Header Ads

Header ADS

নীলিমা আক্তার নীলা’র ‘ভেজা ভেজা আকাশ’_আফসার নিজাম

 
মননের মাঝে বেড়ে ওঠা জীবন যখন ব্যথায় কঁকিয়ে হয়ে ওঠে তখন সৃজন হয় কাব্য। ব্যথার পেন্ডুলাম বেয়ে উঠে আসে নতুন জীবনের বয়ান। পরশির কথা যখন পরশির কর্ণ ভেদ করে না। তখন ভেদ করে যায় একজন সৃষ্টার হৃদয়- সে কবি, সমাজ বেদনা ধারন করে এবং একজন জননীর মতো প্রসব বেদনার চরম মুহূর্ত অভারকাম করে প্রসব করে কবিতা। এই বেদনার স্মৃতিকাব্য কাল থেকে কালান্তরে বয়ে নিয়ে যায়।
শৈশব থেকে বয়ে বেড়ানো বেদনাকে সংঘবদ্ধ করে ‘ভেজা ভেজা আকাশ’ বৃষ্টি করেছেন কবি। কবির কবিতার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে বেদনার নীল রঙ। প্রথম থেকেই যে সম্ভাবনার ঘুড়ি ভেজা আকাশে উড়াল দিয়েছে তা মলাট বন্ধ হয়েছে ‘ভেজা ভেজা আকাশ’ নামের কাব্যগ্রন্থে। এই কাব্যগ্রন্থটি বেদনায় নীল হওয়া নীলিমা আক্তার নীলা’র একান্ত সৃজন।
নীলিমা আক্তার নীলা’র কবিতা মৃদু ভাষি, দুঃখভারাক্রান্ত, সরল ও নাতিদীর্ঘ। দুঃখাক্রান্ত ভাষার সরল পথে উপমা উৎপ্রেক্ষার ভেতর দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় তার কবিতার শরীর। অভিজ্ঞতার অম্লান স্মৃতিকে অঙ্কিত করে লিপিবদ্ধ করেন কবিতার হৃদয়। সরল পথে যেতে যেত কখনো হারিয়ে যায় তার কাব্য গতি, কখনো বিস্মৃত হয়ে ওঠে ছন্দের বারান্দা। এইসব দুঃখ কবির ভেতর বাহির একাকার করে পাঠকের দুঃখ হয়ে ওঠে। কবির মতো কেঁদে ওঠে পাঠকের হৃদয়। ভেজা ভেজা আকাশ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে হৃদয় জমিনে।
৮৮ পৃষ্ঠার শরীর নিয়ে নীলিমা আক্তার নীলা’র ‘ভেজা ভেজা আকাশ’ কাব্যগন্থ ৮০টি ছোট ছোট কবিতা বুকে ধারন করে। প্রতিটি কবিতাই নরম কোলম ও সরল জীবনের কথা বয়ান করেছে। শৈশবকাল থেকে যে বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন তার প্রকাশ করেছেন কবি এভাবে-
নিজেকে বাঁচানোর জন্য কি
নাকি অন্য কোনো কারণ-
যে কষ্ট সে ভয়ে
আজো আঁতকে ওঠে মানুষটি। -একটি প্রাণ
কবি’র প্রথম কবিতা কবে লিখেছেন তা হয়তো আমার জানা নেই। তবে তার বইয়ের প্রকশ কবিতাতেই প্রাণের জন্য প্রাণের যে আকুতি তা ফুটে ওঠেছে প্রথম সুর্যদ্বয়ের মতো। তার কবিতার পরতে পরতে যে দুঃখ এটা কবি’র নিজস্ব ভূবন। তিনি লিখেন-
আজ তুমি নেই বাবা
তোমার মেয়েটি কাঁদছে
কল্পনায় তোমায় নিয়ে
হাজার ছবি আঁকছে। – বাবা
