মনো চোখের বয়ান_আফসার নিজাম
মনো চোখের বয়ান
আফসার নিজাম
বাংলা কথাসাহিত্য জীবনের সরল বর্ণনার যে কাহিনী গেঁথে চলছে তার ধারাবাহিকতায় আজবদ্ধি ছোটগল্পগুলো বহন করছে। ছোটগল্প নিয়ে অনেক পরিক্ষা নীরিক্ষা চলেছে। ভাঙা গড়াও হয়েছে অনেক কিন্তু বাংলার পাঠক তা কেনো যেনো গ্রহণ করেনি বা বলতে পাড়ি ছোটগল্প পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কথাগুলো ন’অর্থক হলেও বাস্ততা এই যে আমরা বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পকে উপন্যাসের মতো একটি অনন্য অবস্থান গড়ে দিতে পারিনি। পাঠক প্রিয়তা পায়নি বলে যে ছোটগল্প লেখা হয়নি তা কিন্তু নয়। বাংলা সাহিত্যে কবিতার পর সম্ভবত ছোটগল্পই সৃজন হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। এই অবস্থান ধরে রেখে ছোটগল্প সরল থেকে জটিল আবার জটিল থেকে সরলিকরণ হয়ে রহস্যপূর্ণভাবে চলাচল করেছে। এই চলাচলে গল্প আরো একটি নতুন বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছে। আর তা হলো মনোবিশ্লেষণাত্বক গল্প। এই গল্পগুলো ছোটগল্পের আঙ্গিকের কোনো পরিবর্তন না করেই কাহিনীর সরলী বর্ণনায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এই হয়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে অনেক জনপ্রিয় হয় বাংলাদেশের অনেক কথাসাহিত্যক। তাদের মধ্যে কথাসাহিত্যিক আব্দুল ওহাব মিনার একজন। তার গল্পগুলো সরলি বর্ণনায় থাকে মনোজগতের বিষয় আসয়। কথাসাহিত্যক জহির রায়হানের মতো তার গল্পের নায়ক নায়িকারা তরুন তরুনী। তিনি জহির রায়হানের মতো সামাজিকতার উপরিতলের কোনো কাহিনীকে প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন না করে নির্বাচন করেছেন মানুষের মনের জটিল অনুভূতিগুলোকে। আব্দুল ওহাব মিনার এমনভাবে গল্পগুলোকে উপস্থাপন করে যেনো গল্পটি শেষ পর্যন্ত মনোবিশ্লেষণে উপস্থিত হন। যেভাবে নিয়তিবাদি গল্পগুলো তার নিয়তির দিকে ধাবিত হয়। নিয়তিবাদী গল্পগুলো অতিপুরাতন। সেই গ্রীকের ইউদিপাস থেকে শুরু। কিন্তু মনোবিশ্লেষণ গল্পগুলো আধুনিক সময়ের। আধুনিক জটিল সময়ে এসে মানুষ কিছু মনোবৈকল্যের মুখমুখি হয়। সেই অবস্থানগুলো ব্যাখ্যা হয় এই মনোগল্পগুলোতে। আব্দুল ওহাব মিনার আধুনিকতার সেই জটিল আবর্তনগুলোই তুলে আনেন গল্পগুলোতে।
মনোবৈকল্য যেহেতু তরুন তরুনীর মাঝে বেশি দেখা যায় সেহেতু আব্দুল ওহাব মিনার সেই বয়সকেই বেছে নিয়েছেন তার গল্পগুলো চরিত্র উপস্থাপনে। আবার তিনি যেহেতু একজন মনোচিকিৎসক সেহেতু তার কাছে মনোবৈকল্যগুলো ধরা দেয় অতি সহজেই। মনোবৈকল্যের ব্যাখ্যা ও তার সমাধানও অনায়াসে মিলে যায় তার চিকিৎসক মনোভাবে কাছে। তাই তার গল্পগুলো দেখি মনো অনুভূতির প্রতি স্নেহশীল যেমন ‘বিব্রত বিবেক’ গল্পে দেখি আসমা তার স্বপ্ন ভাইদের বাড়ি থেকে চলে যায় তার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে। কিন্তু সে যখন স্বপ্নদের বাড়ি থেকে রওয়ানা দেয় নিজেদের বাড়ির দিকে তখন স্বপ্ন ভাইয়ের প্রতি একটি ভালোলাগা এসে হাজির হয় আসমার কাছে। কিন্তু যখন দেখি স্বপ্ন তার পিছনে পিছনে ফেরিঘাট পর্যন্ত আসে তখন তার প্রতি এগের সেই ভালো না লাগাটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই যে অনুভূতিকে নিজের নিয়তির মধ্যে রেখে দেয়া এ এক মনোজগতের নয়া খেলা। এই খেলা নিয়ে তার প্রতিটি গল্পই হাজির হয় পাঠকদের মাঝে। পাঠক তার মনোদোলায় দোলতে দোলতে হাজির হয় গল্পের শেষ পর্যন্ত।
আব্দুল ওহাব মিনারে এই মনোজতের গল্পগুলো যে সংকলন বা বই তার নাম দিয়েছেন ‘পেছনের চোখ’ সত্যিই পেছনের চোখ নাকি মনের চোখ। যেকোনো একটি হতেই পারে। দু চোখেই অতিরিক্ত দেখে যা সাধারণ মানুষ দেখে না। সৃজনশীল ব্যক্তিরা তাই দেখিয়ে দেয় কিভাবে পেছনের চোখ কাজ করে মানুষের অজান্তেই। এই বইটিতে মোট তেরটি গল্প সংকলন করেছেন লেখক। সবগুলো গল্পই মনোবিশ্লেষণধর্মী। তরুণরা এই গল্পগুলো পাঠ করলে অতি সহজেই বুঝতে পারবে তাদের সমস্যা মূলস্থানগুলো। আর একটি গাইড লাইনও পেয়ে যাবে সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপনের।
বইটি একুশে গ্রন্থমেলা’১০-এ প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর। বিনিময় রাখা হয়েছে ১৩০/-
কোন মন্তব্য নেই