে ছাপিয়ে আমাদের সেন্সেবল ভার্স এগিয়ে যাচ্ছে। আর, ‘ছেলে ভুলানো’ ছড়ারও একটা ছড়ামূল্য রয়েছে, তাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছড়া ঘুম পাড়াতেও পারে, ঘুম ভাঙাতেও পারে। তবে, ঘুম ভাঙানোর কাজটাই ছড়া বেশিমাত্রায় করে আসছে
নিব : বর্ষ-এগার সংখ্যা-পয়ত্রিশ জুন-২০১০
আতিক হেলাল এর ছড়া
মরার বাজেট
বাজেট দিয়ে মন্ত্রী বলেন,
‘রাজস্ব অায় বাড়াও,
ট্যাক্স না দিয়ে যাচ্ছে কারা,
ধরছি আমি, দাাঁড়াও।’
যে পাবলিকে সব দিয়ে যায়,
উপরি আবার ভ্যাটও
তার উপরেই বোলিং চলে,
চালানো হয় ব্যাটও !
শেয়ারবাজার, ব্যাংক-লুটেরা
বাইরে থাকেন ধরার
আমজনতাই খাচ্ছে ধরা,
তারা্ই যোগ্য মরার !
বাবা-ছেলের গল্প
বাবাই প্রথম শিক্ষক আমার
বাবাই আমার গুরু
চক, পেন্সিল, কলম ধরা
বাবার কাছেই শুরু।
হাত ধরে তাঁর হাঁটতে শিখি
জীবন চলার বাঁকে
বন্ধুর-পথে বন্ধুর মতো
কাছে পাই শুধু তাঁকে।
ছেলেকে ‘মানুষ’ বানাবেন বলে
শত কষ্টকে ভুলে
দিন-রাত খেটে মুখে ভাত, হাতে
বই দিয়েছেন তুলে।
সেই ছেলে নাকি ‘শিক্ষিত’ আজ
‘বড়’ হয়ে গেছে কতো !
বাবার কথাকে মনে হয় যেন
উটকো ঝামেলা যতো !
কতো রিচ ফুড, মিষ্টি ও ফল
অঢেল, স্বেচ্ছাচার !
বাবা আজ বুড়ো, খাওয়া দূরে থাক
পথ্য জোটে না তাঁর।
ছেলে বড় হলে সব হবে ভেবে
দিয়েছেন শুধু যিনি
সেই বাবাকেই প্রকৃত অর্থে
আমরা ক’জনে চিনি ?
পিতার কাছে এই পুত্রেরও
বহু অপরাধ জমা
তারপরও এই পিতা পুত্রকে
করবেন জানি ক্ষমা।
জাগলে তুমিও
তোমারও ঘুমন্ত মন
জাগলো
ও দেহে প্রেমের কাঁপন
লাগলো!
এ মাটিতে বিপ্লবও
জাগবে
প্রেমহীন জান্তবও
ভাগবে।
আমি শ্রমিক
আমি মধ্যবিত্ত শ্রমিক
সীমাবদ্ধ মাইনা
বোনাস-ক্রিমেন্ট পাই না
কোরমা-পোলাও খাই না
সাহায্য, তাও চাই না।
আমি মধ্যবিত্ত শ্রমিক
আমার নেই নাম্বার, ক্রমিক।
ভিক্ষার গান গাই না
সব দুয়ারেও যাই না
কেউ তো মামা-ভাই না
জন্মদাতাও দায়ী না
আমি মধ্যবিত্ত শ্রমিক
আমার নেই নাম্বার, ক্রমিক।
আমি পারি না
আমি কিছুই লিখতে পারি না
মিথ্যা শব্দ
মিথ্যা বাক্য
মিথ্যা গল্প
মিথ্যার বেসাতি
অলীক ঐশ্বর্য, কারিনা
আমি কিছুই লিখতে পারি না।
কী কথা লিখি
কার কথা লিখি
মিথ্যা মানুষ
করে খয়রাতি
মিথ্যা পুরুষ, সত্যও নারী না
আমি কিছুই লিখতে পারি না।
কারে ভালোবাসি
কার সনে হাসি
মিথ্যা প্রেম
করে বজ্জাতি
তবু, দেহ ও কড়িতে হারি না
আমি কিছুই লিখতে পারি না।
কোন মন্তব্য নেই