কবিতা গ্রন্থটির প্রথম কবিতা থেকে যে দুঃখের যাত্রা শুরু করেছেন তার বিস্তার ঘটেছে বান্দরবান থেকে শহরের অলিতে গলিতে। ব্যাক্তি জীবনের দুঃখকে সর্বজন দুঃখে ছড়িয়ে দেয়ার এইযে স্বাতন্ত্র্য কৌশল কবি আয়ত্ব করেছেন এটাই তার মুন্সিয়ানা। এই মুন্সিয়ানায় খেলেছে তার কবিতার পঙক্তিমালা-
সারা শরীর আগুনে ঝলসানো
বিছানায় ছটফট করতে করতে
মরিয়ম মারা গেলো।
আমি দূর থেকে তাকে দেখছিলাম
আমার চোখে পানি।
কীসের অপরাধে মেয়েটিকে পুড়িয়ে মারা হলো
কী অন্যায় ছিলো তার
যার শাস্তি এতো ভয়াবহ, এতো করুণ।
আমি মনে মনে বললাম
মরিয়ম আমি লজ্জিত
আমি প্রতিবাদ করতে পারিনি। – মরিয়ম
এইসব দুঃখকে জড়ো করে সরলভাবে উপস্থান করে কবি তার কবিত্বরে উচ্চতার কথা বয়ান করেছেন। পরিমিতবোধ আর আবেগপ্রবণতাকে চিরকালীন রূপে চিত্রিত করে রচনা করেছেন কাব্যমালা। এই চিত্ররূপ মানব হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয় আর ইথারে ইথাকে প্রবাহিত হয়ে নতুন বেঞ্জনা সৃষ্টি করে। তার এই প্রয়াসগুলো দেখতে পাই ‘ভেজা ভেজা আকাশ’ গ্রন্থের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়।
করিডোরে দাঁড়িয়ে একাকি আনমনা
কতো দিন চলে যায় জানে না
জীবনটা কি এমনই কষ্টে বোনা
ওলট-পালট করে দেয়। – কিছু কিছু মানুষের স্মৃতি
নীলিমা আক্তার নীলা’র পাহাড়ে থাকে। পাহাড় ও বৃক্ষের বিষণœতা আর মেঘের দুঃখ প্রতিদিন জেগে ওঠেন কবি। কবির ভেতরে তাই খেলা করে দুঃখ। ব্যথায় কোঁকিয়ে ওঠে দুঃখ। আনন্দে কেঁদে ওঠে দুঃখ। এইসব দুঃখের সংসারে নীলা হয়ে ওঠে কবি। দুঃখকে নিয়ে তাই কবিতা লিখেন-
মেঘে ঢাকা আকাশ আঁধার ঢাকা জীবন
তবু যেনো একটু আলো খোঁজে এই মন
শোক পাখিটা কাঁদছে করুন সুরে সুরে
বেদনার ছায়াটা একটুখানি দূরে। – খোঁজে এই মন
পাহাড় আর জমিনের দুঃখ বেদনা নিয়ে নীলিমা আক্তার নীলা’র কাব্যগন্থ ‘ভেজা ভেজা আকাশ’ পাঠকের দুঃখ হয়ে ফিরে আসে। আর ফেরি করে- দুঃখে ক্লান্ত পথিকের কাছে। যারা একদিন সুখের স্বপ্ন ক্রয় করবে বলে পথে নেমেছিলো। অথচ দুঃখ ছাড়া সুখ খুঁজে পায় না। তারই প্রমাণ এই কাব্যগ্রন্থ। আশা করি পাঠক এই দুঃখের মাঝেই তাদের সুখ খুঁজে পাবে।
ভেজা ভেজা আকাশ
নীলিমা আক্তার নীলা
প্রকাশক : শরীফা বুলবুল
বলাকা প্রকাশন, ঢাকা
প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশকাল : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭
মূল্য :  ১৮০

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.